We Want Justice slogan at Tridhara Sammilani: দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় পুজো ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপে এবার উঠল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। বুধবার সন্ধ্যায় ষষ্ঠীর দিন এই ঘটনা ঘটে। পুজোমণ্ডপে ঢুকে বেশ কয়েকজন যুবক-যুবতী হাতে পোস্টার নিয়ে বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এর পরেই পুলিশ তাদের দ্রুত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। শুরু হয় বচসা। শেষে ২০ জনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে।
ত্রিধারা সম্মিলনী দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় পুজো। এই পুজোর উদ্যোক্তা তৃণমূল বিধায়ক ও মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। বুধবার সন্ধ্যায় ষষ্ঠীর দিন হঠাৎ কয়েকজন যুবক-যুবতী পুজোমণ্ডপে ঢুকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাদের হাতে ছিল পোস্টার।
এর আগে ম্যাডক্স স্কোয়ারের পুজোমণ্ডপেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও বিচারের দাবিতে উঠেছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান।
এদিকে পুজোর মধ্যেই ১০ দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ৩ দিনের মাথায় আলোচনায় বসতে চেয়ে তাদের মেল পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বুধবার স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি অনশন প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। কিন্তু রাজ্যপালের প্রস্তাবে রাজি হননি জুনিয়র ডাক্তাররা।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাত দখল: মোবাইল রিংটোনে ‘জাস্টিস’ দাবি
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনা নিয়ে গোটা রাজ্যজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। নিরাপত্তার দাবি উঠতে শুরু করেছে সর্বত্র। জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ রোজ রাজপথে মিছিল, ধরনা করছেন।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা ঘটার একমাস পেরিয়ে গিয়েছে। তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। তবে বিচার এখনও হয়নি। তাই এবার স্লোগান পাল্টে গেল। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এর পরিবর্তে এখন রাজপথে স্লোগান উঠছে ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস।
নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, “আমরা আর ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলব না। বিচার চাই নয়, বিচার করতে হবে এটাই আমাদের দাবি। তাই বলুন, ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’। যতদিন না আমার মেয়ে বিচার পাচ্ছে আপনারা রাস্তা ছাড়বেন না।”
নিহত চিকিৎসকের বাবা অভিযোগ করেন, “খুনের ঘটনার তথ্য ও প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে। উই ডিমান্ড জাস্টিস। একটাই দাবি আমাদের, বিচার চাই। এবার সুপ্রিম কোর্টের পরীক্ষা। আমরা আশাহত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের আশা পূরণ করতে পারে সর্বোচ্চ আদালতই।”
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করার দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার মাংলই গ্রামে পুজোর আমন্ত্রণপত্রেও প্রতিবাদের ভাষা দেখা গেছে। ১৮ তম বর্ষে শারদীয় শক্তি আরাধনা পুজো কমিটির পুজোর থিম, চিত্রে ও কাব্যে ‘অভয়ার পথে’। প্রতিমা সাবেকী। একাধিক মডেলের মাধ্যমে মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আরজি কর মেডিক্যালের ঘটনাবলী।
পাঁশকুড়ার শারদীয়া শক্তি আরাধনা কমিটির উদ্যোক্তা দেবব্রত কবি বলেন, “এখানে আমরা মূলত আরজি করের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। যেগুলো আমন্ত্রণপত্রে প্রথমে একটি চিত্রে এবং সেখানে লিখে রেখেছি, ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’। প্রায় দেড় শতাধিক চিত্রের মাধ্যমে সমসাময়িক যে আরজি করের ঘটনা এবং বন্যা পরিস্থিতিও তুলে ধরেছি।”
“মাটি নয়, বিচার চাই”: সোনাগাছির যৌনকর্মীদের অভিনব প্রতিবাদ আরজি কর কাণ্ডে
উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুরে মৃৎশিল্পীদের পাড়ায়ও শোনা গেছে ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগান। প্রতিমা আনতে গিয়ে ন্যায়বিচার চেয়ে সরব হয়েছেন নিউটাউনের সর্দারপাড়া চক পাচুরিয়া ক্লাবের সদস্যরা।
সর্দারপাড়া চক পাচুরিয়ার সদস্য ভরত কাহার বলেন, “আরজি করের যে অভয়া নির্যাতিতা হয়ে খুন হয়েছেন, তাঁর বিচারের দাবিতে এবং যারা মূল দোষী তারা খুব শীঘ্র শাস্তি পাক, এই জন্যই আমাদের এই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান।”
এ বছর প্রায় ২০টি প্রতিমা গড়েছেন দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুরের মৃৎশিল্পী সুধীন পাল। তিনিও চান, আরজি কর কাণ্ডে বিচারের দাবি যেন হারিয়ে না যায়। প্রতিমা শিল্পী সুধীন পাল বলেন, “শারদোৎসব বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। এই শ্রেষ্ঠ উৎসবে আমাদের মনে খুব কষ্ট। অভয়াকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। সমস্ত মানুষ চায় এর একটা বিচার হোক।”
এদিকে এবার অঞ্জন মণ্ডল-সহ বেশ কয়েকজন জুনিয়র চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন সন্দীপ ঘনিষ্ঠ তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ওই জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, অভিযুক্ত তিন ডাক্তার ভয় দেখাচ্ছিলেন তাঁদের। এই মর্মেই বউবাজার থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
মানুষের কথা ভেবেই উৎসবে ফেরা, আবার মানুষের জন্যই প্রতিবাদ। বাংলায় এবার অন্যরকম পুজো দেখা যাচ্ছে। শারদোৎসবের আনন্দের মধ্যেও বিচারের দাবিতে সরব হচ্ছেন মানুষ। পুজোমণ্ডপ থেকে রাজপথ, সর্বত্র শোনা যাচ্ছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এবং ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’ স্লোগান।