West Bengal Cpim Present Condition: বঙ্গ সিপিএম (সিপিআইএম) একসময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে প্রধান শক্তি ছিল। কিন্তু গত এক দশকে তাদের জনপ্রিয়তা এবং ভোটের ফলাফল ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের ফলাফল ছিল হতাশাজনক; তারা একটিও আসন জিততে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, বঙ্গ সিপিএমের শীতঘুম ভাঙবে কবে? তারা কি আবার ভোটের ময়দানে ফিরে আসতে পারবে?
সিপিএমের বর্তমান অবস্থা খুবই সংকটজনক। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তারা একটিও আসন জিততে পারেনি। দলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়া এবং নতুন মুখের অভাব তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সিপিএমের তরুণ প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য এবং দীপ্সিতা ধরদের জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও, তাদের সামনে আনা হয়নি, যা দলের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে।
সিপিএমের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সিপিএমের পুনরুত্থান সম্ভব, তবে তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো হল:
সিপিএমের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। দলের বর্তমান নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে কোনও পরিবর্তন হয়নি, যা দলের কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। নতুন এবং তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন, যারা দলের নতুন দিশা দেখাতে পারে।
সিপিএমের তরুণ প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য এবং দীপ্সিতা ধরদের মতো জনপ্রিয় মুখদের সামনে আনা প্রয়োজন। তাদের প্রচারে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ তরুণ প্রার্থীদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি থাকে।
সিপিএমকে মাঠ পর্যায়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে। মানুষের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। সিপিএমের কর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়তা করতে হবে।
সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার সিপিএমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান যুগে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। সিপিএমকে সামাজিক মাধ্যমে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং তাদের প্রচার কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
সিপিএমের পুনরুত্থানের উদাহরণ হিসেবে ধূপগুড়ি মডেলকে উল্লেখ করা যেতে পারে। ধূপগুড়িতে সিপিএমের পুনরুত্থান একটি সফল উদাহরণ। সেখানে সিপিএমের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন এবং মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়তা করেছেন। এর ফলে সিপিএম সেখানে ভালো ফলাফল করতে পেরেছে।
সিপিএমের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের বর্তমান নেতৃত্বের উপর। যদি তারা নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে পারে এবং তরুণ প্রার্থীদের সামনে আনতে পারে, তবে সিপিএমের পুনরুত্থান সম্ভব। তবে এর জন্য তাদের মাঠ পর্যায়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে এবং মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়তা করতে হবে।
সিপিএমকে তার মূল আদর্শ ও নীতির প্রতি অবিচল থাকতে হবে। একই সঙ্গে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের মতো বৃহত্তর জোটে অংশগ্রহণ করলেও নিজস্ব অবস্থান ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে
দলীয় সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে হবে। কর্মী সংখ্যা বাড়ানো এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে জনসমর্থন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এই পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে পারে।
সৃজন ভট্টাচার্য সিপিএমের অন্যতম উদীয়মান নেতা। তিনি জাদবপুর লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সৃজন ভট্টাচার্য সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর নেতা এবং তার প্রচারে যুব সমাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
দীপ্সিতা ধর সিপিএমের আরেকজন তরুণ ও উদ্যমী নেতা। তিনি সেরামপুর লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দীপ্সিতা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে পিএইচডি করছেন এবং এসএফআই-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বেকারত্ব এবং শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার।
প্রতীকুর রহমান ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি এসএফআই-এর নেতা এবং যুব সমাজের সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করছেন। তার প্রচারে যুব সমাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সায়ন ব্যানার্জি তমলুক লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি একজন আইনজীবী এবং তার প্রচারে সৎ রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
মিনাক্ষী মুখার্জি ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক এবং নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি যুব সমাজের সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করছেন এবং তার প্রচারে যুব সমাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বঙ্গ সিপিএমের শীতঘুম ভাঙবে কবে, তা নির্ভর করছে তাদের বর্তমান নেতৃত্বের উপর। নেতৃত্বে পরিবর্তন, তরুণ প্রার্থীদের সামনে আনা, মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এবং সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার সিপিএমের পুনরুত্থানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যদি তারা এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারে, তবে সিপিএম আবার ভোটের ময়দানে ফিরে আসতে পারে এবং লাল পতাকা আবার উড়তে পারে।
মন্তব্য করুন