West Bengal fake passport verification app: পশ্চিমবঙ্গে জাল পাসপোর্টের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রোধ করতে রাজ্য সরকার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। একটি নতুন অ্যাপ্লিকেশন চালু করার পাশাপাশি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করা হচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ একটি বড় জাল পাসপোর্ট চক্র ফাঁস করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নতুন অ্যাপ্লিকেশনের বৈশিষ্ট্য
পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি নতুন অ্যাপ্লিকেশন চালু করতে চলেছে যা পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরও নিরাপদ ও কার্যকর করবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে:
- পুলিশ অফিসাররা আবেদনকারীর তথ্য সহজেই যাচাই করতে পারবেন
- আবেদনকারীর ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা হবে
- জাল দস্তাবেজ সনাক্ত করা সহজ হবে
- রিয়েল-টাইম আপডেট পাওয়া যাবে
ভারতীয় পাসপোর্ট: আবেদন প্রক্রিয়া, খরচ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র
কঠোর হচ্ছে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া
পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করা হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী:
- স্থানীয় পুলিশ অফিসারদের অবশ্যই আবেদনকারীর বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে তথ্য যাচাই করতে হবে
- ভাড়া বাড়ির ক্ষেত্রে, স্থায়ী ঠিকানাও যাচাই করতে হবে
- আবেদনকারীর পূর্ণ পটভূমি যাচাই করা হবে
- জেলা গোয়েন্দা শাখা (DIB) ও বরিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সরাসরি সম্পৃক্ত করা হবে
পরিবর্তনের কারণ
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
মূল কারণ | সম্প্রতি জাল পাসপোর্ট চক্র ফাঁস |
ধৃত ব্যক্তি | ৭ জন |
জাল পাসপোর্টের সংখ্যা | কমপক্ষে ৭৩টি |
মূল্য | ২-৫ লক্ষ টাকা |
প্রধান গ্রাহক | বাংলাদেশি নাগরিক |
নতুন নির্দেশিকা
কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, পুলিশ অফিসারদের জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে:
- আবেদনকারীকে থানায় ডেকে যাচাই করা যাবে না
- বাড়িতে গিয়েই সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে
- প্রতিবেশী রাজ্যের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
- আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক মামলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে
রাজ্য পুলিশের প্রস্তাব
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মহাপরিদর্শক (DGP) রাজীব কুমার বিদেশ মন্ত্রকের কাছে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ও বিতরণ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবে বলা হয়েছে:
- জেলা পুলিশ সুপারদের নেতৃত্বে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হবে
- স্থানীয় থানা, জেলা গোয়েন্দা শাখা ও বরিষ্ঠ অফিসারদের সম্পৃক্ত করতে হবে
- সফটওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে
- ডাকঘরের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে
বর্তমান পরিস্থিতি
২০১৮ সালে বিদেশ মন্ত্রক একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল, যাতে পুলিশের সম্পৃক্ততা কমানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই নীতি পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। DGP রাজীব কুমার বলেছেন:”বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা মনে করি, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকা বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।”
জাল পাসপোর্ট চক্রের বিস্তার
সম্প্রতি ধৃত জাল পাসপোর্ট চক্রের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য:
- শুধুমাত্র কলকাতায় ৩,০০০ এরও বেশি জাল পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে
- অন্যান্য জেলায়ও একই পদ্ধতিতে বহু জাল পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে
- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় (আগস্ট-নভেম্বর ২০২৪) এই ব্যবসা শীর্ষে পৌঁছেছিল
- একই আধার নম্বর ব্যবহার করে নাম ও ছবি পরিবর্তন করে একাধিক জাল পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে
অন্যান্য রাজ্যের পরিস্থিতি
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশেই জাল পাসপোর্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিল্লি পুলিশের আইজিআই এয়ারপোর্ট ইউনিট ২০২৪ সালে একাধিক আন্তর্জাতিক জাল পাসপোর্ট চক্র ভেঙেছে:
- মোট ১৯ জন বিদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার
- ২৩ জন এজেন্ট গ্রেপ্তার
- ধৃতদের মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশি নাগরিক
- অন্যরা মায়ানমার, নেপাল ও আফগানিস্তান থেকে
- দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে এজেন্টরা ধরা পড়েছেন
সরকারের পদক্ষেপ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে:
- নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে
- পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে
- পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে
- জাল দস্তাবেজ সনাক্তকরণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে
- আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো হচ্ছে
জাল পাসপোর্টের সমস্যা মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। নতুন অ্যাপ্লিকেশন ও কঠোর ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চালু হলে জাল পাসপোর্ট তৈরির প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। নাগরিকদের সচেতনতাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।