দুর্গাপূজার আগেই সরকারি কর্মচারীদের হাতে মিলবে বোনাস ও অগ্রিম! নবান্নের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর এল নবান্ন থেকে। ১৮ মার্চ ২০২৫-এ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দুর্গাপূজা এবং ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অ্যাড-হক বোনাস, উৎসব ভাতা এবং সুদমুক্ত অগ্রিম দেওয়া হবে। মাসিক বেতন…

Srijita Chattopadhay

 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর এল নবান্ন থেকে। ১৮ মার্চ ২০২৫-এ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দুর্গাপূজা এবং ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অ্যাড-হক বোনাস, উৎসব ভাতা এবং সুদমুক্ত অগ্রিম দেওয়া হবে। মাসিক বেতন ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্তের কর্মচারীরা ৬ হাজার ৮০০ টাকা বোনাস পাবেন, যখন পেনশনারদের জন্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা উৎসব ভাতা নির্ধারিত। এছাড়া, নির্দিষ্ট বেতনের কর্মচারীরা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অগ্রিম নিতে পারবেন, যা উৎসবের আগেই হাতে পৌঁছে যাবে। এই সিদ্ধান্ত কলকাতাসহ রাজ্যের লক্ষাধিক কর্মচারী এবং পেনশনভোগীকে উপকৃত করবে।

ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, অ্যাড-হক বোনাস পাবেন যাঁরা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কমপক্ষে ছয় মাস কাজ করেছেন এবং মার্চ ২০২৫-এর শেষে বেতন ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। এই বোনাস এককালীন দেওয়া হবে এবং এতে কোনও কর কাটা যাবে না। মুসলিম কর্মচারীরা ঈদের আগে এই সুবিধা পাবেন, যা ২০২৫-এ মার্চ মাসের শেষে বা এপ্রিলের শুরুতে হতে পারে। অন্য কর্মচারীরা দুর্গাপূজার আগে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর ১৫ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যে এই টাকা পাবেন। এই ব্যবস্থা উৎসবের খরচ মেটাতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

পেনশনভোগীদের কথা ভেবে সরকার উৎসব ভাতা বাড়িয়েছে। যাঁদের মাসিক পেনশন ৩৮ হাজার টাকার কম, তাঁরা ৩ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন, যা গত বছরের ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়েছে। এই ভাতা পাবেন যাঁরা ৩১ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে অবসর নিয়েছেন বা নিতে চলেছেন। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই সুবিধা রাজ্যের আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার পেনশনারদেরও দেওয়া হবে। এই টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হবে, যাতে কোনও দেরি না হয়। এই পদক্ষেপ উৎসবের সময় অবসরপ্রাপ্তদের আর্থিক চাপ কমাবে।

সুদমুক্ত অগ্রিমের সুবিধা নিতে পারবেন যাঁদের বেতন মার্চ ২০২৫-এ ৪৪ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। এই অগ্রিম সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা হবে, যা ১০টি মাসিক কিস্তিতে ফেরত দিতে হবে। সরকার এই অর্থ উৎসবের খরচের জন্য আগাম দেবে, যাতে কর্মচারীরা সহজে কেনাকাটা করতে পারেন। এই সুবিধা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে, কারণ আগে সীমা কম ছিল। যাঁরা ৩১ মার্চ ২০২৫-এর পরে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাও অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে আবেদন করতে পারবেন। এই ব্যবস্থা রাজ্যের আর্থিক বিভাগ সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে।

পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর উৎসবের আগে এই ধরনের সুবিধা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। গত বছর, ২০২৪-এ, বোনাস ছিল ৬ হাজার টাকা এবং অগ্রিম ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবারের বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক চাপ বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, এই সুবিধা রাজ্যের বাজেট থেকে বরাদ্দ হয়, যা কর্মচারীদের মনোবল বাড়ায়। অতীতে, কোভিড মহামারীর সময়ও এই বোনাস দেওয়া হয়েছিল, যা কর্মচারীদের উৎসাহিত করেছিল। এই প্রথা ২০১০-এর দশক থেকে চলে আসছে, যা রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কর্মচারী সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁরা বলছেন, এই টাকা উৎসবের খরচ মেটাতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির সময়। সরকার জানিয়েছে, এই সুবিধা শুধু রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য নয়, বরং আধা-সরকারি সংস্থা যেমন পৌরসভা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরাও পাবেন। যদি কোনও সমস্যা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ রাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কর্মচারীরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলছেন, এই আগাম টাকা পরিবারের সঙ্গে উৎসব পালন করতে সহায়ক হবে। সরকারের লক্ষ্য, উৎসবের মরশুমে বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়ানো, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও উপকার করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের সুবিধা আরও বাড়ানোর দাবি উঠেছে। সামগ্রিকভাবে, এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।