West Bengal Weather Forecast 31 August 2024: ৩১ আগস্ট ২০২৪, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে, যেখানে দক্ষিণবঙ্গের কিছু অংশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষ বুলেটিন অনুসারে, বাংলাদেশের উত্তরাংশে একটি নিম্নচাপ অবস্থান করছে, যা পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে, বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টায় ৭-২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। আলিপুরদুয়ার জেলার কিছু স্থানে ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আবহাওয়ার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় তাপপ্রবাহের অবস্থা বিরাজ করতে পারে। এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠতে পারে। তবে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মেঘলা আকাশের সাথে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকতে পারে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ১-২ ডিগ্রি বেশি।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর ঝোড়ো আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। এখানে ৩৫-৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে হাওয়া বইতে পারে, যা মাঝে মাঝে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগ অতিক্রম করতে পারে। এই পরিস্থিতি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের একজন বরিষ্ঠ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আগামী কয়েকদিন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনে আপডেট দেওয়া হবে।”
জেলা | সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (সেন্টিমিটার) |
---|---|
আলিপুরদুয়ার | ১৫-২৫ |
জলপাইগুড়ি | ১০-২০ |
কোচবিহার | ১০-১৫ |
দার্জিলিং | ৮-১২ |
কালিম্পং | ৭-১০ |
কলকাতা | ২-৫ |
হাওড়া | ৩-৬ |
হুগলি | ২-৪ |
নদীয়া | ১-৩ |
১. কৃষি: ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে চা বাগানগুলিতে প্রভাব পড়তে পারে।
২. যাতায়াত: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাটে জলজমাট হতে পারে, যা যানজটের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।
৩. জলাবদ্ধতা: নিম্নাঞ্চলগুলিতে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। শহরাঞ্চলে ড্রেনেজ সিস্টেমের উপর চাপ বাড়তে পারে।
৪. বিদ্যুৎ সরবরাহ: ঝড়ো আবহাওয়ার কারণে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
৫. মৎস্য চাষ: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদী ও পুকুরের জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে, যা মৎস্য চাষীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৬. পর্যটন: দার্জিলিং ও কালিম্পং-এর মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ভ্রমণের পরিকল্পনা প্রভাবিত হতে পারে।
১. অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে।
২. জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
৩. আবহাওয়া সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যের জন্য মৌসম/দামিনী অ্যাপ ব্যবহার করুন।
৪. নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীরা সতর্ক থাকুন এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরে যান।
৫. কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
৬. জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৭. বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৮. জলাবদ্ধ এলাকায় সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর প্রস্তুত রয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। জরুরি পরিষেবাগুলি ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকবে।
রাজ্যের কৃষি দপ্তর কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে যাতে তারা ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। বিশেষ করে ধান ক্ষেতগুলিতে অতিরিক্ত জল জমে না যায় সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
পরিবহন দপ্তর যাত্রীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকায় সেখানে যাতায়াতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তর জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে সতর্কতা জারি করেছে। বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার এবং খাবার সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ দপ্তর জানিয়েছে, তারা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হলে দ্রুত পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন