Ashwagandha benefits : অশ্বগন্ধা একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ভেষজ যা আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এই গুণকারী উদ্ভিদটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আসুন জেনে নেই অশ্বগন্ধার বহুমুখী উপকারিতা সম্পর্কে।
অশ্বগন্ধার পরিচিতি
অশ্বগন্ধা (Withania somnifera) একটি ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ যা মূলত ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘উইথানিয়া সোমনিফেরা (এল) ডুনাল’। আয়ুর্বেদে একে বলদা ও বাজিকরি নামেও অভিহিত করা হয়।অশ্বগন্ধার নামকরণের পিছনে একটি মজার ইতিহাস রয়েছে। এর পাতা সেদ্ধ করলে ঘোড়ার মূত্রের মতো গন্ধ বের হয় বলে এর নাম হয়েছে অশ্বগন্ধা – যার অর্থ ‘ঘোড়ার গন্ধ’। প্রাচীন আয়ুর্বেদ গ্রন্থগুলিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে অশ্বগন্ধা সেবন করলে ঘোড়ার মতো শক্তি ও সহনশীলতা অর্জন করা যায়।
“পুরুষদের জন্য অশ্বগন্ধার ৭টি অবাক করা উপকারিতা –
অশ্বগন্ধার উপকারিতা
অশ্বগন্ধার বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। এর প্রধান উপকারগুলি নিম্নরূপ:
১. মানসিক চাপ কমায়
অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক চাপ হ্রাস করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ দিন অশ্বগন্ধা সেবনের পর অংশগ্রহণকারীদের মানসিক চাপের মাত্রা ৪৪% কমে গিয়েছিল।
২. উদ্বেগ দূর করে
অশ্বগন্ধা উদ্বেগ দূর করতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের GABA রিসেপ্টরগুলিকে উদ্দীপিত করে যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬ সপ্তাহ অশ্বগন্ধা সেবনের পর অংশগ্রহণকারীদের উদ্বেগের মাত্রা ৬৯% কমে গিয়েছিল।
৩. স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
অশ্বগন্ধা স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে স্নায়ুকোষগুলিকে সুরক্ষা দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ সপ্তাহ অশ্বগন্ধা সেবনের পর অংশগ্রহণকারীদের স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
অশ্বগন্ধা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৪ সপ্তাহ অশ্বগন্ধা সেবনের পর অংশগ্রহণকারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১৫% বেড়ে গিয়েছিল।
৫. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
অশ্বগন্ধা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৪ সপ্তাহ অশ্বগন্ধা সেবনের পর ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা ১৩% কমে গিয়েছিল।
৬. পেশীর শক্তি বাড়ায়
অশ্বগন্ধা পেশীর শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি টেস্টোস্টেরোন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে পেশীর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ সপ্তাহ অশ্বগন্ধা সেবনের পর অংশগ্রহণকারীদের পেশীর শক্তি ৩৮% বেড়ে গিয়েছিল।
৭. যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
অশ্বগন্ধা যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি টেস্টোস্টেরোন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ সপ্তাহ অশ্বগন্ধা সেবনের পর পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ১৬৭% বেড়ে গিয়েছিল।
গোমুখাসন: আপনার শরীর ও মনের জন্য অবিশ্বাস্য উপকারী যোগাসন!
অশ্বগন্ধার উপকারিতার তুলনামূলক চিত্র
উপকারিতা | প্রভাব | গবেষণার ফলাফল |
---|---|---|
মানসিক চাপ কমায় | কর্টিসল হরমোন কমায় | ৪৪% কমেছে |
উদ্বেগ দূর করে | GABA রিসেপ্টর উদ্দীপিত করে | ৬৯% কমেছে |
স্মৃতিশক্তি বাড়ায় | অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় | উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি |
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় | শ্বেত রক্তকণিকা বাড়ায় | ১৫% বেড়েছে |
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে | ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় | ১৩% কমেছে |
পেশীর শক্তি বাড়ায় | টেস্টোস্টেরোন বাড়ায় | ৩৮% বেড়েছে |
যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে | টেস্টোস্টেরোন বাড়ায় | শুক্রাণু ১৬৭% বেড়েছে |
অশ্বগন্ধার ব্যবহারবিধি
অশ্বগন্ধা সাধারণত পাউডার, ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণ ডোজ হল:
- পাউডার: দৈনিক ৩-৬ গ্রাম
- ক্যাপসুল/ট্যাবলেট: দৈনিক ৩০০-৫০০ মিলিগ্রাম
তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সতর্কতা
অশ্বগন্ধা সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের এড়িয়ে চলা উচিত
- থাইরয়েড সমস্যা থাকলে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
- অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে পেটের অসুস্থতা, বমি ভাব হতে পারে
অশ্বগন্ধা একটি বহুমুখী গুণসম্পন্ন ভেষজ যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক মাত্রায় ও পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে অশ্বগন্ধা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।