How to deal with Oral cancer: মুখের ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক মানুষই এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন নন। আসুন জেনে নেই মুখের ক্যান্সারের ৫টি প্রধান লক্ষণ যা আপনাকে সতর্ক করে দেবে এবং জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।
মুখের ক্যান্সার কী?
মুখের ক্যান্সার হলো মুখ গহ্বরের যে কোনো অংশে উদ্ভূত হওয়া একটি ক্যান্সার। এটি মুখের ভিতরের আস্তরণ, ঠোঁট, জিহ্বা, মাড়ি, গালের ভিতরের অংশ, মুখের তালু বা টনসিলে হতে পারে। এই ক্যান্সার সাধারণত স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা নামে পরিচিত, যা মুখের আস্তরণের কোষগুলিতে শুরু হয়।আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬০% মুখের ক্যান্সার রোগী ৫ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকেন। যত দ্রুত এই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়, চিকিৎসার পর রোগীর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ততই বেশি হয়। বিশেষ করে স্টেজ-১ এবং স্টেজ-২ এর রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার ৭০-৯০% পর্যন্ত উঠতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ৭টি জীবনধারা পরিবর্তন: আপনার স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি
মুখের ক্যান্সারের ৫টি প্রধান লক্ষণ
১. মুখে দীর্ঘস্থায়ী ঘা বা ক্ষত
মুখের ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল মুখের যে কোনো অংশে একটি ঘা বা ক্ষত যা ৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সারে না। এই ঘা সাধারণত বেদনাহীন হয় এবং লাল বা সাদা রঙের হতে পারে। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে আপনার মুখে একটি ঘা ৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রয়েছে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. মুখে লাল বা সাদা প্যাচ
মুখের ভিতরে লাল বা সাদা প্যাচ দেখা যাওয়া মুখের ক্যান্সারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এই প্যাচগুলি সাধারণত মাড়ি, জিহ্বা, টনসিল বা মুখের অন্যান্য অংশে দেখা যেতে পারে। যদিও সব লাল বা সাদা প্যাচই ক্যান্সারের লক্ষণ নয়, তবে এগুলি দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. মুখে অস্বাভাবিক ফোলা বা চাকা
মুখের যে কোনো অংশে অস্বাভাবিক ফোলা বা চাকা দেখা দিলে তা মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এই ফোলা বা চাকা সাধারণত বেদনাহীন হয় এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বিশেষ করে গাল, ঠোঁট বা মাড়িতে এই ধরনের ফোলা দেখা দিলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
৪. গিলতে বা চিবাতে সমস্যা
যদি আপনি হঠাৎ করে গিলতে বা চিবাতে সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে তা মুখের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যা সাধারণত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ হয়। যদি আপনি নিয়মিত খাবার গিলতে বা চিবাতে সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. জিহ্বা বা মুখের অন্যান্য অংশে অবশতা
মুখের ক্যান্সারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল জিহ্বা বা মুখের অন্যান্য অংশে অবশতা অনুভব করা। এই অবশতা সাধারণত একপাশে হয় এবং কথা বলা বা খাওয়ার সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনি আপনার মুখের কোনো অংশে অবশতা অনুভব করেন যা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে, তাহলে তা একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
মুখের ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণ
উপরোক্ত ৫টি প্রধান লক্ষণ ছাড়াও মুখের ক্যান্সারের আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা আপনাকে সতর্ক করতে পারে:
- মুখে অস্বাভাবিক রক্তপাত
- মুখে অস্বাভাবিক গন্ধ
- দাঁত আলগা হয়ে যাওয়া
- কথা বলার সময় অস্পষ্টতা
- গলায় চাপ অনুভব করা
- কানে ব্যথা
- ওজন দ্রুত কমে যাওয়া
মুখের ক্যান্সারের কারণ
মুখের ক্যান্সারের সঠিক কারণ জানা না গেলেও, কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে:
- তামাক সেবন (ধূমপান, পান, জর্দা, গুল ইত্যাদি)
- অত্যধিক মদ্যপান
- মানবপ্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) সংক্রমণ
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির অত্যধিক সংস্পর্শে আসা (বিশেষত ঠোঁটের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে)
- পুষ্টিহীনতা
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের মধ্যে মুখের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি মহিলাদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া ৪০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এই ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।
মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়
মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- তামাক সেবন বন্ধ করুন
- মদ্যপান সীমিত করুন বা সম্পূর্ণ বন্ধ করুন
- নিয়মিত ফল ও সবজি খান
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিজেকে রক্ষা করুন
- নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিন
- HPV টিকা নিন
- নিয়মিত মুখের পরীক্ষা করান
মুখের ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা
যদি আপনি মুখের ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসক বা দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তারা আপনার মুখের পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করার পরামর্শ দিতে পারেন:
- বায়োপসি
- এক্স-রে
- সিটি স্ক্যান
- এমআরআই স্ক্যান
- পিইটি স্ক্যান
- এন্ডোস্কোপি
মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, অবস্থান এবং স্টেজের উপর। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয়:
- সার্জারি: ক্যান্সার কোষ এবং আশপাশের স্বাস্থ্যকর টিস্যু অপসারণ করা হয়।
- রেডিয়েশন থেরাপি: উচ্চ শক্তির রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
- কেমোথেরাপি: ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
- টার্গেটেড থেরাপি: ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলিকে লক্ষ্য করে ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
- ইমিউনোথেরাপি: রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ব্যবহার করা হয়।