What happens if you don’t file an income tax return: আপনি কি একজন ভারতীয় করদাতা? প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return – ITR) দাখিল করেন তো? যদি না করে থাকেন, তবে আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না অথবা নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উদাসীন থাকেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ছোট্ট একটি ভুলের জন্য আপনাকে বড়সড় আর্থিক জরিমানা এমনকি কারাবাসের সম্মুখীনও হতে হতে পারে? হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে কি হয়, তার সম্পূর্ণ চিত্রটি আমরা আজ তুলে ধরব। এই প্রতিবেদনে আমরা শুধুমাত্র সমস্যাগুলোই তুলে ধরব না, বরং এর থেকে বাঁচার উপায় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি সচেতন হতে পারেন এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।
আয়কর রিটার্ন (ITR) আসলে কী এবং কেন জরুরি?
আয়কর রিটার্ন হল একটি ফর্ম, যার মাধ্যমে একজন করদাতা তার এক আর্থিক বছরে অর্জিত আয় এবং সেই আয়ের ওপর প্রদত্ত করের হিসাব ভারত সরকারের আয়কর বিভাগের কাছে জমা দেন। এটি শুধুমাত্র একটি আইনি দায়িত্বই নয়, বরং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার কর্তব্যও বটে।
Income Tax Return 2025: সঠিক নথিপত্র প্রস্তুত রেখে রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া করুন সহজ
আইন অনুযায়ী, যদি আপনার মোট আয় করযোগ্য সীমার (Basic Exemption Limit) বেশি হয়, তবে আপনার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সুবিধা অনেক। যেমন—
- ঋণ পেতে সুবিধা: গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ বা ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার সময় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার আয়ের প্রমাণ হিসেবে গত কয়েক বছরের ITR দেখতে চায়।
- ভিসা আবেদনের জন্য: অনেক দেশ ভিসা আবেদনের সময় ITR ফাইলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গণ্য করে।
- রিফান্ড দাবি করা: যদি আপনার আয়ের উৎস থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর (TDS) কেটে নেওয়া হয়, তবে সেই টাকা ফেরত পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আয়কর রিটার্ন দাখিল করা।
- ক্ষতি পূরণ (Carry Forward of Losses): ব্যবসায়িক ক্ষতি বা মূলধনী ক্ষতি (Capital Loss) হলে, তা পরবর্তী বছরগুলোর আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে করের বোঝা কমানো যায়। কিন্তু সময়মতো ITR দাখিল না করলে এই সুবিধা পাওয়া যায় না।
আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে কি হয়? জেনে নিন ভয়ঙ্কর পরিণতি
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করাকে আয়কর আইন, ১৯৬১ অনুযায়ী একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এর ফলে আপনাকে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে কি হয় এবং এর সম্ভাব্য পরিণতিগুলো কী কী।
১. মোটা অঙ্কের জরিমানা বা লেট ফি (Penalty under Section 234F)
যদি আপনি নির্ধারিত তারিখের (সাধারণত ৩১শে জুলাই) মধ্যে আপনার ITR ফাইল করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আয়কর আইনের ২৩৪এফ ধারার অধীনে আপনাকে জরিমানা দিতে হবে।
- সাধারণ ক্ষেত্রে: যদি আপনি নির্দিষ্ট সময়সীমার পর কিন্তু ওই মূল্যায়ন বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের আগে রিটার্ন দাখিল করেন, তবে আপনাকে ৫,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে।
- আরও দেরিতে হলে: যদি আপনি ৩১শে ডিসেম্বরের পরেও রিটার্ন দাখিল করেন, তবে জরিমানার পরিমাণ বেড়ে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- ছোট করদাতাদের জন্য ছাড়: তবে, যদি আপনার মোট আয় ৫ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে এই জরিমানার পরিমাণ ১,০০০ টাকার বেশি হবে না।
এই জরিমানা আপনার করের অতিরিক্ত একটি বোঝা, যা সহজেই এড়ানো যেত।
২. অতিরিক্ত সুদ প্রদান (Interest on Unpaid Tax)
শুধু জরিমানা দিয়েই নিস্তার নেই। যদি আপনার কোনো কর বকেয়া থাকে, তবে সেই বকেয়া করের ওপর আপনাকে সুদও প্রদান করতে হবে।
- ধারা ২৩৪এ (Section 234A): রিটার্ন দাখিলে দেরি করার জন্য বকেয়া করের ওপর প্রতি মাসে বা মাসের অংশবিশেষের জন্য ১% হারে সরল সুদ দিতে হয়। সময়সীমা শেষ হওয়ার পরের দিন থেকেই এই সুদ গণনা শুরু হয় এবং যেদিন আপনি রিটার্ন দাখিল করবেন, সেই দিন পর্যন্ত চলতে থাকে।
- ধারা ২৩৪বি এবং ২৩৪সি (Section 234B & 234C): অগ্রিম কর (Advance Tax) সময়মতো পরিশোধ না করলেও এই ধারাগুলো অনুযায়ী আপনাকে সুদ দিতে হতে পারে।
অর্থাৎ, যত দিন আপনি রিটার্ন দাখিল করতে দেরি করবেন, আপনার সুদের বোঝাও তত বাড়তে থাকবে।
৩. আইনি নোটিশ এবং মামলা (Legal Notice and Prosecution)
বারবার নিয়ম লঙ্ঘন করলে বা কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্য প্রমাণিত হলে আয়কর বিভাগ আপনার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।
- নোটিশ জারি: আয়কর বিভাগ আপনাকে নোটিশ পাঠিয়ে আপনার আয়ের উৎস এবং রিটার্ন দাখিল না করার কারণ জানতে চাইতে পারে।
- কারাবাসের ঝুঁকি (Section 276CC): যদি আপনার বকেয়া করের পরিমাণ ২৫,০০০ টাকার বেশি হয় এবং আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে রিটার্ন দাখিল না করেন, তবে আয়কর আইনের ২৭৬সিসি ধারা অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। অপরাধ প্রমাণিত হলে, আপনার ৩ মাস থেকে শুরু করে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। যদিও এটি চরম পদক্ষেপ এবং সাধারণত বড় অঙ্কের কর ফাঁকির ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়, তবে এর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
৪. রিফান্ড এবং লোকসান বহনের সুবিধা হারানো
সময়মতো ITR দাখিল না করার আরও দুটি বড় অসুবিধা হলো—
- রিফান্ড আটকে যাওয়া: আগেই বলা হয়েছে, যদি আপনার TDS বেশি কাটা হয়ে থাকে, তাহলে সেই টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সময়মতো রিটার্ন দাখিল করা আবশ্যক। দেরিতে রিটার্ন দাখিল করলে আপনার রিফান্ড পেতেও দেরি হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে সুদও হারাতে পারেন।
- লোকসান সমন্বয়ের সুযোগ হারানো: শেয়ার বাজার বা ব্যবসা থেকে হওয়া লোকসান (মূলধনী লোকসান বা ব্যবসায়িক লোকসান) পরবর্তী বছরগুলিতে লাভ থেকে বাদ দিয়ে করের বোঝা কমানো যায়। কিন্তু এর জন্য আপনাকে অবশ্যই সময়সীমার মধ্যে ITR দাখিল করতে হবে। দেরিতে রিটার্ন দাখিল করলে এই সুবিধা পাওয়া যায় না (শুধুমাত্র বাড়ির সম্পত্তি থেকে হওয়া লোকসান ছাড়া)।
মিউচুয়াল ফান্ডে বেশি রিটার্ন চাই? জানুন ৭-৫-৩-১ ম্যাজিক ফর্মুলা!
দেরিতে হলেও রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ: বিলেটেড রিটার্ন (Belated Return)
যদি কোনো কারণে আপনি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ITR দাখিল করতে না পারেন, তাহলেও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আয়কর আইন আপনাকে একটি সুযোগ দেয়, যা ‘বিলেটেড রিটার্ন’ (Belated Return) নামে পরিচিত।
আয়কর আইনের ১৩৯(৪) ধারা অনুযায়ী, আপনি মূল্যায়ন বছর (Assessment Year) শেষ হওয়ার ৩ মাস আগে পর্যন্ত (অর্থাৎ ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত) আপনার দেরিতে হওয়া রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। যদিও এর জন্য আপনাকে উপরে উল্লিখিত জরিমানা এবং সুদ প্রদান করতে হবে, তবে এটি আপনাকে আইনি জটিলতা এবং মামলা থেকে বাঁচাতে পারে।
আশা করি, আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে কি হয় সে সম্পর্কে আপনার একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়েছে। রিটার্ন দাখিল করা শুধুমাত্র একটি আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, এটি আপনার আর্থিক শৃঙ্খলারও পরিচায়ক। জরিমানা, সুদ, আইনি নোটিশ এবং কারাবাসের মতো গুরুতর পরিণতি এড়াতে সময়মতো আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করা অত্যন্ত জরুরি। সামান্য একটু সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ আপনাকে ভবিষ্যতের বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই শেষ তারিখের জন্য অপেক্ষা না করে আজই আপনার ITR ফাইল করার প্রস্তুতি শুরু করুন এবং একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করুন।