What is Narco Test: বর্তমানে অপরাধ তদন্তে নারকো টেস্ট নিয়ে বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি দিল্লির জন্তর মন্তরে প্রতিবাদরত কুস্তিগিররা এই টেস্টের জন্য রাজি হয়েছেন, তবে শর্ত দিয়েছেন যে এটি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে হতে হবে এবং সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে।
নারকো টেস্ট কী?
নারকো টেস্টে অভিযুক্তের শরীরে সোডিয়াম পেন্টোথাল নামক একটি ওষুধ ইনজেকশন করা হয়। এর ফলে অভিযুক্ত হিপনোটিক বা ঘুমন্ত অবস্থায় চলে যায় এবং তার কল্পনাশক্তি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় অভিযুক্ত মিথ্যা বলতে পারে না বলে মনে করা হয় এবং সত্য তথ্য প্রকাশ করবে বলে আশা করা হয়।
সোডিয়াম পেন্টোথাল একটি দ্রুত কার্যকরী, স্বল্পস্থায়ী অ্যানেস্থেটিক যা সাধারণত অস্ত্রোপচারের সময় রোগীদের অচেতন করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বারবিচুরেট শ্রেণির ওষুধ যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর ডিপ্রেসান্ট হিসেবে কাজ করে।
নারকো টেস্টের ইতিহাস
নারকো টেস্টের ধারণাটি প্রথম আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই পদ্ধতি ব্যবহার করত বলে মনে করা হয়। পরবর্তীতে ভারতে এটি অপরাধ তদন্তের একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
নারকো টেস্টের পদ্ধতি
নারকো টেস্টের সময় নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:
1. অভিযুক্তকে সম্পূর্ণ পরীক্ষা প্রক্রিয়া এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
2. অভিযুক্তের সম্মতি নেওয়া হয়।
3. একজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সোডিয়াম পেন্টোথাল ইনজেকশন দেন।
4. অভিযুক্ত অর্ধ-সচেতন অবস্থায় চলে গেলে তাকে প্রশ্ন করা হয়।
5. পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও রেকর্ড করা হয়।
6. একজন মনোবিজ্ঞানী এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন।
আইনি অবস্থান
2010 সালে সুপ্রিম কোর্ট নারকো টেস্টের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয়। কোর্ট বলে:
– অভিযুক্তের সম্মতি ছাড়া নারকো টেস্ট করা যাবে না।
– যারা স্বেচ্ছায় টেস্ট করতে চান তাদের আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হবে।
– পুলিশ ও আইনজীবীকে অবশ্যই টেস্টের শারীরিক, মানসিক ও আইনি প্রভাব ব্যাখ্যা করতে হবে।
– নারকো টেস্টে প্রাপ্ত তথ্য স্বীকারোক্তি হিসেবে গণ্য হবে না।
বিতর্ক ও সমালোচনা
নারকো টেস্ট নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে:
– এর নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
– এটি একজনের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে বলে অনেকে মনে করেন।
– এটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
– ওষুধের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ভারতে উল্লেখযোগ্য নারকো টেস্ট কেসগুলি
ভারতে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল মামলায় নারকো টেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে:
মামলা | বছর |
---|---|
গুজরাত দাঙ্গা | 2002 |
তেলগি জালিয়াতি কাণ্ড | 2003 |
নিঠারি হত্যাকাণ্ড | 2007 |
26/11 মুম্বাই হামলা | 2008 |
অরুশি তালওয়ার হত্যাকাণ্ড | 2008 |
সম্ভাব্য প্রভাব
নারকো টেস্টের ব্যবহার বাড়লে নিম্নলিখিত প্রভাব পড়তে পারে:
– অপরাধ তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে।
– মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়তে পারে।
– আইনি জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
– পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা কমতে পারে।
নারকো টেস্ট নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকলেও এটি অপরাধ তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এর ব্যবহার যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন।