Current population of Russia: বিশ্বের আয়তনে সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ার মোট জনসংখ্যা ২০২৫ সালের জানুয়ারী ১ তারিখ পর্যন্ত ১৪.৬ কোটি (১৪৬,০২৮,৩২৫ জন)। এই বিশাল দেশটি ইউরোপের সর্বাধিক জনবহুল দেশ এবং বিশ্বের নবম সর্বাধিক জনবহুল দেশ হিসেবে পরিচিত। যদিও দেশটির আয়তন বিশাল, তবুও জনসংখ্যার দিক থেকে চীন, ভারত, আমেরিকার মতো দেশগুলির তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশটির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়ার বর্তমান জনসংখ্যার চিত্র
২০২৫ সালের শুরুতে রাশিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর (Rosstat) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪.৬ কোটি। ২০২৪ সালের তুলনায় দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ০.০৮% হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন জনসংখ্যা বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকলেও, সবাই একমত যে রাশিয়ার জনসংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটার (Worldometer) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রাশিয়ার জনসংখ্যা ১৪.৪ কোটি (১৪৩,৯৯৭,৩৯৩ জন) যা আগের বছরের তুলনায় ০.৫৭% কম। অন্যদিকে, ট্রেডিং ইকোনমিক্স (Trading Economics) অনুমান করেছে যে ২০২৫ সালের শেষে রাশিয়ার জনসংখ্যা ১৪৬.১০ মিলিয়ন হতে পারে।
রাশিয়ার জনসংখ্যার ঐতিহাসিক ধারা
রাশিয়ার জনসংখ্যার ইতিহাস বেশ উত্থান-পতনের সাক্ষী। ১৯৮৯ সালে রাশিয়ায় প্রায় ১৪৭.৪ মিলিয়ন লোক বাস করত। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে ১৯৯০-এর দশকে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে। ২০০০ সালে এটি ১৪৬.৬ মিলিয়নে নেমে আসে।
২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রাশিয়ার জনসংখ্যা ছিল ১৪২.৮ মিলিয়ন। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালের আদমশুমারিতে ১৪৭.২ মিলিয়নে পৌঁছায়। কিন্তু তারপর থেকে রাশিয়ার জনসংখ্যা আবার কমতে শুরু করেছে।
জনসংখ্যার ক্রমবিকাশ (বছর অনুযায়ী)বছরজনসংখ্যা (মিলিয়ন)পরিবর্তনের হার2000146.72-0.21%2010142.85-0.09%2020146.37+0.15%2021147.20+0.12%2024144.82-0.43%2025146.03-0.08%
জনসংখ্যা বিতরণ ও জনবিন্যাস
রাশিয়া আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ হলেও, এর জনসংখ্যা বিতরণ অত্যন্ত অসম। দেশটিতে জনঘনত্ব মাত্র প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯ জন (প্রতি বর্গ মাইলে ২৩ জন), যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এই কম জনঘনত্বের কারণ হল রাশিয়ার বিশাল আয়তন এবং প্রতিকূল জলবায়ু বিশিষ্ট বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
রাশিয়ার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দেশের পশ্চিমাঞ্চলে (ইউরোপ অংশে) বসবাস করে, যেখানে প্রধান শহর ও শিল্প কেন্দ্রগুলো অবস্থিত। পূর্ব সাইবেরিয়া এবং সুদূর প্রাচ্যের অনেক অঞ্চল জনবিরল।
শহুরে ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী
রাশিয়ার জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর উচ্চ নগরায়ণ। ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৭৫% লোক (১০৮,০৬২,৩৮৪ জন) শহরাঞ্চলে বাস করে। মস্কো, রাশিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর, সেন্ট পিটার্সবার্গ, সাংস্কৃতিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং ইয়েকাতেরিনবুর্গ দেশের প্রধান শহরগুলির মধ্যে অন্যতম।
গতদশকগুলোতে গ্রাম থেকে শহরে মানুষের অভিবাসন বেড়েছে, যার ফলে গ্রামীণ অঞ্চলে জনসংখ্যা কমেছে। এটি রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
বয়স কাঠামো ও মধ্যম বয়স
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দেশ। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির জনগোষ্ঠীর মধ্যম বয়স ৪০.৩ বছর। রাশিয়ার জনসংখ্যার বয়স কাঠামোতে দেখা যায়:
- ১৮ বছরের কম: প্রায় ২৩.২১%
- ১৮-৪৪ বছর: প্রায় ৩৪.৭৩%
- ৪৫-৬৪ বছর: ২৬.৫৫%
- ৬৫ বছর বা তার বেশি: ১৫.৬%
লিঙ্গ অনুপাতের দিক থেকে রাশিয়ার জনসংখ্যায় নারীদের সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি। প্রতি হাজার নারীতে মাত্র ৮৬৩ জন পুরুষ রয়েছে, যা বিশ্বের গড় লিঙ্গ অনুপাতের চেয়ে কম।
প্রজনন হার এবং জীবনকাল
রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ হল নিম্ন প্রজনন হার। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মোট প্রজনন হার (TFR) মাত্র ১.৪ শিশু প্রতি নারীতে, যা জনসংখ্যা প্রতিস্থাপনের স্তর (২.১) থেকে অনেক কম।
জীবনকালের ক্ষেত্রে, রাশিয়ার সামগ্রিক প্রত্যাশিত জীবনকাল ২০২৩ সালে ৭৩ বছর, যা পুরুষদের জন্য ৬৮ বছর এবং মহিলাদের জন্য ৭৯ বছর। পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে এই ব্যবধান (১১ বছর) বেশ উল্লেখযোগ্য এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণ, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কিত।
জনসংখ্যা হ্রাসের কারণসমূহ
রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাসের পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:
নিম্ন জন্মহার: ১৯৯২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এবং আবার ২০১৬ সাল থেকে রাশিয়ার মৃত্যুর হার জন্মহারকে ছাড়িয়ে গেছে, যাকে বিশ্লেষকরা একটি জনসংখ্যা সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
উচ্চ মৃত্যুহার: ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ায় প্রতি ১,০০০ জনে ১২.৫ জনের মৃত্যু হয়, যা জন্মহার (প্রতি ১,০০০ জনে ৮.৪) থেকে বেশি।
করোনাভাইরাস মহামারী: ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, ইউক্রেন আক্রমণের আগে, রাশিয়ায় করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অতিরিক্ত মৃত্যুর ফলে রেকর্ড সংখ্যক জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
অভিবাসন পরিবর্তন: যদিও রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসীদের একটি গন্তব্য দেশ ছিল, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসনের প্রবণতায় পরিবর্তন দেখা গেছে।
জাতিগত বিবিধতা
রাশিয়া একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র, যেখানে ১৯৩টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠী বাস করে। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জনসংখ্যার প্রায় ৭২% এথনিক রাশিয়ান এবং প্রায় ১৯% বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু। জাতিসংঘের মতে, রাশিয়ার অভিবাসী জনসংখ্যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম, যা ১১.৬ মিলিয়নেরও বেশি; এর বেশিরভাগই অন্যান্য পোস্ট-সোভিয়েত রাষ্ট্র থেকে এসেছে।
আঞ্চলিক জনসংখ্যার প্রবণতা
রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যার প্রবণতা ভিন্ন। রোসস্টাট-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশের বিশটি অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে মস্কো ও লেনিনগ্রাদ অঞ্চল এবং ইনগুশেতিয়ায়। অন্যদিকে, দূরপ্রাচ্য এবং সাইবেরিয়ার অংশে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে রাশিয়ার জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা আগামী দশকগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৩০ সালে রাশিয়ার জনসংখ্যা ১৪.২ কোটিতে নেমে আসবে এবং ২০৫০ সালে আরও কমে ১৩.৬ কোটিতে দাঁড়াবে। এই হ্রাস রাশিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
রাশিয়ার মোট জনসংখ্যা ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাসে ১৪.৬ কোটি, যা ইউরোপে সর্বাধিক এবং বিশ্বে নবম সর্বাধিক। তবে দেশটি একটি উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিম্ন জন্মহার, উচ্চ মৃত্যুহার, এবং বয়স্ক জনসংখ্যার বাড়তি অনুপাত। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, রাশিয়ার জনসংখ্যা আগামী দশকগুলোতে আরও কমতে পারে।
রাশিয়ার সরকার এই সমস্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন জনসংখ্যা নীতি গ্রহণ করেছে, যেমন পারিবারিক সহায়তা কর্মসূচি, শিশু ভাতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন। সময়ই বলবে এই প্রচেষ্টাগুলি রাশিয়ার জনসংখ্যার প্রবণতাকে উল্টাতে কতটা সফল হবে।