শুক্লা দ্বাদশী কি? এর অর্থ, তাৎপর্য এবং উৎসবসমূহ

What is Shukla Dwadashi: হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শুক্লা দ্বাদশী হলো প্রতিটি চান্দ্র মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশ দিন বা তিথি। 'শুক্ল' শব্দটি চাঁদের আলোকিত পর্যায়কে বোঝায়, যা অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমার দিকে যাত্রার…

Ishita Ganguly

 

What is Shukla Dwadashi: হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শুক্লা দ্বাদশী হলো প্রতিটি চান্দ্র মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশ দিন বা তিথি। ‘শুক্ল’ শব্দটি চাঁদের আলোকিত পর্যায়কে বোঝায়, যা অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমার দিকে যাত্রার সময়কে নির্দেশ করে। ‘দ্বাদশী’ শব্দের অর্থ হলো দ্বাদশ বা বারোতম দিন। সুতরাং, শুক্লা দ্বাদশী বলতে চাঁদের শুক্লপক্ষের দ্বাদশ তিথিকে বোঝানো হয় । এই দিনটি হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র এবং বিভিন্ন পূজা ও ধর্মীয় আচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে ভগবান বিষ্ণু এবং পবিত্র তুলসী গাছের উপাসনার জন্য এই তিথি অত্যন্ত শুভ ।

তিথি এবং পক্ষ: হিন্দু পঞ্জিকার ভিত্তি

হিন্দু পঞ্জিকা বা পঞ্চাঙ্গ মূলত একটি চান্দ্র-সৌর বর্ষপঞ্জি, যা চাঁদ এবং সূর্য উভয়ের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হয় । এর দুটি প্রধান উপাদান হলো তিথি এবং পক্ষ।

তিথি কী?

তিথি হলো একটি চান্দ্র দিন। সূর্য এবং চাঁদের মধ্যে প্রতি ১২ ডিগ্রি কৌণিক পার্থক্যের জন্য একটি তিথি গণনা করা হয় । একটি চান্দ্র মাসে মোট ৩০টি তিথি থাকে। এই তিথিগুলো দুটি পক্ষে বিভক্ত—শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ ।

পক্ষ: শুক্ল ও কৃষ্ণ

প্রতিটি চান্দ্র মাস দুটি পক্ষে বিভক্ত থাকে, যার প্রতিটি ১৫টি তিথি নিয়ে গঠিত ।

  • শুক্লপক্ষ: অমাবস্যার পর থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিনের সময়কালকে শুক্লপক্ষ বলা হয়। এই সময়ে চাঁদ ধীরে ধীরে আলোকিত হতে থাকে এবং এই পক্ষকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় ।

  • কৃষ্ণপক্ষ: পূর্ণিমার পর থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কালকে কৃষ্ণপক্ষ বলা হয়। এই সময়ে চাঁদের আলো ক্রমশ কমতে থাকে।

শুক্লা দ্বাদশী

শুক্লপক্ষের অংশ হওয়ায় এটি একটি ইতিবাচক এবং পবিত্র সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।

শুক্লা দ্বাদশীর ধর্মীয় তাৎপর্য

শুক্লা দ্বাদশী

তিথিটি বিভিন্ন ধর্মীয় কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত, এই দিনটি একাদশী ব্রতের পারণের (ব্রত ভঙ্গের) দিন হিসেবে পালিত হয়। যারা একাদশী ব্রত পালন করেন, তারা দ্বাদশী তিথিতে নির্দিষ্ট সময়ে ব্রত ভঙ্গ করেন । এই তিথিকে ভগবান বিষ্ণুর পূজার জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত বলে মনে করা হয় ।

শুক্লা দ্বাদশীতে পালিত উৎসবসমূহ

বছরের বিভিন্ন সময়ে শুক্লা দ্বাদশী

তিথিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পালিত হয়। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উৎসবের বর্ণনা দেওয়া হলো:

  • কূর্ম দ্বাদশী: এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার কূর্মের পূজা করা হয় ।

  • বামন দ্বাদশী: ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার বামনের পূজা করা হয়। এই উৎসবটি ‘ওনাম’ নামেও পরিচিত ।

গোবিন্দ দ্বাদশী বা নৃসিংহ দ্বাদশী: ফাল্গুন মাসের শুক্লা দ্বাদশী

তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারের পূজা করা হয়, যা হোলি উৎসবের আগে পড়ে ।

মদন দ্বাদশী: চৈত্র মাসের শুক্লা দ্বাদশী

তিথিকে মদনদ্বাদশী বলা হয় ।

  • রাম লক্ষ্মণ দ্বাদশী: এই দিনটি পুত্র সন্তান লাভের কামনায় গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় ।

  • কল্কি অবতারের জন্ম: পুরাণ অনুসারে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, ভগবান বিষ্ণুর দশম এবং শেষ অবতার কল্কি শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে জন্মগ্রহণ করবেন ।

পঞ্চাঙ্গ এবং তিথির গণনা

হিন্দু পঞ্জিকা, যা বাংলায় ‘পঞ্জিকা’ নামে পরিচিত, পাঁচটি প্রধান অঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত—তিথি, বার, নক্ষত্র, যোগ এবং করণ । এই কারণেই একে ‘পঞ্চাঙ্গ’ বলা হয়। তিথি গণনা অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং এটি সূর্য ও চাঁদের আপেক্ষিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে । এর সময়কাল পরিবর্তনশীল, কখনও কখনও ২৪ ঘণ্টার কম বা বেশি হতে পারে।

উৎসব মাস ও পক্ষ তাৎপর্য
কূর্ম দ্বাদশী পৌষ শুক্লা দ্বাদশী বিষ্ণুর কূর্ম অবতারের পূজা ।
বামন দ্বাদশী ভাদ্র শুক্লা দ্বাদশী বিষ্ণুর বামন অবতারের পূজা; ওনাম নামেও পরিচিত ।
গোবিন্দ দ্বাদশী ফাল্গুন শুক্লা দ্বাদশী বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারের পূজা ।
মদন দ্বাদশী চৈত্র শুক্লা দ্বাদশী বসন্তকালের একটি বিশেষ উৎসব ।

হিন্দু উৎসবের তারিখগুলো মূলত চান্দ্র পঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, তাই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি বছর এই তারিখগুলো পরিবর্তিত হয় । উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের হিন্দু নববর্ষ বা বিক্রম সংবৎ ২০৮২ শুরু হবে ৩০শে মার্চ, যা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে পড়বে । একইভাবে, বিভিন্ন মাসের দ্বাদশী তিথিগুলোও ভিন্ন ভিন্ন গ্রেগরিয়ান তারিখে পড়ে ।

এই তিথিটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় দিনই নয়, এটি চান্দ্র চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা প্রকৃতির সাথে মানব জীবনের সংযোগ স্থাপন করে ।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।