Spinal Muscular Atrophy disease: SMA Disease, যার পুরো নাম Spinal Muscular Atrophy, একটি জেনেটিক বা বংশগত রোগ। এই রোগে শরীরের মোটর নিউরন নামক বিশেষ স্নায়ু কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে শরীরের স্বেচ্ছাসেবী পেশীগুলো (যেমন: হাত-পা নড়ানো, হাঁটা, শ্বাস নেওয়া, গিলতে পারা) দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সময়ের সাথে সাথে পেশী শুকিয়ে যেতে থাকে। SMA সাধারণত জন্ম থেকেই থাকে এবং শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যদিও বড়দেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
SMA Disease কেন হয়? রোগের পেছনের বিজ্ঞান
SMA Disease মূলত SMN1 (Survival Motor Neuron 1) নামক একটি জিনের ত্রুটির কারণে হয়। এই জিনটি SMN নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে, যা মোটর নিউরনের বেঁচে থাকা এবং কাজ করার জন্য অপরিহার্য। যদি SMN1 জিনের উভয় কপিতে সমস্যা থাকে, তাহলে SMN প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার ফলে মোটর নিউরন ধ্বংস হতে শুরু করে। এছাড়া SMN2 নামক আরেকটি জিন রোগের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে—SMN2 কপি যত বেশি, রোগ ততটা মৃদু হতে পারে।
SMA Disease-এর ধরন: কোন বয়সে, কেমন লক্ষণ?
SMA Disease সাধারণত বয়স ও লক্ষণের ভিত্তিতে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়:
ধরন | বয়স | প্রধান লক্ষণ |
---|---|---|
টাইপ 0 | জন্মের আগেই | গর্ভে কম নড়াচড়া, জন্মের পরই গুরুতর দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট |
টাইপ 1 (সবচেয়ে সাধারণ) | ০-৬ মাস | মাথা ধরে রাখতে না পারা, বসতে না পারা, শ্বাস ও গিলতে সমস্যা, দ্রুত মৃত্যুঝুঁকি |
টাইপ 2 | ৬-১৮ মাস | বসতে পারে, কিন্তু হাঁটতে পারে না, পেশী দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট |
টাইপ 3 | ১৮ মাসের পর | হাঁটতে পারে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ক্ষমতা হারায়, পেশী দুর্বলতা |
টাইপ 4 | প্রাপ্তবয়স্ক | হালকা থেকে মাঝারি পেশী দুর্বলতা, সাধারণত স্বাভাবিক আয়ু |
SMA Disease-এর সাধারণ লক্ষণ: কীভাবে বুঝবেন?
SMA Disease-এর লক্ষণ রোগের ধরন ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
-
পেশী দুর্বলতা ও শুকিয়ে যাওয়া (atrophy)
-
শরীরের স্বাভাবিক টোন কমে যাওয়া (hypotonia)
-
শিশুদের ক্ষেত্রে বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা ইত্যাদি মোটর মাইলফলক অর্জনে দেরি
-
শ্বাস নিতে ও গিলতে সমস্যা
-
মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাওয়া (scoliosis)
-
রিফ্লেক্স কমে যাওয়া বা না থাকা
-
কিছু ক্ষেত্রে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া (contracture)
শিশুরা জন্মের পর স্বাভাবিক মনে হলেও, কয়েক মাসের মধ্যেই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। টাইপ ১ SMA-তে শিশুরা কখনোই স্বাধীনভাবে বসতে পারে না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুই বছরের মধ্যে মারা যায়, যদি চিকিৎসা না হয়। টাইপ ২ ও ৩-তে জীবনকাল কিছুটা বেশি, তবে পেশী দুর্বলতা ও চলাফেরার সমস্যা থেকেই যায়।
SMA Disease নির্ণয় ও চিকিৎসা: কীভাবে হয়?
বর্তমানে SMA Disease নির্ণয়ের জন্য জেনেটিক টেস্ট সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এতে SMN1 জিনের ত্রুটি ধরা পড়ে এবং SMN2 কপির সংখ্যা জানা যায়, যা রোগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সহায়ক। উন্নত দেশে নবজাতক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে জন্মের পরপরই SMA ধরা সম্ভব হচ্ছে, ফলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এখন SMA-এর জন্য তিনটি SMN-enhancing ওষুধ (যেমন: nusinersen, onasemnogene abeparvovec, risdiplam) বিভিন্ন দেশে অনুমোদিত হয়েছে। এই ওষুধগুলো SMN প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে এবং রোগের অগ্রগতি অনেকাংশে ধীর করে দেয়। তবে চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা যায়, তত ভালো ফলাফল পাওয়া যায়—বিশেষ করে শিশুরা যদি উপসর্গ শুরু হওয়ার আগেই চিকিৎসা পায়।
SMA Disease: বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে SMA Disease-এর ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে জেনেটিক টেস্টিং সুবিধা সীমিত, তাই অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়। ফলে শিশুরা উপসর্গ শুরু হওয়ার অনেক পরে চিকিৎসা পায়, যা ফলাফলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তবে সচেতনতা বাড়লে এবং দ্রুত ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে SMA রোগীদের জীবনমান অনেক উন্নত করা সম্ভব।
SMA Disease একটি জটিল ও জীবন-পরিবর্তনকারী রোগ হলেও, আধুনিক চিকিৎসা ও দ্রুত ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে রোগীদের জীবনমান অনেকাংশে উন্নত করা সম্ভব। তাই শিশুর মধ্যে পেশী দুর্বলতা, মোটর মাইলফলকে দেরি বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। SMA Disease সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করাই পারে এই রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে।