৭ মে যদি হঠাৎ করে আপনার এলাকায় কোনও সাইরেন শুনতে পান, তাহলে আতঙ্কিত হবেন না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে সেদিন দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নাগরিক সুরক্ষার জন্য মক ড্রিল বা ছদ্ম অনুশীলন পরিচালনা করা হবে2। এই মক ড্রিলের অংশ হিসেবে এয়ার রেইড সাইরেন বাজানো হবে, ব্ল্যাকআউটের মহড়া হবে এবং নাগরিকদের, বিশেষ করে পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে তারা জানে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে কী করতে হবে।
কেন হচ্ছে এই মক ড্রিল?
পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই হামলায় ২৬ জন নিরপরাধ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এবং সীমান্তেও বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে1।
এই আবহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যকে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে মহড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম এই ধরনের মক ড্রিল করানো হচ্ছে দেশে।
কী কী হবে এই মক ড্রিলে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে রাজ্যগুলিকে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকবে এই মক ড্রিলে:
বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন: বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হবে এবং দেখা হবে এই ওয়ার্নিং সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই সাইরেন বাজলে নাগরিকদের কী করতে হবে, সেই বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
নাগরিকদের এবং পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ: সাধারণ মানুষ, বিশেষত পড়ুয়াদের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে কী করতে হবে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান হামলার সময় আশ্রয় নেওয়া, পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখা, জরুরি সরবরাহ সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়গুলি।
ব্ল্যাকআউট ড্রিল: হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে কী করণীয় তা নিয়েও মহড়া করা হবে। যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আলো নিভিয়ে ‘ব্ল্যাকআউট’ করে দেওয়া হয় এলাকা। রবিবার রাতে ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনী এই ধরনের একটি ব্ল্যাকআউট ড্রিল করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো সুরক্ষা: গুরুত্বপূর্ণ প্লান্ট বা জায়গাকে আগে থেকেই রক্ষা করার ব্যবস্থা করা এবং সেগুলিকে ঢেকে রাখার মহড়াও করা হবে।
নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া: সাধারণ মানুষকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই প্ল্যান তৈরি করা এবং তার রিহার্সাল করা হবে।
সরকারি চাকরি পাওয়ার ৭টি অব্যর্থ টোটকা – যা আপনাকে দিবে সাফল্য!
যুদ্ধের সাইরেন কী এবং এর ইতিহাস
যুদ্ধের সাইরেন বা এয়ার রেইড সাইরেন হল একটি সতর্কতামূলক ধ্বনি, যা আসন্ন বিমান হামলা বা অন্যান্য সামরিক হামলার আগে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে বাজানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ধরনের সাইরেন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হত বিভিন্ন দেশে।
ভারতে ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় শেষবার এই ধরনের সাইরেন ব্যবহার করা হয়েছিল। তারপর এই ৫৪ বছর পরে আবার এই ধরনের মক ড্রিল করা হচ্ছে, যা বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়।
যুদ্ধের সাইরেন বাজলে কী করবেন?
যদি ৭ মে বা ভবিষ্যতে কোনো সময় যুদ্ধের সাইরেন বাজে, তাহলে আপনার করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে উল্লেখ করা হল:
শান্ত থাকুন: সর্বপ্রথম, শান্ত থাকুন এবং আতঙ্কিত না হয়ে পরিস্থিতি বুঝে নিন। ৭ মের মক ড্রিলের ক্ষেত্রে, এটি শুধুমাত্র একটি অনুশীলন।
আশ্রয় নিন: যদি এটি প্রকৃত বিপদের সংকেত হয়, তাহলে দ্রুত নিকটবর্তী পাকা বাড়ি, আন্ডারগ্রাউন্ড শেল্টার বা বাড়ির সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। বাড়ির ভিতরে থাকলে, জানালা-দরজা থেকে দূরে থাকুন।
আলো নিভিয়ে দিন: ব্ল্যাকআউট নির্দেশ দেওয়া হলে সব আলো নিভিয়ে দিন। অন্ধকারে শত্রুপক্ষের বিমান থেকে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে রাখুন: একটি জরুরি ব্যাগে খাদ্য, পানি, ওষুধ, ফ্লাশলাইট, ব্যাটারি চালিত রেডিও, প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম ইত্যাদি রাখুন।
রেডিও/টিভি চালু রাখুন: সরকারি নির্দেশনা এবং আপডেট জানতে ব্যাটারি চালিত রেডিও বা টিভি চালু রাখুন।
পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখুন: পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের একটি প্ল্যান আগে থেকেই তৈরি করে রাখুন।
গাজায় যুদ্ধ বিদ্ধস্ত শিশুদের করুণ পরিণতি: এক গভীর পর্যালোচনা
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক এবং সামরিক প্রস্তুতি
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে পর এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন1। গত সপ্তাহে নৌসেনা এবং বায়ুসেনা প্রধানদের সাথেও বৈঠক করেছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি হিসাবেই এই বৈঠক হয়েছিল3। সোমবারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করে সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন1।
সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা
এদিকে পাঞ্জাব সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার অভিযোগে এক পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে বিএসএফ। ধৃতের কাছ থেকে পাকিস্তানি পরিচয়পত্র ও ৪০ পাকিস্তানি রুপি উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগেও রাজস্থান থেকে দুই পাকিস্তানি গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার একাধিক ভারতীয় সামরিক ওয়েবসাইটকে টার্গেট করেছে পাকিস্তানের সাইবার হ্যাকাররা। ‘পাকিস্তান সাইবার ফোর্স’ নামের এক সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেস এবং মনোহর পাররিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিস অ্যান্ড অ্যানালিসিসের ওয়েবসাইট হ্যাক করার দায় স্বীকার করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের মক ড্রিল করানো একদিকে যেমন সামরিক প্রস্তুতির অংশ, তেমনি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষও কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবে, সেই বিষয়ে আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই যুদ্ধের জল্পনা তৈরি হয়েছে, আর কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সেই জল্পনাকে আরও জোরালো করেছে।
৭ মে যখন যুদ্ধের সাইরেন বাজবে, তখন আতঙ্কিত না হয়ে বুঝতে হবে এটি একটি মক ড্রিল, যার উদ্দেশ্য হল যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের প্রস্তুত করা। ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো এই ধরনের মক ড্রিল হতে যাচ্ছে, যা দেশের বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়।
সাইরেন বাজলে শান্ত থাকুন, সরকারি নির্দেশাবলী মেনে চলুন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সহযোগিতা করুন। মনে রাখবেন, ৭ মের এই মক ড্রিল আপনার এবং আপনার পরিবারের সুরক্ষার জন্যই করা হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, ভবিষ্যতে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে আপনি আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবেন।