Rath Yatra food restrictions : রথযাত্রা—শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত এই উৎসবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথ টানার আনন্দে মেতে ওঠে গোটা দেশ। এই দিনে যেমন আনন্দ-উৎসব, তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধিনিষেধও রয়েছে—বিশেষ করে রথের দিনের খাওয়া দাওয়া নিয়ে। ঠিক কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কেনই বা এই নিষেধাজ্ঞা—এসব নিয়ে আজকের আলোচনা।
রথের দিনের মাহাত্ম্য ও খাওয়া দাওয়ার গুরুত্ব
রথযাত্রার দিন হিন্দুধর্মে অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত। এই দিনটি সর্বদোষমুক্ত, অর্থাৎ যেকোনো শুভ কাজ করা যায়। তবুও, কিছু নির্দিষ্ট খাবার রথের দিনে গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। শাস্ত্র মতে, এই বিধিনিষেধ মানলে জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও জগন্নাথদেবের কৃপা বজায় থাকে। অন্যদিকে, নিষিদ্ধ খাবার খেলে সংসারে অশান্তি, আর্থিক সংকট ও নানা বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।
রথের দিনের খাওয়া দাওয়া: কী কী খাবার একেবারেই খাবেন না?
কলমি শাক
রথের দিনে কলমি শাক খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ। বিশ্বাস, কলমি শাক খেলে সংসারে অশান্তি ও আর্থিক অনটন দেখা দিতে পারে। জগন্নাথদেব এতে কুপিত হন বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।
পুঁই শাক
গ্রামবাংলার প্রিয় শাক হলেও, রথের দিনে পুঁই শাক খাওয়া নিষেধ। এই শাক খেলে সংসারে বাধা-বিপত্তি আসতে পারে বলে মনে করা হয়।
তিতা জাতীয় খাবার
রথের দিনে উচ্ছে, করলা, নিমপাতা, কুলেখাড়া—এসব তিতা জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। শাস্ত্রমতে, এই ধরনের খাবার গ্রহণে শরীর খারাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং শুভফল নষ্ট হয়।
আমিষ খাবার
রথের দিনে ডিম, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন—এসব আমিষ ও রজসিক-তামসিক খাবার গ্রহণ একেবারেই নিষিদ্ধ। এতে জগন্নাথদেব রুষ্ট হন এবং জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নেশাজাতীয় দ্রব্য
মদ, গাঁজা, সিগারেট, তামাকজাত দ্রব্য—এসব কোনোভাবেই গ্রহণ করা উচিত নয়। এই ধরনের দ্রব্য গ্রহণ করলে মহাপ্রভুর রোষে পড়তে হয় বলে বিশ্বাস।
রথের দিনের খাওয়া দাওয়া নিয়ে আরও কিছু বিধিনিষেধ ও টিপস
- রথের দিনে ঝগড়া, অশান্তি, মিথ্যা বলা, চুরি—এসব কাজ থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
- উপোস পালন করলে শুধুমাত্র জল, ফল ও সাত্ত্বিক খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
- উপোস শেষে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া শ্রেয়।
রথের দিনে কী খাওয়া যায়?—রথের দিনের খাওয়া দাওয়া নিয়ে কিছু পরামর্শ
রথের দিনে সাত্ত্বিক খাবার যেমন—ভাত, ডাল, সবজি, ফল, দুধ, মিষ্টি (বিশেষ করে খিচুড়ি, পায়েস, চিঁড়ে, চির, গজা, মালপোয়া, জিলিপি, পাঁপড়)—এসব গ্রহণ করা যায়। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে এই দিন ৫৬ ভোগের আয়োজন হয়, যার বেশিরভাগই নিরামিষ ও সাত্ত্বিক।
বিশেষভাবে, বাংলার রথমেলায় জিলিপি ও পাঁপড় খাওয়ার রীতি বহুদিনের। যদিও জগন্নাথের ভোগে এই দুটি খাবার নেই, তবুও রথের আনন্দে এগুলো খাওয়ার চল রয়েছে।
কেন এই বিধিনিষেধ?—রথের দিনের খাওয়া দাওয়া নিয়ে শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা
আয়ুর্বেদ ও শাস্ত্র মতে, সাত্ত্বিক খাবার শরীর ও মনকে পবিত্র রাখে, ভক্তির পরিবেশ তৈরি করে। আমিষ ও তামসিক খাবার মন ও শরীরে অস্থিরতা, জড়তা এবং নেতিবাচকতা বাড়ায়। তাই রথের মতো পবিত্র দিনে এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
রথের দিনের খাওয়া দাওয়া: সংক্ষিপ্ত তালিকা (Do’s & Don’ts)
খাবার/পদার্থখাওয়া যাবে?মন্তব্যকলমি শাক✗সংসারে অশান্তি ডাকেপুঁই শাক✗বাধা-বিপত্তি আসতে পারেতিতা জাতীয় খাবার✗শরীর খারাপ হতে পারেআমিষ (ডিম, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন)✗জগন্নাথদেব রুষ্ট হননেশাজাতীয় দ্রব্য✗মহাপ্রভুর রোষে পড়ার আশঙ্কাফল, দুধ, মিষ্টি, ভাত, ডাল, সবজি✓সাত্ত্বিক ও পবিত্র খাবারজিলিপি, পাঁপড়✓রথের আনন্দের ঐতিহ্যবাহী খাবার
রথের দিনে খাওয়া দাওয়া নিয়ে এই বিধিনিষেধ ও পরামর্শগুলি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং সুস্থতা, শান্তি ও শুভকামনার প্রতীক। রথযাত্রার এই পবিত্র দিনে শুদ্ধ, সাত্ত্বিক ও নিরামিষ খাবার গ্রহণ করুন, নিষিদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন—জীবন ভরে উঠুক জগন্নাথদেবের আশীর্বাদে ও সুখ-সমৃদ্ধিতে।রথের দিনের খাওয়া দাওয়া মেনে চললে শুধু ধর্মীয় নিয়ম নয়, বরং নিজের ও পরিবারের মঙ্গল নিশ্চিত হয়। এই উৎসবের আনন্দে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা—শুভ রথযাত্রা!