গুরু পূর্ণিমায় কী কী করা উচিত: আপনার ভাগ্য পরিবর্তনের সুবর্ণ সুযোগ!

What should be done on Guru Purnima: আপনি কি জানেন যে বছরের একটি বিশেষ দিনে আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পারেন? হ্যাঁ, সেই দিনটি হলো গুরু পূর্ণিমা। এই পবিত্র দিনে…

Chanchal Sen

 

What should be done on Guru Purnima: আপনি কি জানেন যে বছরের একটি বিশেষ দিনে আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পারেন? হ্যাঁ, সেই দিনটি হলো গুরু পূর্ণিমা। এই পবিত্র দিনে সঠিক নিয়মে কিছু বিশেষ কাজ করলে আপনার জীবনে আসতে পারে অভূতপূর্ব সাফল্য, সমৃদ্ধি এবং মানসিক শান্তি। আষাঢ় মাসের এই পূর্ণিমা তিথিতে গুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি রয়েছে নানা আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক উপকারিতা।

গুরু পূর্ণিমার ঐতিহাসিক পটভূমি

হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব গুরু পূর্ণিমা। এই দিনটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি আমাদের জীবনে গুরুর অপরিহার্য ভূমিকাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সংস্কৃতে ‘গু’ শব্দের অর্থ অন্ধকার এবং ‘রু’ শব্দের অর্থ দূর করা। অর্থাৎ যিনি আমাদের জীবনের অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখান, তিনিই প্রকৃত গুরু।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই মুণি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর ঘরে জন্ম নেন মহর্ষি বেদব্যাস। তিনিই পরবর্তীকালে মহাভারত রচনা করেন এবং বেদগুলিকে চারটি ভাগে বিভক্ত করেন। এই কারণেই এই তিথিকে গুরু পূর্ণিমা বা ব্যাস পূর্ণিমা হিসেবে পালন করা হয়।

গুরু পূর্ণিমা ২০২৫: তারিখ ও সময়

এ বছর গুরু পূর্ণিমা পালিত হবে ১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার। পঞ্জিকা অনুযায়ী আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে ১০ জুলাই রাত ১টা ৩৭ মিনিট থেকে এবং শেষ হবে ১১ জুলাই রাত ২টা ৭ মিনিটে।

শুভ মুহূর্ত সমূহ:

  • ব্রহ্ম মুহূর্ত: সকাল ৪টা ১০ মিনিট থেকে ৪টা ৫০ মিনিট
  • অভিজীত মুহূর্ত: সকাল ১১টা ৫৯ মিনিট থেকে ১২টা ৫৪ মিনিট
  • বিজয় মুহূর্ত: দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ৩টা ৪০ মিনিট
  • গোধূলি মুহূর্ত: সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিট থেকে ৭টা ৪১ মিনিট

গুরু পূর্ণিমায় যা করা উচিত

প্রাতঃকালীন অনুষ্ঠান

গুরু পূর্ণিমার দিন সূর্যোদয়ের আগেই ঘুম থেকে উঠুন। ব্রহ্ম মুহূর্তে জেগে উঠে প্রথমে স্নান করুন। সম্ভব হলে গঙ্গাস্নান করুন, কারণ পবিত্র দিনে গঙ্গাস্নান করলে বিশেষ পুণ্য লাভ হয়। স্নানের জলে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিলে জীবনের সমস্যা কমতে শুরু করবে।

স্নানের পর পরিষ্কার কাপড় পরে সর্বপ্রথম সূর্যদেবের পুজো করুন। তামার পাত্রে জল নিয়ে সূর্যদেবকে অর্পণ করুন। জল অর্পণ করার সময় অবশ্যই সূর্যদেবের দিকে তাকান এবং খেয়াল রাখবেন যেন জলের ছিটা পায়ে না পড়ে।

গণেশ ও গুরু পূজা

সূর্য পূজার পর সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা করুন। গণেশ পূজা ছাড়া কোনো শুভ কাজ সম্পূর্ণ হয় না। তারপর আপনার গুরু বা শিক্ষকদের ছবি বা মূর্তির সামনে বসে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করুন।

গুরু পূজার জন্য বিশেষ কোনো জটিল নিয়ম নেই। তবে নিরামিষ ভোগ যেমন লুচি-সুজি, খিচুড়ি-তরকারি, পায়েস, ক্ষীর, নানা রকমের মিষ্টি অর্পণ করতে পারেন। দই, গঙ্গাজল, মধু ও শুকনো ফলের সাহায্যে চরণামৃত তৈরি করে অর্পণ করুন।

বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান ও টোটকা

লক্ষ্মী পূজা ও উপবাস

অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে গুরু পূর্ণিমার দিন উপবাস করে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করুন। বাড়ির প্রধান দরজায় মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন আঁকুন। আর্থিক সংকট দূর করতে চাইলে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালুন এবং মা লক্ষ্মীর কাছে নারকেল নাড়ু বা লাড্ডু অর্পণ করুন।

সত্যনারায়ণ পূজা

বাড়ি থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর করতে এবং কুপ্রভাব থেকে মুক্তি পেতে সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন করুন। এটি গুরু পূর্ণিমার দিন অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়।

বিশেষ টোটকা সমূহ

ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য: একটি নারকেল লাল কাপড়ে মুড়ে তাতে আটা ও সিঁদুর লাগিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে অর্পণ করুন।

গ্রহদোষ নিবারণে: একটি সাদা কাপড়ের উপর মুগ ডাল, ছোলার ডাল, আটা, কালো তিল ও কলাই রেখে নবগ্রহ যন্ত্রের কাছে রাখুন। যন্ত্রের উপর তিলক কাটতে ভুলবেন না।

ভাগ্য পরিবর্তনে: একটি প্রদীপে সর্ষের তেল, হলুদের গুঁড়ো, চাল, চিনি ও গুড় দিয়ে ভগবান বা গুরুর উদ্দেশ্যে মনের কামনা জানিয়ে প্রদীপ জ্বালান।

মন্ত্র জপ ও আধ্যাত্মিক সাধনা

গুরু পূর্ণিমার দিন গায়ত্রী মন্ত্র জপ করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এছাড়া গণেশ ও মহাদেবের নাম জপ করতে পারেন। বৃহস্পতি গ্রহের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্র জপ করলে গুরু দোষ দূর হয়।

কলাগাছের পূজা

কলাগাছের পূজা করুন কারণ এটি বৃহস্পতি গ্রহের সাথে সম্পর্কিত। কলাগাছের পূজা করলে দুর্ভাগ্য নষ্ট হয় এবং সৌভাগ্য আসে।

দান-ধ্যানের গুরুত্ব

বিশেষ দান সামগ্রী

গুরু পূর্ণিমার দিন বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কিত জিনিস দান করুন:

  • ছোলার ডাল
  • হলুদ
  • পীত রঙের ফল (আম, কলা)
  • সোনার অলংকার (সাধ্যমতো)
  • পোখরাজ রত্ন
  • কেশর দেওয়া ক্ষীর

দানের নিয়ম

দান করার আগে দেখে নিন যে, যার কাছে দান করছেন তার আসলেই কোন জিনিসের প্রয়োজন। সেই জিনিসটিই দান করুন। এতে দানের সুফল বেশি পাওয়া যায়।

গুরু পূর্ণিমার বিশেষ উপকারিতা

শিক্ষার্থীদের জন্য

ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ায় বারবার বাধার সম্মুখীন হলে গুরু পূর্ণিমার দিন ঘরে গুরু যন্ত্র স্থাপন করুন। প্রতিদিন নিয়ম মেনে এই যন্ত্রের আরাধনা করলে জ্ঞান, সম্পদ ও সমৃদ্ধি লাভ হয়।

চাকরিজীবীদের জন্য

চাকরিতে উন্নতি চাইলে গুরু পূর্ণিমার দিন হলুদ রঙের মিষ্টি তৈরি করে দান করুন। এছাড়া কিছুটা সৈন্ধব লবণ কাগজে মুড়ে মানিব্যাগে রেখে দিন।

আধুনিক যুগে গুরুর প্রাসঙ্গিকতা

আজকের ডিজিটাল যুগেও গুরু পূর্ণিমা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শুধু ধর্মীয় গুরু নয়, আমাদের জীবনের সব শিক্ষক – স্কুল-কলেজের শিক্ষক, পেশাগত গুরু, এমনকি পিতামাতাদের প্রতিও এই দিনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।

শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের কাছে গিয়ে আশীর্বাদ নিন। কর্মক্ষেত্রে যারা আপনাকে পথ দেখিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এই ঐতিহ্যবাহী প্রথা আমাদের মানসিক উন্নতি ও চরিত্র গঠনে সাহায্য করে।

সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা

গুরু পূর্ণিমার দিন কিছু কাজ এড়িয়ে চলুন:

  • মাংস, মাছ, পেঁয়াজ, রসুন জাতীয় খাবার খাবেন না
  • রাগ, ক্রোধ, হিংসা থেকে দূরে থাকুন
  • মিথ্যা কথা বলবেন না
  • কারও সাথে ঝগড়া করবেন না
  • অহংকার প্রদর্শন করবেন না

গুরু পূর্ণিমা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের জীবনে শিক্ষা ও গুরুত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগানোর একটি পবিত্র দিন। এই দিনে সঠিক নিয়মে পূজা-অর্চনা ও টোটকা করলে আপনার জীবনে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাফল্য। তাই এই পবিত্র দিনটিকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে পালন করুন এবং গুরুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।