ছাত্রদের হুঙ্কারে কেঁপে উঠল রাজপথ: কোটা আন্দোলনের অজানা কাহিনী!

What’s behind Bangladesh’s violent quota protests? বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ ধরে চলা কোটা বিরোধী আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়েছে যখন শাসক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলি ঢাকায় হামলা চালায়। সোমবার ও মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের…

Chanchal Sen

 

What’s behind Bangladesh’s violent quota protests? বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ ধরে চলা কোটা বিরোধী আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়েছে যখন শাসক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলি ঢাকায় হামলা চালায়। সোমবার ও মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল ১ জুলাই, উচ্চ আদালত সরকারী চাকরির কোটা পুনর্বহাল করার পর। এই কোটা ব্যবস্থায় এক-তৃতীয়াংশ সরকারি চাকরি সংরক্ষিত থাকে।

কেন এই আন্দোলন শুরু হলো এবং কোটা ব্যবস্থা কেন বিরোধিতার মুখে পড়েছে?

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রচলিত চাকরির কোটা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করছে, যেখানে অর্ধেকেরও বেশি আকাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরি সংরক্ষিত থাকে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নয় এবং তারা একটি মেধাভিত্তিক ব্যবস্থা চায় যা সবার জন্য ন্যায্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র ফাহিম ফারুকি বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠিত করেছে এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থন পায়নি। এই আন্দোলনটি “Students Against Discrimination” নামে পরিচিত।

আন্দোলনের সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণ কী?

৫ জুন, উচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল করার আদেশ দেয়, যা ২০১৮ সালে বাতিল করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক আন্দোলনের পর কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন। বুধবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান চত্বর ও শাহবাগ পুলিশ প্রিসিঙ্কট অবরোধ করে। এই অবরোধ কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।

বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা কী?

১৯৭২ সালে, দেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান একটি কোটা ব্যবস্থা চালু করেন, যেখানে সরকারি চাকরির একটি অংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই ব্যবস্থায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে এবং বাকি ৫৬ শতাংশ নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে: ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ মহিলাদের জন্য, ১০ শতাংশ পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য এবং ১ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য।

কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা কী চায়?

কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকরি সংরক্ষণের পক্ষে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের আন্দোলন কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয় বরং এর সংস্কারের জন্য।

সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?

সরকার দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করেছে যারা মঙ্গলবার সহিংস সংঘর্ষের সময় টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। বিভিন্ন জেলায় প্যারামিলিটারি বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যেখানে পুলিশ গুলি চালায়। স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০ জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী এবং তিনজন পুলিশও রয়েছে।

Bangladesh Quota Reform Movement: কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ, মেধাবীদের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা

কেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে?

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে কারণ তারা মনে করেন যে এই ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। বর্তমানে সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। শিক্ষার্থীরা এই ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছে এবং একটি মেধাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা চায় যা সবার জন্য ন্যায্য হবে।

২০১৮ সালে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের পর কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি উচ্চ আদালত এই ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার আদেশ দেয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে বিক্ষোভের সূত্রপাত করে। আন্দোলনকারীরা বলছেন যে এই কোটা ব্যবস্থা মূলত শাসক দলের সমর্থকদের সুবিধা দেয় এবং এটি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ কমিয়ে দেয়।

আন্দোলনের সময় সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সরকার আন্দোলন দমনে দাঙ্গা পুলিশ ও প্যারামিলিটারি বাহিনী মোতায়েন করেছে।

Bangladesh Quota Movement: রক্তাক্ত ক্যাম্পাস, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলা

শিক্ষার্থীরা দাবি করছে যে তাদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নয় এবং তারা কেবল একটি ন্যায্য নিয়োগ ব্যবস্থা চায।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছে যে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সহিংসতার জন্য দায়ী। বিসিএল সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, যারা নিজেদের ‘রাজাকার’ হিসেবে পরিচয় দেয় তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে।

 

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।