Benefits and Risks of Steroids: স্টেরয়েড একটি শক্তিশালী ওষুধ যা অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর অপব্যবহার বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই জানা প্রয়োজন কখন স্টেরয়েড উপকারী আর কখন ক্ষতিকর।
স্টেরয়েড হল হরমোন হিসাবে পরিচিত রাসায়নিকগুলির একটি মানবসৃষ্ট সংস্করণ যা মানবদেহে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। আমাদের কিডনির উপরে অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্র্যান্ডে মূলত স্টেরয়েড তৈরি হয়। এর প্রধান কাজ হল শরীরের বিভিন্ন অংশে চলমান প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন নিয়ন্ত্রণ করা।
স্টেরয়েড অনেক ক্ষেত্রেই জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। নিম্নলিখিত অবস্থাগুলিতে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়:
দীর্ঘ সময় বাইক চালালে বা দুর্ঘটনায় স্লিপ ডিস্ক হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক ফিজিওথেরাপির সাথে ৫-৭ দিনের একটি শর্ট কোর্স স্টেরয়েড দিয়ে থাকেন।
দুর্ঘটনার ফলে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হলে ৮ ঘণ্টার মধ্যে ইন্ট্রা-ভাসকুলার স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হয়। এটি রোগীকে চিরতরে পঙ্গু হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। প্রথমে ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হয়। তাতে ফল না হলে ডিপোমেডরল স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন ভারী কাজ করার জন্য বা অত্যধিক কনুইয়ের নড়াচড়ার কারণে এই রোগ হয়। চিকিৎসক ব্যথা কমানোর জন্য শর্ট অ্যাকটিং স্টেরয়েড দেন।
এটি একটি অটো ইমিউন রোগ। রোগীর জয়েন্টগুলিতে প্রদাহের কারণে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। প্রয়োজনে চিকিৎসক শর্ট অ্যাকটিং ওরাল স্টেরয়েড দেন।
বাঙালির শরীরে লুকিয়ে থাকা ঘাতক: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কেন হচ্ছে
এক্ষেত্রে কাঁধের নড়াচড়া একেবারেই কমে গিয়ে প্রায় স্টিফ হয়ে যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসক স্টেরয়েড ইনজেকশন দেন।
কিছু ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসের জন্য সিঙ্গল জয়েন্ট ডয়েলিং হয়। তখন অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসক ইন্ট্রা-আর্টিকুলার ইনজেকশন দেন।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। ফুসফুসে বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ইনফ্ল্যামেশনের কারণে অতিরিক্ত এনজাইম তৈরি হয়। স্টেরয়েড এই প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
যদিও স্টেরয়েড অনেক রোগের চিকিৎসায় কার্যকর, এর অপব্যবহার বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ক্ষতিকর হতে পারে:
দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করলে শরীরের স্বাভাবিক স্টেরয়েড উৎপাদন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এছাড়া হাড় ক্ষয়, চর্বি বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে চান? এই সহজ উপায়গুলি অবলম্বন করুন
অনেকে শারীরিক শক্তি বা পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য অবৈধভাবে স্টেরয়েড ব্যবহার করে। এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
স্টেরয়েড দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহারে মেজাজ পরিবর্তন, অবসাদ বা উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।
স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
স্টেরয়েড একটি শক্তিশালী ওষুধ যা সঠিক ব্যবহারে অনেক রোগের চিকিৎসায় কার্যকর। কিন্তু এর অপব্যবহার বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে স্টেরয়েড ব্যবহার করা উচিত। স্টেরয়েডের উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকলে এর সুফল পাওয়া যাবে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো যাবে।