Vastu Shastra wardrobe placement: ঘর সাজানোর সময় আমরা কত কিছুই না ভাবি! কোন আসবাব কোথায় রাখলে দেখতে ভালো লাগবে, ঘরের স্পেসটা ঠিকঠাক ব্যবহার করা যাবে, আর অবশ্যই বাস্তুশাস্ত্রের নিয়মগুলোও মেনে চলা যায় কিনা – এই সব কিছু নিয়েই আমাদের চিন্তা থাকে। এর মধ্যে আলমারি একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। শুধু জামাকাপড় বা দরকারি জিনিস রাখার জায়গা নয়, আলমারির সঠিক স্থান আপনার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, আলমারি কোন দিকে রাখা উচিত, তা নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।
আলমারি রাখার সঠিক দিক: বাস্তুশাস্ত্রের নিয়মকানুন
বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, আলমারি রাখার একটা নির্দিষ্ট দিক আছে, যা আপনার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে পারে। ভুল দিকে আলমারি রাখলে আর্থিক ক্ষতি বা অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কোন দিকে আলমারি রাখা ভালো:
উত্তর দিক:
- বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, উত্তর দিক কুবেরের দিক। কুবের হলেন ধনের দেবতা। তাই এই দিকে আলমারি রাখলে আপনার আর্থিক উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- উত্তর দিকে আলমারি রাখলে তা সবসময় ভর্তি রাখা উচিত। এতে আপনার ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়।
- এই দিকে আলমারি রাখলে খেয়াল রাখতে হবে যেন আলমারির মুখ দক্ষিণ দিকে না খোলে।
নবরাত্রি বাস্তু টিপস: এই ১০টি জিনিস সরান, নইলে মা হবেন অসন্তুষ্ট!
পশ্চিম দিক:
- পশ্চিম দিকে আলমারি রাখলে আপনার জীবনে স্থিতিশীলতা আসে। যারা চাকরি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কথা ভাবছেন, তারা এই দিকে আলমারি রাখতে পারেন।
- তবে, পশ্চিম দিকে আলমারি রাখলে তা যেন সবসময় পরিপাটি থাকে। নোংরা বা অগোছালো আলমারি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ দিক:
- দক্ষিণ দিকে আলমারি রাখা বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। এই দিকে আলমারি রাখলে তা আপনার আর্থিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখে এবং অপ্রত্যাশিত খরচ কমায়।
- দক্ষিণ দিকে আলমারি রাখলে তা সবসময় দেয়ালের দিকে মুখ করে রাখতে হয়।
পূর্ব দিক:
- পূর্ব দিকে আলমারি রাখা সাধারণত এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তবে, যদি আপনার অন্য কোনো উপায় না থাকে, তাহলে আলমারিটিকে দেয়াল থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখুন।
- পূর্ব দিকে আলমারি রাখলে সূর্যের আলো সরাসরি আলমারির উপর পড়ে, যা আপনার জিনিসপত্রের ক্ষতি করতে পারে।
আলমারি কেনার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত
আলমারি কেনার সময় শুধু কোন দিকে রাখবেন, সেটাই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার। নিচে কয়েকটি জরুরি বিষয় আলোচনা করা হলো:
আলমারির আকার ও স্থান:
- আলমারি কেনার আগে আপনার ঘরের আকার এবং কোথায় আলমারি রাখতে চান, তা ভালো করে মেপে নিন।
- ছোট ঘরের জন্য ছোট আলমারি এবং বড় ঘরের জন্য বড় আলমারি বেছে নিন।
- ঘর যদি ছোট হয়, তাহলে দেয়ালের সাথে লাগানো আলমারি বেছে নিতে পারেন। এতে ঘরের অনেকটা জায়গা বাঁচানো যায়।
উপকরণ:
- আলমারি সাধারণত কাঠ, স্টিল বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়। কাঠের আলমারি দেখতে সুন্দর এবং টেকসই হয়, তবে এর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
- স্টিলের আলমারি কাঠের চেয়ে হালকা এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়। তবে, এর ডিজাইন কাঠের মতো আকর্ষণীয় নাও হতে পারে।
- প্লাস্টিকের আলমারি সাধারণত হালকা ও কম দামের হয়, কিন্তু এটি খুব বেশি টেকসই হয় না।
ডিজাইন ও রঙ:
- আলমারির ডিজাইন আপনার ঘরের ভেতরের সাজসজ্জার সাথে মানানসই হওয়া উচিত।
- ঘরের দেয়ালের রঙের সাথে মিলিয়ে আলমারির রঙ বেছে নিতে পারেন। হালকা রঙের আলমারি ঘরকে উজ্জ্বল রাখে এবং বড় দেখায়।
- বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক ডিজাইনের আলমারি পাওয়া যায়, যা আপনার ঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
দরজা ও লকার:
- আলমারির দরজা ভালো করে দেখে নিন। দরজা খোলার এবং বন্ধ করার সময় যেন কোনো শব্দ না হয়।
- নিরাপত্তার জন্য আলমারিতে ভালো লকার থাকা জরুরি। লকার যত সুরক্ষিত হবে, আপনার মূল্যবান জিনিস তত নিরাপদে থাকবে।
আলমারি কোথায় রাখা উচিত নয়?
আলমারি কোথায় রাখা উচিত, তা জানার পাশাপাশি কোথায় রাখা উচিত নয়, সেটা জানাটাও জরুরি। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, কিছু স্থান আছে যেখানে আলমারি রাখা উচিত নয়:
দরজার সামনে:
- আলমারি কখনই ঘরের প্রধান দরজার সামনে রাখা উচিত নয়। এতে ঘরে আসা-যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হয় এবং নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করতে পারে।
ভেন্টিলেশন বা জানালার পাশে:
- আলমারি ভেন্টিলেশন বা জানালার পাশে রাখলে সূর্যের আলো সরাসরি আলমারির উপর পড়ে, যা আলমারির জিনিসপত্রের ক্ষতি করতে পারে।
বেডরুমের মাঝখানে:
- বেডরুমের ঠিক মাঝখানে আলমারি রাখলে ঘরের স্পেস কমে যায় এবং এটি দেখতেও খারাপ লাগে।
আদ্র স্থান:
- যেখানে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকে, সেখানে আলমারি রাখা উচিত নয়। এতে আলমারিতে থাকা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আলমারি সাজানোর টিপস
আলমারি শুধু রাখলেই হবে না, সেটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখাটাও জরুরি। সুন্দর করে সাজানো আলমারি আপনার জীবনকে আরও গোছানো করে তোলে। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
জিনিস আলাদা করুন:
- আলমারি গোছানোর প্রথম ধাপ হলো, আপনার জিনিসপত্রগুলোকে আলাদা করা। জামাকাপড়, কাগজপত্র, গয়না এবং অন্যান্য জিনিস আলাদা করে নিন।
ব্যবহার না করা জিনিস সরিয়ে ফেলুন:
- যে জিনিসগুলো আপনি আর ব্যবহার করেন না, সেগুলো আলমারি থেকে সরিয়ে ফেলুন। পুরনো জামাকাপড় বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস দান করে দিতে পারেন।
ভাজ করে রাখুন:
- জামাকাপড়গুলো সুন্দর করে ভাজ করে আলমারিতে রাখুন। এতে আলমারিতে বেশি জায়গা হবে এবং জিনিসপত্র খুঁজে পেতে সুবিধা হবে।
তাকে ব্যবহার করুন:
- আলমারিতে তাক থাকলে বিভিন্ন ধরনের জিনিস আলাদা করে রাখতে সুবিধা হয়। যেমন – একটি তাকে শুধু জামাকাপড়, অন্য তাকে বই বা কাগজপত্র রাখতে পারেন।
ছোট জিনিস বাক্সে রাখুন:
- ছোট ছোট জিনিস, যেমন – গয়না বা অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজ বাক্সে ভরে আলমারিতে রাখুন। এতে জিনিসগুলো হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
আলো ব্যবহার করুন:
- আলমারির ভেতরে ছোট লাইট ব্যবহার করতে পারেন। এতে আলমারির ভেতরের জিনিসপত্র দেখতে সুবিধা হবে।
আলমারি নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
আলমারি নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
প্রশ্ন: আলমারি কোন দিকে রাখা ভালো?
উত্তর: বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, আলমারি দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে রাখা ভালো। উত্তর দিকে রাখলে আর্থিক উন্নতির সম্ভাবনা থাকে।
প্রশ্ন: আলমারির মুখ কোন দিকে হওয়া উচিত?
উত্তর: আলমারির মুখ উত্তর বা পূর্ব দিকে হওয়া ভালো। এতে ঘরে ইতিবাচক শক্তি প্রবেশ করে।
প্রশ্ন: শোবার ঘরে আলমারি কোথায় রাখব?
উত্তর: শোবার ঘরে আলমারি দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে রাখতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, এটি যেন দরজার সামনে না থাকে।
প্রশ্ন: লোহার আলমারি কোন দিকে রাখা ভালো?
উত্তর: লোহার আলমারি দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে রাখলে ভালো। এটি আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: আলমারি কি দেয়ালের সাথে লাগানো উচিত?
উত্তর: হ্যাঁ, আলমারি দেয়ালের সাথে লাগানো ভালো। তবে, পূর্ব দিকে রাখলে দেয়াল থেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখুন।
প্রশ্ন: আলমারিতে কী রং করা উচিত?
উত্তর: হালকা রং, যেমন – সাদা, হালকা হলুদ বা হালকা সবুজ আলমারির জন্য ভালো। এই রংগুলো ঘরে পজিটিভ এনার্জি নিয়ে আসে।
প্রশ্ন: বাস্তু অনুসারে আলমারিতে কী রাখা উচিত?
উত্তর: বাস্তু অনুসারে, আলমারিতে কিছু শুভ জিনিস রাখা উচিত, যেমন – রুপোর মুদ্রা, কুবেরের ছবি বা ছোট আয়না।
প্রশ্ন: আলমারি পরিষ্কার রাখা কি জরুরি?
উত্তর: হ্যাঁ, আলমারি সবসময় পরিষ্কার রাখা জরুরি। নোংরা আলমারি নেতিবাচক শক্তি আকর্ষণ করে।
প্রশ্ন: আলমারিতে টাকা রাখার জন্য কোন দিকটি ভালো?
উত্তর: আলমারিতে টাকা রাখার জন্য উত্তর দিকটি সবচেয়ে ভালো। এই দিকে টাকা রাখলে আপনার ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়।
আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আলমারির ব্যবহার
আজকাল ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আলমারি শুধু একটি আসবাব নয়, এটি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আলমারির ব্যবহার অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ এবং কার্যকরী।
ওয়াল-ইন ক্লোজেট:
- আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ওয়াল-ইন ক্লোজেট খুব জনপ্রিয়। এটি একটি আলাদা ঘর বা স্পেসের মতো, যেখানে আপনি আপনার জামাকাপড়, জুতো এবং অন্যান্য জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারেন।
মাল্টিফাংশনাল আলমারি:
- মাল্টিফাংশনাল আলমারিগুলোতে শুধু জামাকাপড় রাখার জায়গা থাকে না, এর সাথে থাকে বই রাখার তাক, ড্রেসিং টেবিল এবং অন্যান্য সুবিধা।
স্লাইডিং ডোর আলমারি:
- ছোট ঘরের জন্য স্লাইডিং ডোর আলমারি খুব উপযোগী। এটি খোলার জন্য বেশি জায়গা লাগে না এবং দেখতেও আধুনিক।
বিল্ট-ইন আলমারি:
- বিল্ট-ইন আলমারিগুলো দেয়ালের সাথে এমনভাবে তৈরি করা হয়, যা ঘরের স্পেসকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
আলমারি: কিছু অতিরিক্ত টিপস
আলমারি নিয়ে আরও কিছু টিপস আপনার কাজে লাগতে পারে:
- আলমারিতে সুগন্ধি ব্যবহার করুন: আলমারিতে সুগন্ধি পাউডার বা সুগন্ধিযুক্ত প্যাকেট রাখলে আপনার জামাকাপড় সবসময় ফ্রেশ থাকবে।
- নিয়মিত পরিষ্কার করুন: আলমারি নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এতে ধুলো জমবে না এবং আলমারি দেখতেও ভালো লাগবে।
- আলোর ব্যবস্থা করুন: আলমারির ভেতরে আলোর ব্যবস্থা করুন, যাতে জিনিসপত্র খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।
- আলমারির উপরে কিছু রাখুন: আলমারির উপরে অপ্রয়োজনীয় জিনিস না রেখে সুন্দর কিছু শোপিস বা গাছ রাখতে পারেন।
আলমারি শুধু একটি আসবাব নয়, এটি আপনার জীবনের একটি অংশ। সঠিক দিকে আলমারি রাখলে এবং সেটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলে আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম মেনে চলুন এবং আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে মিলিয়ে আপনার আলমারিকে সুন্দর করে সাজান।