এয়ারপোর্টে সাধারণ মানুষের জন্য সিকিউরিটি চেক একটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, কিছু বিশেষ ব্যক্তি আছেন, যাদের জন্য এই নিয়ম খাটে না। তাদের গাড়ি সরাসরি প্লেনের কাছে পৌঁছে যায়, আর কোনো ধরনের নিরাপত্তা পরীক্ষার ঝামেলা পোহাতে হয় না। কারা এই বিশেষ ব্যক্তিরা? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের একটু গভীরে যেতে হবে।
বিষয়টি স্পষ্ট করতে গেলে বলা যায়, এই সুবিধা শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্যই প্রযোজ্য। ভারতের মতো দেশে এই তালিকায় রয়েছেন রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের গভর্নরের মতো গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অনুরূপ নিয়ম দেখা যায়, যেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কূটনৈতিক ব্যক্তিরা এই সুবিধা পান। এদের জন্য এয়ারপোর্টে আলাদা প্রটোকল থাকে, যা সাধারণ যাত্রীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সময়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এবার আসি ঘটনার পূর্ণ বিবরণে। যখন এই ধরনের কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এয়ারপোর্টে পৌঁছান, তখন তাদের জন্য একটি বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। সাধারণত, তাদের গাড়ি সরাসরি টার্মিনালের ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করে। এরপর গাড়িটি এয়ারক্রাফটের কাছাকাছি একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই সময়ে তাদের লাগেজ বা শরীর স্ক্যান করার কোনো প্রয়োজন হয় না। এই ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা দলের হাতে, যারা সবসময় তাদের সঙ্গে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের রাষ্ট্রপতি যখন ভ্রমণ করেন, তখন তাঁর নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) কাজ করে। এই দলটি এতটাই দক্ষ যে, এয়ারপোর্টের সাধারণ সিকিউরিটি চেকের প্রয়োজন হয় না। একইভাবে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) এই দায়িত্ব পালন করে। ফলে, এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ তাদের আলাদা করে চেক করার ঝুঁকি নেয় না।
এই বিষয়ে আরও গভীরে গেলে দেখা যায়, এই সুবিধা কেবল দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি কূটনীতিক বা রাষ্ট্রপ্রধানরাও এই সুবিধা পান। ধরা যাক, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশে এলে, তাঁকে এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেকের মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। এটি একটি আন্তর্জাতিক রীতি, যা কূটনৈতিক সম্মান ও নিরাপত্তার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এই ক্ষেত্রে একটি শর্ত থাকে—তারা যে দেশ থেকে এসেছেন, সেই দেশের সঙ্গে যদি কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো থাকে, তবেই এই সুবিধা দেওয়া হয়। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি নিয়ে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা বা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরাও এই সুবিধা পেতে পারেন।
এই ব্যবস্থার পেছনে যুক্তি খুবই স্পষ্ট। এই ব্যক্তিদের সময় খুবই মূল্যবান, এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যায় না। এয়ারপোর্টে সাধারণ সিকিউরিটি চেকের সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করা বা লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাছাড়া, তাদের সঙ্গে যে নিরাপত্তা বাহিনী থাকে, তারা ইতিমধ্যেই সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। ফলে, এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা কর্মীদের আর আলাদা করে কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য একটি আগাম প্রটোকল অনুসরণ করতে হয়। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে জানাতে হয় যে কোন সময়ে এই ব্যক্তি আসছেন, এবং তাঁর জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন।
বিষয়টির গভীরতা বোঝার জন্য আরেকটি দিক জানা দরকার। এই সুবিধা কেবল বিলাসিতা নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গেও জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি কোনো জরুরি সফরে যাচ্ছেন। এই সময়ে তাঁদের দ্রুত এবং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিকিউরিটি চেকের জন্য অপেক্ষা করলে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়তে পারে। এছাড়া, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রায়ই গোপনীয় নথি বা তথ্য থাকে, যা সাধারণ সিকিউরিটি চেকের সময় পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই তাদের জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থা।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই সুবিধা এমন কিছু মানুষের জন্য, যারা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের কাজের গুরুত্ব এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই নিয়ম করা হয়েছে। তবে এটি শুধুমাত্র তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যাদের পরিচয় এবং দায়িত্ব সরকারিভাবে স্বীকৃত। সাধারণ মানুষ বা এমনকি ধনী ব্যক্তিরা এই সুবিধা পান না। এটি একটি আইনি এবং প্রটোকল-ভিত্তিক ব্যবস্থা, যা দেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, এই বিশেষ ব্যক্তিরা যারা এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেক ছাড়াই প্লেনে উঠতে পারেন, তারা আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাদের জন্য এই ব্যবস্থা করা হলেও, সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপত্তা পরীক্ষা অপরিহার্য। কারণ, এটি আমাদের সবার নিরাপত্তার জন্যই করা হয়। তাই পরের বার এয়ারপোর্টে লাইনে দাঁড়ালে মনে রাখবেন, এই নিয়ম আপনার এবং আমার নিরাপদ ভ্রমণের জন্যই!