ভারত সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি অভিযোগের জবাবে কড়া ভাষায় বলেছে, “বিশ্ব জানে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর কোথায়।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে দিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের মূল উৎস হিসেবে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পাকিস্তান যখন ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কথা বলার চেষ্টা করছে, তখন ভারতের এই প্রতিক্রিয়া এসেছে তীব্র ও সরাসরি। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনাকে আরও একবার প্রকাশ্যে এনেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করে। এই অভিযোগে তারা দাবি করেছিল যে ভারত তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পাকিস্তানের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যে দেশ সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ব্যবহার করে, তারা এখন অন্যকে দোষারোপ করছে।” এই বক্তব্যে ভারত স্পষ্ট করে যে পাকিস্তান বহু বছর ধরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও অজানা নয়। এই ঘটনা গত সপ্তাহে প্রকাশ্যে আসে এবং তারপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাকযুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে।
বিষয়টির পটভূমি বোঝার জন্য আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই উত্তেজনা চলে আসছে। কাশ্মীর ইস্যু এই দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ হলেও, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নতুন নয়। ভারত বারবার দাবি করে এসেছে যে পাকিস্তান তার মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের ভারতে পাঠায়। উদাহরণ হিসেবে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার কথা বলা যায়, যেখানে ১০ জন সন্ত্রাসী মিলে ১৬৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। এই হামলার পর তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল যে আক্রমণকারীরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল এবং সেখানকার গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এরপর থেকে ভারতের অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আরও গভীরভাবে দেখলে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের মতো সংস্থা বারবার পাকিস্তানকে সন্ত্রাস বাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর যখন ভারতীয় সেনার ৪০ জন জওয়ান শহিদ হন, তখনও তদন্তে জৈশ-ই-মোহাম্মদ নামে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনের হাত ছিল। এই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়, যা ছিল সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংসের লক্ষ্যে। এসব ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে ভারত শুধু কথায় নয়, কাজেও তার অবস্থান জানিয়ে আসছে।
পাকিস্তান অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা দাবি করে যে ভারত তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) পাকিস্তানকে ‘গ্রে লিস্টে’ রেখেছে, যার কারণ হিসেবে সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন বন্ধে ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। এই তালিকায় থাকা মানে পাকিস্তানের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সুনামের ওপর চাপ। তবুও তারা বলে যে তারা নির্দোষ এবং ভারতই অশান্তি সৃষ্টি করছে।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে অনেকেই মনে করেন যে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও কঠোর হওয়া উচিত। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জনগণের একাংশ ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংলাপই একমাত্র পথ। কিন্তু যতক্ষণ না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে, ততক্ষণ এই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা কম।
শেষ পর্যন্ত ভারতের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াবে। দিল্লির এই তীক্ষ্ণ জবাবে স্পষ্ট যে ভারত আর নীরব থাকবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের অবস্থান দৃঢ়, এবং এই ঘটনা তারই প্রমাণ। বিশ্বের দিকে তাকিয়ে এখন দেখার বিষয়, পাকিস্তান এর জবাবে কী বলে বা করে।