ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেটের জগতে একটি জনপ্রিয় নাম, যেখানে ব্যাটসম্যানরা তাদের দুর্দান্ত শট দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। এই টুর্নামেন্টে ছক্কা মারার দক্ষতা অনেক খেলোয়াড়ের পরিচয় হয়ে উঠেছে। আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছক্কার মালিক হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্রিস গেইল। তিনি মোট ৩৫৭টি ছক্কা মেরে এই তালিকায় এক নম্বরে অবস্থান করছেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমরা এই প্রতিবেদনে জানাবো শীর্ষ দশে থাকা খেলোয়াড়দের নাম এবং তাদের অবদান সম্পর্কে।
ক্রিস গেইলের নাম আইপিএলের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ছক্কার জন্য। তিনি ১৪২টি ম্যাচে ৩৫৭টি ছক্কা মেরেছেন, যা এখনও পর্যন্ত কোনো খেলোয়াড় ছুঁতে পারেননি। গেইলের গড় স্ট্রাইক রেট ১৪৮.৯৬ এবং তিনি মোট ৪৯৬৫ রান করেছেন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬টি সেঞ্চুরি এবং ৩১টি হাফসেঞ্চুরি। ২০১৩ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে তিনি ১৭টি ছক্কা মেরেছিলেন, যা আইপিএলের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। এছাড়া ২০১২ সালে এক মৌসুমে ৫৯টি ছক্কা মেরে তিনি নিজের সেরা একক মৌসুমের রেকর্ড গড়েছেন। গেইল কলকাতা নাইট রাইডার্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর এবং পাঞ্জাব কিংসের হয়ে খেলেছেন।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ভারতের রোহিত শর্মা। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের এই অধিনায়ক ২৮০টি ছক্কা মেরেছেন। তিনি আইপিএলের প্রথম মৌসুম থেকে খেলছেন এবং মোট ৬৬২৮ রান করেছেন। তার স্ট্রাইক রেট ১৩১.১৪ এবং তিনি ৫টি শিরোপা জিতিয়েছেন মুম্বাইকে। রোহিতের ব্যাটিং শৈলী মার্জিত হলেও শক্তিশালী, যা তাকে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার খেলোয়াড় বানিয়েছে। তৃতীয় স্থানে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স। তিনি ২৫১টি ছক্কা মেরেছেন এবং তার স্ট্রাইক রেট ১৫১.৬৮। ডি ভিলিয়ার্স ৫১৬২ রান করেছেন, যার মধ্যে ৩টি সেঞ্চুরি এবং ৪০টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। তিনি দিল্লি ক্যাপিটালস এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলেছেন।
চতুর্থ স্থানে রয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, যিনি চেন্নাই সুপার কিংসের কিংবদন্তি অধিনায়ক। ধোনি ২৫২টি ছক্কা মেরেছেন ২৬৪ ম্যাচে। তার মোট রান ৫২৪৩ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৭.৫৩। তিনি ৫বার আইপিএল শিরোপা জিতেছেন। পঞ্চম স্থানে আছেন বিরাট কোহলি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের এই তারকা ২৭২টি ছক্কা মেরেছেন। তার মোট রান ৮০০৪, যা আইপিএলের সর্বোচ্চ। কোহলির স্ট্রাইক রেট ১৩১.৯৭ এবং তিনি ৮টি সেঞ্চুরি করেছেন।
এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যান ২৩৬টি ছক্কা মেরেছেন। তিনি দিল্লি ক্যাপিটালস এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলেছেন। তার মোট রান ৬৫৬৫ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৯.৭৭। সপ্তম স্থানে আছেন কাইরন পোলার্ড। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের এই তারকা ২২৩টি ছক্কা মেরেছেন। তার রান ৩৪১২ এবং স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৫০। অষ্টম স্থানে রয়েছেন সুরেশ রায়না, যিনি ২০৩টি ছক্কা মেরেছেন। তিনি চেন্নাই সুপার কিংস এবং গুজরাট লায়ন্সের হয়ে খেলেছেন।
নবম স্থানে আছেন আন্দ্রে রাসেল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই অলরাউন্ডার ২০৩টি ছক্কা মেরেছেন। তার স্ট্রাইক রেট ১৭৪.৯২, যা আইপিএলের অন্যতম সেরা। দশম স্থানে রয়েছেন শেন ওয়াটসন। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাক্তন খেলোয়াড় ১৯০টি ছক্কা মেরেছেন। তিনি রাজস্থান রয়্যালস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর এবং চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেছেন।
আইপিএলের ছক্কার এই তালিকা প্রতি মৌসুমে পরিবর্তিত হয়। ২০২৪ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অভিষেক শর্মা ৪২টি ছক্কা মেরে সেই মৌসুমের সর্বোচ্চ ছক্কা মারার খেতাব জিতেছেন। আইপিএল ২০২৪-এ মোট ১২৬০টি ছক্কা হয়েছে, যা এক মৌসুমে সর্বোচ্চ। দলগতভাবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১৬৮১টি ছক্কা মেরে শীর্ষে রয়েছে।
খেলোয়াড়দের এই ছক্কা মারার দক্ষতা আইপিএলকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। প্রতি ম্যাচে দর্শকরা বড় শটের অপেক্ষায় থাকেন। আগামী মৌসুমে কে নতুন রেকর্ড গড়বেন, সেটাই দেখার বিষয়। তবে গেইলের ৩৫৭ ছক্কার রেকর্ড ভাঙা সহজ হবে না।