Who should avoid drinking coconut water health risks: ডাবের জল একটি প্রাকৃতিক পানীয় যা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন জেনে নেই কোন কোন রোগে ডাবের জল পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
কিডনি রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের জল পান করা বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ:
- ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে
- কিডনি রোগীদের শরীরে পটাসিয়াম জমা হয়ে যায়
- এতে রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে (hyperkalemia)
- এটি হৃদযন্ত্রের ছন্দপতন ঘটাতে পারে
ডাইটিশিয়ান দিব্য গান্ধী জানান, “কিডনি রোগীদের শরীরে পটাসিয়াম নিষ্কাশন ব্যাহত হয়। তাই তাদের ডাবের জল পান থেকে বিরত থাকা উচিত।”
নারকেল জলের এমন যাদু, শরীর থাকবে পুরো ফিট
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ঝুঁকি
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ডাবের জল নিয়মিত পান করা ঠিক নয়। কারণ:
- ডাবের জলে সোডিয়াম থাকে যা রক্তচাপ বাড়াতে পারে
- এর উচ্চ পটাসিয়াম কন্টেন্ট রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে
- এতে রক্তচাপের ওঠানামা হতে পারে
পুষ্টিবিদ প্রিতিকা বেদী বলেন, “উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ডাবের জল পান না করাই ভালো, কারণ এর সোডিয়াম কন্টেন্ট রক্তচাপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।”
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাবের জল নিয়মিত পান করা ঠিক নয়। কারণ:
- ডাবের জলে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে
- এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে
- প্রতি কাপে প্রায় ৬ গ্রাম শর্করা থাকে
পুষ্টিবিদ প্রিতিকা বেদী জানান, “ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন ডাবের জল পান করা উচিত নয়। এতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।”
IBS রোগীদের জন্য সমস্যা
Irritable Bowel Syndrome (IBS) রোগীদের জন্য ডাবের জল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ:
- ডাবের জলে FODMAP নামক কার্বোহাইড্রেট থাকে
- এটি IBS রোগীদের পেটের সমস্যা বাড়াতে পারে
- ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
পুষ্টিবিদ প্রিতিকা বেদী বলেন, “IBS রোগীদের অতিরিক্ত ডাবের জল পান করা উচিত নয়। এর FODMAP কন্টেন্ট পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।”
অতিরিক্ত ব্যায়ামের পর পান করা ঠিক নয়
কঠোর ব্যায়ামের পর ডাবের জল পান করা উচিত নয়। কারণ:
- ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যায়
- ডাবের জলে লবণের পরিমাণ কম থাকে
- এতে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বিঘ্নিত হতে পারে
পুষ্টিবিদ প্রিতিকা বেদী জানান, “কঠোর ব্যায়ামের পর সাধারণ পানি পান করাই ভালো। ডাবের জলে লবণের পরিমাণ কম থাকে যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স নষ্ট করতে পারে।”
ডাবের জলের পুষ্টিগুণ
ডাবের জলের পুষ্টিগুণ নিম্নরূপ:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ মিলি) |
---|---|
ক্যালরি | ১৯ |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৭১ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.৭২ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২ গ্রাম |
পটাসিয়াম | ২৫০ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ১০৫ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ২৫ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৪ মিলিগ্রাম |
ডাবের জলের উপকারিতা
যদিও কিছু রোগীদের জন্য ডাবের জল ক্ষতিকর, সুস্থ মানুষের জন্য এর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে:
- শরীরে জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখে
- ইলেক্ট্রোলাইট পূরণ করে
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
- পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে
পুষ্টিবিদ অমন পুরী জানান, “ডাবের জল প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইটের উৎস। এটি শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।”
সতর্কতা
ডাবের জল পানের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- দৈনিক ১-২ কাপের বেশি পান করা উচিত নয়
- কিডনি রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
- ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত
- উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত
- IBS রোগীদের অল্প পরিমাণে পান করে দেখা উচিত
- কঠোর ব্যায়ামের পর সাধারণ পানি পান করাই ভালো
Diabetes and Snacking: চাঞ্চল্যকর তথ্য! ডায়াবেটিস রোগীরা মুড়ি খেলে কী
ডাবের জল একটি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর পানীয়। তবে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও IBS রোগীদের ডাবের জল পান করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সুস্থ মানুষের জন্য এটি একটি উপকারী পানীয়, তবে অতিরিক্ত পান করা থেকে বিরত থাকা ভালো। সবসময় মাত্রা বজায় রেখে ডাবের জল পান করলে এর উপকারিতা পাওয়া যাবে।