Who should avoid eating apples? : আপেল স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, হজমের সমস্যা বা অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য আপেল খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাদের জন্য আপেল খাওয়া সমস্যার কারণ হতে পারে এবং কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
যাদের জন্য আপেল খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আপেল খাওয়া সমস্যার কারণ হতে পারে। আপেলে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি মাঝারি আকারের আপেলে প্রায় ২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।তাই ডায়াবেটিস রোগীদের আপেল খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। তাদের নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপেল খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত আপেল খেলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যেতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
Fruits for Digestive: পেট পরিষ্কার রাখতে দারুণ কার্যকরী এই ৫ ফল!
হজমের সমস্যা থাকলে সাবধান
যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্যও আপেল খাওয়া সমস্যার কারণ হতে পারে। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের Irritable Bowel Syndrome (IBS) আছে তাদের জন্য আপেল খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।আপেলে FODMAP নামক একধরনের কার্বোহাইড্রেট থাকে যা IBS রোগীদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি পেটে গ্যাস, ফোলাভাব ও অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের আপেল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অ্যালার্জি থাকলে বিপদ বাড়বে
কিছু মানুষের আপেলে অ্যালার্জি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আপেল খেলে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখের চারপাশে চুলকানি, ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।বিশেষ করে যাদের বার্চ পোলেন, আলু, পিচ বা হেজেলনাটের অ্যালার্জি আছে তাদের আপেলেও অ্যালার্জি থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই অ্যালার্জি প্রবণ ব্যক্তিদের আপেল খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত। কোনো অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আপেল খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পাকস্থলীর সমস্যা
অতিরিক্ত আপেল খেলে পাকস্থলীর সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম করতে সময় লাগে। এতে পেটে গ্যাস জমতে পারে এবং পেট ফাঁপা ও ব্যথা হতে পারে।বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই পাকস্থলীর সমস্যা আছে তাদের এই সমস্যা বেশি হতে পারে। তাই প্রতিদিন ১-২টির বেশি আপেল খাওয়া উচিত নয়। আপেল খাওয়ার পর পেটে অস্বস্তি অনুভব করলে খাওয়া কমিয়ে দেওয়া উচিত।
ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
আপেলে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন নামক ফাইবার থাকে। এটি অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হজমের সমস্যা আছে তাদের এই সমস্যা বেশি হতে পারে।তাই প্রতিদিন ১-২টির বেশি আপেল খাওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত যাতে ফাইবার সহজে হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিলে আপেল খাওয়া কমিয়ে দেওয়া উচিত।
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া
আপেলে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। এটি অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।একটি মাঝারি আকারের আপেলে প্রায় ১৯ গ্রাম শর্করা থাকে। এটি খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপেল খাওয়া উচিত।
ওজন বৃদ্ধি
আপেলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। একটি মাঝারি আকারের আপেলে প্রায় ৯৫ ক্যালরি থাকে। প্রতিদিন অতিরিক্ত আপেল খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ শরীর প্রথমে কার্বোহাইড্রেট পোড়ায়, ফলে চর্বি পোড়ানো কমে যায়। তাই ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন ১টির বেশি আপেল খাওয়া উচিত নয়।
দাঁতের ক্ষতি
আপেলে অ্যাসিড থাকে যা দাঁতের ইনামেল ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে নিয়মিত আপেল খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে। এটি দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে।তাই আপেল খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত। পাশাপাশি আপেল কুচি কুচি করে কেটে খাওয়া উচিত যাতে দাঁতের সাথে কম সংস্পর্শে আসে। প্রতিদিন ১টির বেশি আপেল খাওয়া উচিত নয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির পথ কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?
সাবধানতা
আপেল খাওয়ার সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত:
- প্রতিদিন ১-২টির বেশি আপেল খাওয়া উচিত নয়
- আপেলের বীজ খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে সায়ানাইড থাকে যা বিষাক্ত
- ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা উচিত
- হজমের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
- অ্যালার্জি প্রবণ ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা উচিত
- আপেল খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের বেশি পরিমাণে আপেল খাওয়া উচিত নয়
সামগ্রিকভাবে আপেল একটি পুষ্টিকর ফল। তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই মাত্রা মেনে এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে আপেল খাওয়া উচিত। কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।