অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় সরকার ৫৯ জন সদস্য নিয়ে সাতটি প্রতিনিধিদল গঠন করেছে। এই দলগুলি ৩২টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতর সফর করবে। প্রতিনিধিদলে শাসক বিজেপি এবং বিরোধী দল সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। ২০ মে থেকে এই বিদেশ সফর শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দেশের স্বার্থে রাজনীতি ভুলে বিরোধীদেরও আপন করে নিতে কুণ্ঠিত হননি। এই প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে ভারত বোঝাতে চাইছে যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে দেশ এককাট্টা, তেমনই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের প্ররোচনামূলক আচরণও তুলে ধরতে চাওয়া হচ্ছে।
সাতটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বের নাম শনিবার ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক। এই সাত দলের নেতৃত্ব দেবেন যথাক্রমে কংগ্রেসের শশী তারুর, বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ, জেডিইউয়ের সঞ্জয়কুমার ঝা, বিজেপির বৈজয়ন্ত পাণ্ডা, তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির কন্যা ডিএমকে-র কানিমোঝি করুণানিধি, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের পুত্র শিবসেনার শ্রীকান্ত শিন্ডে।
প্রতিটি প্রতিনিধিদলে পাঁচ থেকে ছয়জন করে সদস্য থাকবেন। বাংলার দু’জন সাংসদকেও এই মিশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান এবং রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য এই দু’জন প্রতিনিধি। ইউসুফ পাঠান আছেন সঞ্জয়কুমারের দলে, আর শমীক ভট্টাচার্যকে রাখা হয়েছে রবিশঙ্কর প্রসাদের দলে।
উল্লেখ্য যে, লোকসভার তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এই দলে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি যেতে পারছেন না বলে জানা গিয়েছে।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজেজু কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব), এনসিপি (শরদ), এসপি, ডিএমকে-র মতো বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। গত সপ্তাহেই তিনি বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠানের দলটি ২১ মে বিকেলে যাত্রা শুরু করবে। তিনি যে দলে থাকবেন, তার নেতৃত্বে রয়েছেন আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং। এই দলটি মোট তিনটি দেশে গিয়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করবে।
পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংক্রান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের কাছে ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে এই অভিনব পন্থা নিল মোদী সরকার। প্রচলিত কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর এই পদক্ষেপ বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
সাতটি দলে ৫৯ জন সদস্যের অধিকাংশই রাজনীতিবিদ, এছাড়া কয়েকজন কূটনীতিককেও দলে রাখা হয়েছে। মণীশ তিওয়ারি, শশী তারুর, প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী, অনুরাগ ঠাকুর, সস্মিত পাত্র, শ্রীকান্ত শিন্ডের মতো বিভিন্ন দলের সাংসদরা এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
এই প্রতিনিধিদল আমেরিকা, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-সহ বিভিন্ন দেশে যাবেন। বিশেষ উল্লেখ্য, শশী তারুর ব্রাজিল সফরে যাবেন, আর এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি সৌদি আরব যাবেন বলে জানা গিয়েছে।
সব দলের প্রতিনিধিদের মোট সাতটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলে পাঁচ থেকে ছ’জন করে সদস্য থাকছেন। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতর সহ মোট ৩২টি দেশে সফর করবেন।
এই প্রতিনিধিদল পাঠানোর মাধ্যমে ভারত এই বার্তা দিতে চাইছে যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল মতভেদ ভুলে একসঙ্গে লড়াই করছে। পাশাপাশি, অপারেশন সিঁদুরের পর থেকে পাকিস্তান যে উস্কানিমূলক আচরণ করছে, তাও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা হবে।
রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে দেশের স্বার্থে একত্রিত হওয়ার এই পদক্ষেপকে ভারতীয় কূটনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিরোধী দল থেকে শাসকদল – সকলেই এই মিশনে অংশগ্রহণ করছে, যা দর্শায় যে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একমত।
উল্লেখ্য যে, এই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে বোঝাতে এবং অপারেশন সিঁদুরের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বলবেন। প্রতিনিধিদল অন্যান্য দেশের সরকারগুলিকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে অনুরোধ করবেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদক্ষেপ। এতে করে অন্যান্য দেশগুলি বুঝতে পারবে যে ভারতের জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। সাম্প্রতিক পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলা এবং তার পরে ভারতের অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণ করে যে ভারত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।