আন্দোলনে নিহত পুলিশ কর্মীর মৃত্যু: দায় কার?

খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একজন পুলিশ কর্মী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ কর্মীর মৃত্যুর দায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনকারীরা যেমন তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন, তেমনি পুলিশও তাদের…

Ishita Ganguly

 

খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একজন পুলিশ কর্মী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ কর্মীর মৃত্যুর দায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনকারীরা যেমন তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন, তেমনি পুলিশও তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এই পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছেগত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে খুলনার গল্লামারী কাঁচাবাজারে এই ঘটনা ঘটে। নিহত পুলিশ কর্মীর নাম সুমন কুমার ঘরামী (৩৩)। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন।খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, “সুমন নামের আমাদের একজন কনস্টেবল মারা গেছেন। আমাদের ২০ থেকে ২৫ জন গুরুতর আহত। সুমন পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন।”পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, “সারা দিন তো আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিলাম। আমরা ফাঁকা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছাড়া কিছু মারিনি। কিন্তু তারা তো মানল না। ২০-২৫ দিন ধরে আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি। অথচ তারা আমাদের লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলল।”এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আন্দোলনকারীদের দিকে প্রশ্ন উঠেছে যে তারা কেন এমন চরম পন্থা অবলম্বন করলেন। অন্যদিকে, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আন্দোলনের পটভূমি:

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং পুলিশ-আন্দোলনকারী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি:

কোটা আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি বাংলার একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি
। হাসপাতালগুলো থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য বা পরিসংখ্যান জানাতে পারেনিতবে, বিবিসি বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী:

  • কোটা আন্দোলনে মৃতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৭ বছর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে
  • পেশা বিবেচনায় নিহতদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। দিনমজুর, দোকানকর্মী, গাড়িচালক, রিকশা-ভ্যানচালক, পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ অন্তত ৬৫ জন শ্রমজীবী নিহত হয়েছেন।
  • চারজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুজন গুলিতে এবং দুজন ছররা বুলেটে আহত হয়ে মারা গেছেন।

দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন:

 

এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কর্মীদের মৃত্যুর দায় কে নেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ প্রশাসনের অংশ হিসেবে তাদের জীবনের মূল্য কি কম? এই প্রশ্নগুলি সমাজের বিভিন্ন মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের দিকেও প্রশ্ন উঠেছে। তাদের আন্দোলন যথার্থ হলেও, হিংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করা কতটা যুক্তিযুক্ত? সাধারণ মানুষের এই প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ।
কর্তৃপক্ষের অবস্থান:
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মহিদ উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “এই যে এত সহিংসতা, সংঘাত, নৈরাজ্য, মৃত্যু- এর দায় কে নেবে?” তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় বলে আসছি, ছাত্ররা ভুল করছে, ভুল পথে চলছে। আমরা মনে করি, ছাত্ররা সরে যাবে। তাদের যদি কিছু বলার থাকে তাহলে তারা কোর্টে এসে বলতে পারে। রাস্তা অবরোধ করে দাবি আদায়, এটা সঠিক পথ নয়।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:


বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, “ঢাকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভে শত শত আহত হওয়ার যেসব রিপোর্ট পেয়েছি, তা নিয়ে আমরা সচেতন আছি। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।”

সম্ভাব্য প্রভাব:

এই ধরনের সহিংস ঘটনা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে:
  1. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
  2. সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি
  3. অর্থনৈতিক ক্ষতি
  4. শিক্ষা ব্যবস্থায় বিঘ্ন
  5. আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব
বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনে পুলিশ কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে জটিল প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ কর্মীদের নিরাপত্তা, আন্দোলনকারীদের দাবি, এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থ – এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।সমাধানের জন্য সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতভেদ মিটিয়ে ফেলা প্রয়োজন। সরকার, আন্দোলনকারী এবং সাধারণ নাগরিক – সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তবে এটা স্পষ্ট যে, কোনো পরিস্থিতিতেই হিংসা বা আইন হাতে তুলে নেওয়া সমর্থনযোগ্য নয়।
About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।