Why Do Babies Cry Immediately After Birth: একটি শিশুর জন্ম পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। নবজাতকের আগমনে পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু একটি বিষয় প্রায় সকলেরই মনে প্রশ্ন জাগায় – শিশুরা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই কেন কেঁদে ওঠে? এই কান্নার শব্দ একদিকে যেমন স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে, তেমনই এর পেছনের কারণগুলোও অত্যন্ত গভীর এবং বৈজ্ঞানিক। শিশুর প্রথম কান্না কেবল একটি আবেগ বা কষ্টের প্রকাশ নয়, বরং এটি তার বেঁচে থাকার জন্য একটি অপরিহার্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। মাতৃগর্ভের নিরাপদ, উষ্ণ এবং তরল-পূর্ণ পরিবেশ থেকে বাইরের পৃথিবীর শুষ্ক, শীতল এবং কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে আগমনের যে বিশাল পরিবর্তন, সেই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপই হলো এই কান্না। এই কান্না নিশ্চিত করে যে, শিশুর শ্বাসতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ শুরু করেছে এবং সে প্রথমবারের মতো বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
জন্মের পর প্রথম কান্নাটি মূলত একটি জটিল শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার ফল, যা শিশুর বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। MedlinePlus-এর তথ্য অনুযায়ী, একটি শিশু জন্মের প্রায় ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই তার প্রথম শ্বাস নেয়, যা একটি গ্যাসের মতো শোনায়। এই শ্বাসটিই কান্নার আকারে বেরিয়ে আসে। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন শিশুর ফুসফুস অ্যামনিওটিক তরলে পূর্ণ থাকে এবং তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মায়ের প্লাসেন্টা বা অমরার মাধ্যমে রক্তে বাহিত হয়। জন্মের পর যখন নাড়ি কাটা হয়, তখন প্লাসেন্টার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, শিশুর রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই রাসায়নিক পরিবর্তন শিশুর মস্তিষ্কের শ্বাস-প্রশ্বাস কেন্দ্রকে (respiratory center) উদ্দীপ্ত করে, যা তাকে শ্বাস নেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী সংকেত পাঠায়। এই সংকেতের প্রতিক্রিয়ায় শিশু একটি গভীর শ্বাস নেয় এবং সেই বাতাস যখন তার স্বরযন্ত্র (larynx) দিয়ে বেরিয়ে আসে, তখন কান্নার শব্দ তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াটি ফুসফুস থেকে জমে থাকা তরল পরিষ্কার করতে এবং বায়ুথলিগুলোকে (alveoli) फुलाতে সাহায্য করে, যা কার্যকরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস শুরু করার জন্য অপরিহার্য। তাই, শিশুর প্রথম কান্না তার সুস্থতার একটি শক্তিশালী প্রমাণ এবং নতুন পরিবেশে তার সফল অভিযোজনের প্রথম চিহ্ন।
গর্ভের আরামদায়ক পরিবেশ থেকে নতুন জগতে আগমন
শিশুর প্রথম কান্নার পেছনের বিজ্ঞান বুঝতে হলে প্রথমে মাতৃগর্ভের পরিবেশ এবং বাইরের পৃথিবীর পরিবেশের মধ্যেকার পার্থক্যটা বোঝা জরুরি। একটি শিশু তার জীবনের প্রথম নয় মাস মায়ের গর্ভে একটি সুরক্ষিত, শান্ত এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাটায়। সেখানে সে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড নামক এক ধরনের তরলের মধ্যে ভেসে থাকে, যার তাপমাত্রা প্রায় ৯৮.৬° ফারেনহাইট (৩৭° সেলসিয়াস) থাকে, যা মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সমান। এই পরিবেশে তার কোনো কিছুর জন্যই ভাবতে হয় না। খাবার, অক্সিজেন সবকিছুই মায়ের শরীর থেকে প্লাসেন্টার মাধ্যমে সরাসরি তার শরীরে প্রবেশ করে। সেখানে কোনো উজ্জ্বল আলো নেই, নেই কোনো জোরালো শব্দ, এমনকি মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও সেভাবে অনুভূত হয় না।
কিন্তু জন্মের মুহূর্তে সবকিছু নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। প্রসবের প্রক্রিয়াটি শিশুর জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। হঠাৎ করেই তাকে তার উষ্ণ এবং তরল জগৎ থেকে টেনে বের করে আনা হয় এক সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে। এই নতুন পরিবেশের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- তাপমাত্রার পরিবর্তন: ডেলিভারি রুমের তাপমাত্রা সাধারণত ৬৫-৭৫° ফারেনহাইট (১৮-২৪° সেলসিয়াস) থাকে, যা গর্ভের ভেতরের তাপমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এই আকস্মিক শীতলতা শিশুর ত্বকে একটি শক বা ধাক্কার মতো কাজ করে, যা তার স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং শ্বাস নিতে উৎসাহিত করে।
- স্পর্শ ও চাপ: জন্মের সময় শিশু প্রথমবারের মতো সরাসরি স্পর্শ এবং বাতাসের চাপ অনুভব করে। চিকিৎসক বা নার্সের হাত, তোয়ালের স্পর্শ—এই সবই তার কাছে নতুন সংবেদন। প্রসবের সময় জন্ম নালী (birth canal) দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তার শরীর যে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করে, তাও ফুসফুস থেকে তরল বের করে দিতে সাহায্য করে।
- আলো ও শব্দ: গর্ভের আবছা অন্ধকারের পর ডেলিভারি রুমের উজ্জ্বল আলো এবং কোলাহল শিশুর সংবেদনশীল ইন্দ্রিয়গুলোর জন্য অত্যন্ত তীব্র। এই সংবেদনশীল অভিঘাত (sensory overload) তাকে চমকে দেয় এবং একটি কান্নার প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
- অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা: সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি ঘটে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের পদ্ধতিতে। গর্ভে থাকাকালীন সে নিঃশ্বাস নিত না, কারণ তার ফুসফুস তরলে পূর্ণ ছিল। কিন্তু জন্মের পর তাকে নিজের ফুসফুস ব্যবহার করে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে হয়। এই রূপান্তরটিই তার প্রথম কান্নার মূল চালিকাশক্তি।
এই সমস্ত পরিবর্তন শিশুর শরীরে একটি স্ট্রেস রেসপন্স তৈরি করে, যার ফলে অ্যাড্রেনালিন এবং অন্যান্য স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলোও তাকে প্রথম শ্বাস নিতে এবং নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। তাই, জন্মের মুহূর্তটি শিশুর জন্য একটি বিশাল শারীরিক এবং সংবেদনশীল চ্যালেঞ্জ, এবং তার প্রথম কান্না এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলারই একটি প্রতিচ্ছবি।
প্রথম নিঃশ্বাস, প্রথম কান্না: শ্বাসতন্ত্রের বিস্ময়কর সূচনা
শিশুর প্রথম কান্না এবং তার প্রথম নিঃশ্বাস একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি কেবল একটি শব্দ নয়, বরং একটি জটিল যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা শিশুর শ্বাসতন্ত্রকে প্রথমবারের মতো সক্রিয় করে তোলে। এই প্রক্রিয়াটিকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করে বোঝা যেতে পারে।
ফুসফুসের তরল পরিষ্কার করা
মাতৃগর্ভে শিশুর ফুসফুস কাজ করে না, বরং এটি অ্যামনিওটিক তরলে পূর্ণ থাকে। এই তরল ফুসফুসের বিকাশে সহায়তা করে। জন্মের ঠিক আগে এবং প্রসবের সময়, শিশুর শরীর হরমোনের প্রভাবে এই তরলের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ফুসফুস থেকে এটি শোষণ করতে শুরু করে। জনস হপকিন্স মেডিসিনের মতে, স্বাভাবিক প্রসবের সময় জন্ম নালীর চাপ শিশুর বুককে সংকুচিত করে, যা ফুসফুস থেকে অনেকটা তরল বের করে দেয়, অনেকটা স্পঞ্জ থেকে জল নিংড়ে ফেলার মতো।
জন্মের পর শিশু যখন প্রথম শ্বাস নেয়, যা কান্নার আকারে প্রকাশিত হয়, তখন সে ফুসফুসের ভেতরে একটি শক্তিশালী নেতিবাচক চাপ তৈরি করে। এই চাপ বাকি তরলকে বায়ুথলি (alveoli) থেকে বের করে দেয় এবং সেই জায়গায় বাতাস প্রবেশ করে। এই বাতাসই বায়ুথলিগুলোকে ফুলিয়ে দেয় এবং গ্যাস বিনিময়ের (অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ) জন্য প্রস্তুত করে। কান্না যত জোরালো হয়, ফুসফুস তত ভালোভাবে পরিষ্কার হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস তত মসৃণভাবে শুরু হয়।
রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার পরিবর্তন
জন্মের মুহূর্তে শিশুর রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। গর্ভে থাকাকালীন শিশুর সংবহনতন্ত্র (fetal circulation) প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে। যেহেতু ফুসফুস কাজ করে না, তাই ফুসফুসে রক্ত প্রবাহ খুব কম থাকে। প্লাসেন্টা থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং দুটি বিশেষ সংযোগ বা শান্ট (shunt) – ফোরামেন ওভাল (Foramen Ovale) এবং ডাক্টাস আর্টেরিওসাস (Ductus Arteriosus) – এর মাধ্যমে ফুসফুসকে এড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
জন্মের পর যখন শিশু প্রথম শ্বাস নেয় এবং তার ফুসফুস বাতাসে পূর্ণ হয়, তখন ফুসফুসের রক্তনালীগুলোতে চাপ dramatic ভাবে কমে যায়। এর ফলে, রক্ত ফুসফুসের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ফুসফুসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ডাক্টাস আর্টেরিওসাস সংকুচিত হতে শুরু করে এবং জন্মের কয়েক ঘণ্টা বা দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে, ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ডের বাম অলিন্দে ফিরে আসার কারণে সেখানে চাপ বেড়ে যায়, যা ফোরামেন ওভালকে বন্ধ করে দেয়। এই পরিবর্তনগুলোর ফলে শিশুর সংবহনতন্ত্র প্রাপ্তবয়স্কদের মতো একটি ধারাবাহিক সার্কিটে রূপান্তরিত হয়, যেখানে হৃৎপিণ্ড ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে সারা শরীরে পাঠায়। এই পুরো রূপান্তর প্রক্রিয়াটি শুরু হয় সেই প্রথম কান্না বা প্রথম শ্বাসের মাধ্যমে।
কেন কান্নাটি এত গুরুত্বপূর্ণ? চিকিৎসা বিজ্ঞানের চোখে
নবজাতকের প্রথম কান্না কেবল পিতামাতার জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস নয়, এটি চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যেও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি শিশুর স্বাস্থ্য এবং নতুন পরিবেশে তার অভিযোজন ক্ষমতা মূল্যায়নের একটি প্রাথমিক এবং দ্রুত উপায়।
অ্যাপগার স্কোর (Apgar Score)
জন্মের ঠিক ১ মিনিট এবং ৫ মিনিট পর নবজাতকের স্বাস্থ্য মূল্যায়নের জন্য একটি দ্রুত পরীক্ষা করা হয়, যা অ্যাপগার স্কোর নামে পরিচিত। এই স্কোরটি ১৯৫২ সালে ডক্টর ভার্জিনিয়া অ্যাপগার তৈরি করেন। এটি পাঁচটি বিষয় মূল্যায়ন করে, যার প্রতিটির জন্য ০, ১ বা ২ স্কোর দেওয়া হয়। এই পাঁচটি বিষয় হলো:
- Appearance (Skin Color): ত্বকের রঙ।
- Pulse (Heart Rate): হৃৎস্পন্দনের হার।
- Grimace (Reflex Irritability): উদ্দীপনায় সাড়া (যেমন-হালকা চিমটি)।
- Activity (Muscle Tone): পেশীর সক্রিয়তা।
- Respiration (Breathing Effort): শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রচেষ্টা।
NCBI দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, একটি জোরালো কান্না অ্যাপগার স্কোরে দুটি বিভাগে উচ্চ পয়েন্ট পেতে সাহায্য করে। “Respiration” বিভাগে একটি শক্তিশালী কান্না ২ স্কোর নির্দেশ করে, যা বোঝায় শিশুটি ভালোভাবে শ্বাস নিচ্ছে। “Grimace” বা উদ্দীপনায় প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও একটি জোরালো কান্না বা হাঁচি-কাশি ২ স্কোর নির্দেশ করে। একটি উচ্চ অ্যাপগার স্কোর (৭ থেকে ১০) সাধারণত নির্দেশ করে যে শিশুটি সুস্থ আছে এবং তার বিশেষ কোনো তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তাই, শিশুর প্রথম কান্না তার সামগ্রিক সুস্থতার একটি নির্ভরযোগ্য প্রাথমিক নির্দেশক।
অ্যাপগার স্কোর উপাদান | ০ স্কোর | ১ স্কোর | ২ স্কোর |
Appearance (ত্বকের রঙ) | নীল বা ফ্যাকাশে | শরীর গোলাপি, হাত-পা নীল | সম্পূর্ণ শরীর গোলাপি |
Pulse (হৃৎস্পন্দন) | অনুপস্থিত | প্রতি মিনিটে ১০০-এর কম | প্রতি মিনিটে ১০০-এর বেশি |
Grimace (প্রতিক্রিয়া) | কোনো সাড়া নেই | মুখ বিকৃত করা | কান্না, কাশি বা হাঁচি |
Activity (পেশীর সক্রিয়তা) | শিথিল, নিস্তেজ | হাত-পা কিছুটা ভাঁজ করা | সক্রিয় নড়াচড়া |
Respiration (শ্বাস-প্রশ্বাস) | অনুপস্থিত | ধীর, অনিয়মিত, দুর্বল | ভালো, জোরালো কান্না |
একটি সুস্থতার লক্ষণ
একটি জোরালো, প্রাণবন্ত কান্না সাধারণত নির্দেশ করে যে:
- শিশুর স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করছে।
- তার ফুসফুস শক্তিশালী এবং কার্যকরভাবে কাজ শুরু করেছে।
- তার পেশীর টোন (muscle tone) ভালো।
এই কান্নাটি স্বাস্থ্যকর্মীদের আশ্বস্ত করে যে শিশুটি বাইরের পরিবেশে শ্বাস নেওয়ার মতো কঠিন কাজটি সফলভাবে শুরু করতে পেরেছে।
যদি শিশু জন্মের পর না কাঁদে?
যদিও বেশিরভাগ শিশুই জন্মের সাথে সাথে কেঁদে ওঠে, কিছু সুস্থ শিশুও কাঁদতে সামান্য দেরি করতে পারে। এটি সব সময় বিপদের লক্ষণ নয়। কিছু সম্ভাব্য কারণ হলো:
- শান্তিপূর্ণ জন্ম: কিছু ক্ষেত্রে, যেমন ওয়াটার বার্থ বা খুব শান্ত পরিবেশে জন্ম হলে, শিশুরা কম স্ট্রেস অনুভব করে এবং সাথে সাথে না-ও কাঁদতে পারে। তারা যদি শান্তভাবে শ্বাস নেয়, তাদের ত্বকের রঙ ভালো থাকে এবং হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে, তবে চিন্তার কারণ নেই।
- সিজারিয়ান সেকশন (C-Section): সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুরা স্বাভাবিক প্রসবের মতো জন্ম নালীর চাপ অনুভব করে না। ফলে তাদের ফুসফুসে কিছুটা বেশি তরল থেকে যেতে পারে, যা শ্বাস-প্রশ্বাস শুরু করতে এবং কাঁদতে সামান্য বিলম্ব ঘটাতে পারে।
- মায়ের ওষুধ: প্রসবের সময় মাকে দেওয়া কিছু ব্যথানাশক বা অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাব শিশুর উপর পড়তে পারে, যার ফলে সে কিছুটা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং কাঁদতে দেরি করতে পারে।
- জন্মকালীন জটিলতা: কিছু ক্ষেত্রে, যেমন নাড়ি গলায় পেঁচিয়ে যাওয়া বা জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট (birth asphyxia), শিশু অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে কাঁদতে পারে না। এটি একটি গুরুতর অবস্থা এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।
যদি কোনো শিশু জন্মের পর না কাঁদে বা শ্বাস নিতে কষ্ট করে, তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তারা শিশুকে আলতো করে ঘষে বা পিঠে চাপড় দিয়ে উদ্দীপিত করার চেষ্টা করেন। প্রয়োজন হলে, একটি সাকশন টিউব ব্যবহার করে তার মুখ এবং নাক থেকে তরল বা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে, শিশুকে শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করার জন্য অক্সিজেন বা অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
কান্নার ভাষা: যোগাযোগের প্রথম মাধ্যম
শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনীয়তা ছাড়াও, শিশুর প্রথম কান্না তার যোগাযোগের প্রথম প্রচেষ্টা। গর্ভের শান্ত পরিবেশ থেকে হঠাৎ করে একটি কোলাহলপূর্ণ, ঠান্ডা এবং উজ্জ্বল জগতে এসে সে যে হতচকিত এবং অস্বস্তি বোধ করে, তা প্রকাশ করার একমাত্র উপায় হলো কান্না। Nemours KidsHealth অনুযায়ী, কান্না হলো নবজাতকের ভাষা। এর মাধ্যমে সে তার বিভিন্ন চাহিদা এবং অনুভূতি প্রকাশ করে, যেমন:
- আমি ক্ষুধার্ত: ক্ষুধা নবজাতকের কান্নার অন্যতম প্রধান কারণ।
- আমার অস্বস্তি হচ্ছে: ভেজা ডায়াপার, খুব গরম বা খুব ঠান্ডা লাগা।
- আমি ক্লান্ত: অতিরিক্ত উদ্দীপনা বা ঘুমের প্রয়োজন।
- আমাকে ধরো: নিরাপত্তা এবং উষ্ণতার জন্য মায়ের স্পর্শের আকুতি।
জন্মের প্রথম কান্নাটি মূলত একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিচ্ছবি (reflex), কিন্তু খুব শীঘ্রই শিশু শিখে যায় যে কান্নার মাধ্যমে সে তার চারপাশের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে এবং তার চাহিদা পূরণ করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে, পিতামাতারাও তাদের শিশুর কান্নার বিভিন্ন ধরণ এবং তার অর্থ বুঝতে শুরু করেন, যা তাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে।
জন্মের পর শিশুর প্রথম কান্না একটি অলৌকিক এবং জটিল প্রক্রিয়া। এটি কেবল একটি শব্দ নয়, বরং জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে একটি সেতু। এই কান্না ঘোষণা করে যে, একটি নতুন জীবন পৃথিবীর বুকে তার প্রথম স্বাধীন নিঃশ্বাস নিয়েছে। এটি একটি বহুমুখী ঘটনা যা শিশুর শ্বাসতন্ত্রকে সক্রিয় করে, তার রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজায় এবং তাকে বাইরের পৃথিবীর চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য প্রস্তুত করে। চিকিৎসকদের জন্য এটি শিশুর সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন এবং পিতামাতার জন্য এটি একটি স্বস্তিদায়ক সুর। সুতরাং, পরের বার যখন কোনো নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনবেন, তখন জানবেন যে এটি কেবল একটি কান্না নয়; এটি জীবনের জয়গান, একটি নতুন সূচনার শক্তিশালী ঘোষণা।