বাংলার গর্ব, বন্ধন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর ঘোষ হঠাৎ করেই স্বেচ্ছাবসরের ঘোষণা করলেন। এই খবরে আর্থিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? আসুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
চন্দ্রশেখর ঘোষ নিজেই জানিয়েছেন তাঁর অবসরের কারণ। তিনি বলেছেন, “প্রায় এক দশক ধরে ব্যাংকের কার্য পরিচালনা করেছি। সেই সঙ্গে টানা তিন বছর বছরের মেয়াদে এমডি এবং সিইও থেকেছি। তবে এখন আমি মনে করি যে, এবার আমার জন্য বন্ধন গ্রুপ স্তরে একটি বৃহত্তর কৌশলগত ভূমিকা গ্রহণ করার সময় এসে গিয়েছে।”[3]
এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, চন্দ্রশেখর ঘোষ বন্ধন ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা থেকে সরে এসে, সমগ্র বন্ধন গ্রুপের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণে মনোনিবেশ করতে চান।
চন্দ্রশেখর ঘোষ আগামী ৯ জুলাই, ২০২৪ তারিখে বন্ধন ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদ থেকে অবসর নেবেন। এই তথ্য তিনি নিজেই জানিয়েছেন ব্যাংকের বোর্ডকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে।
চন্দ্রশেখর ঘোষের নেতৃত্বে বন্ধন ব্যাংক অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৫ সালের ২৩ অগাস্ট যাত্রা শুরু করা এই ব্যাংক মাত্র ৯ বছরে বিপুল উন্নতি করেছে:
1. ৩১ মার্চ, ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাংকের আমানত দাঁড়িয়েছে ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা।
2. একই সময়ে অগ্রিম ঋণের পরিমাণ ১.২৮ লক্ষ কোটি টাকা।
3. বর্তমানে বন্ধন ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি।
4. ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন ৭৫ হাজার কর্মী।
১৯৬০ সালে ত্রিপুরার আগরতলায় জন্মগ্রহণ করেন চন্দ্রশেখর ঘোষ। তাঁর জীবন যাত্রা শুরু হয়েছিল অতি সাধারণভাবে। ছোটবেলায় দুধ বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। পরবর্তীতে মাত্র দুই লক্ষ টাকা ধার করে শুরু করেন ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবসা। সেই ব্যবসা থেকেই জন্ম নেয় বন্ধন।
Secrets of Dropshipping: ভারতীয় ই-কমার্স বাজারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার ড্রপশিপিং
চন্দ্রশেখর ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি এখন বন্ধন গ্রুপের নীতি ও কৌশল নির্ধারণকারীর ভূমিকায় কাজ করতে চান। এর মাধ্যমে তিনি সমগ্র বন্ধন গ্রুপকে আরও উচ্চতর লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চান।[4]
চন্দ্রশেখর ঘোষ শুধু একজন সফল ব্যাংকার নন, তিনি বাঙালি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাঙালিরাও সফল ব্যবসায়ী হতে পারে। তাঁর নেতৃত্বে বন্ধন ব্যাংক শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, সমগ্র পূর্ব ভারতের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
চন্দ্রশেখর ঘোষ এর পরবর্তী পরিকল্পনা কী
চন্দ্রশেখর ঘোষের অবসর গ্রহণের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কৌতূহল রয়েছে। বন্ধন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও এমডি হিসেবে দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে নেতৃত্ব দেওয়ার পর, ঘোষ এখন নতুন একটি কৌশলগত ভূমিকা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত।
চন্দ্রশেখর ঘোষ তাঁর অবসরের পর বন্ধন গ্রুপের স্তরে একটি বৃহত্তর কৌশলগত ভূমিকা গ্রহণ করবেন। তিনি নিজেই বলেছেন, “আমি মনে করি এখন সময় এসেছে বন্ধন গ্রুপ স্তরে একটি বৃহত্তর কৌশলগত ভূমিকা গ্রহণ করার।” এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি বন্ধন গ্রুপের সমগ্র কার্যক্রমের কৌশল নির্ধারণে মনোনিবেশ করতে চান, যা ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত।
চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেছেন যে তিনি আগামী তিন মাস ধরে ব্যাংকের নতুন নেতৃত্বকে সহায়তা করবেন এবং তাদেরকে ব্যাংকের পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। তিনি বলেন, “বন্ধন আমার সন্তান। আমি এটিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। আমি সিদ্ধান্ত নিতে চাই কিভাবে আমার সন্তানকে রক্ষা করা যাবে এবং সেই অনুযায়ী আমি অবসর নেব।” এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি ব্যাংকের নতুন নেতৃত্বকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
চন্দ্রশেখর ঘোষের নেতৃত্বে বন্ধন গ্রুপ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বন্ধন ব্যাংকের পাশাপাশি বন্ধন লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং বন্ধন মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথেও যুক্ত রয়েছেন। তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি এই সমস্ত ব্যবসায়িক উদ্যোগের কৌশলগত দিকগুলি নির্ধারণে মনোনিবেশ করবেন।
বন্ধন ব্যাংক ইতিমধ্যেই নতুন এমডি এবং সিইও নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ব্যাংকের বোর্ড একটি স্ক্রিনিং এবং সিলেকশন কমিটি গঠন করেছে, যা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচন করবে এবং রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করবে। নতুন নেতৃত্বের অধীনে ব্যাংকটি আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে
চন্দ্রশেখর ঘোষ এর পরবর্তী পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য কী
চন্দ্রশেখর ঘোষের পরবর্তী পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যগুলি নিম্নলিখিত:
চন্দ্রশেখর ঘোষের প্রধান লক্ষ্য হল বন্ধন গ্রুপের সামগ্রিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা। তিনি বন্ধন ব্যাংকের দৈনন্দিন পরিচালনা থেকে সরে এসে, সমগ্র গ্রুপের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণে মনোনিবেশ করতে চান। এর মাধ্যমে তিনি বন্ধন গ্রুপের সকল ব্যবসায়িক উদ্যোগকে একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিচালনা করতে পারবেন।
ঘোষের অন্যতম উদ্দেশ্য হল বন্ধন গ্রুপের জন্য নতুন ব্যবসায়িক সুযোগের সন্ধান করা। তিনি বন্ধন ব্যাংক, বন্ধন লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং বন্ধন মিউচুয়াল ফান্ডের বাইরেও নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চান। এর মাধ্যমে তিনি গ্রুপের আয়ের উৎস বৈচিত্র্যময় করতে চান।
চন্দ্রশেখর ঘোষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল বন্ধন ব্রান্ডকে আরও শক্তিশালী করা। তিনি চান বন্ধন শুধু একটি ব্যাংক হিসেবে নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। এর জন্য তিনি গ্রুপের সকল ব্যবসায়িক উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে চান।
ঘোষের অন্যতম উদ্দেশ্য হল বন্ধন গ্রুপের জন্য একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করা। তিনি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে প্রস্তুত করতে চান যারা ভবিষ্যতে গ্রুপকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। এর জন্য তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান নতুন নেতৃত্বের সাথে ভাগ করে নিতে চান।
চন্দ্রশেখর ঘোষ সর্বদা সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য হল বন্ধন গ্রুপের সামাজিক দায়বদ্ধতা আরও বৃদ্ধি করা। তিনি চান গ্রুপের সকল ব্যবসায়িক উদ্যোগ যেন সমাজের উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে।
চন্দ্রশেখর ঘোষের স্বেচ্ছাবসর নিঃসন্দেহে বন্ধন ব্যাংকের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তবে এটি শেষ নয়, বরং একটি নতুন শুরুর ইঙ্গিত। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বন্ধন গ্রুপ যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে, তা নিঃসন্দেহে ভারতীয় ব্যাংকিং ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
মন্তব্য করুন