Factors affecting cold sensitivity in individuals: আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে আপনার শরীর অন্যদের তুলনায় বেশি শীত অনুভব করে? এটি একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা যা অনেকেই অনুভব করে থাকেন। কিন্তু এর পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কেন কিছু মানুষ অন্যদের থেকে বেশি শীত অনুভব করে এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়।
শরীরের গঠন ও মেটাবলিজমের প্রভাব
শরীরের গঠন ও মেটাবলিক হার আমাদের তাপমাত্রা অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। যাদের শরীরে পেশি ও চর্বির পরিমাণ কম, তারা সাধারণত বেশি শীত অনুভব করে। কারণ পেশি ও চর্বি শরীরের তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- পেশির পরিমাণ: যাদের শরীরে পেশির পরিমাণ বেশি, তারা সাধারণত কম শীত অনুভব করে। কারণ পেশি তাপ উৎপাদন করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- চর্বির পরিমাণ: অতিরিক্ত চর্বি শরীরের তাপ আটকে রাখে, যা শীত থেকে রক্ষা করে। তবে মোটা ব্যক্তিরা কখনও কখনও বেশি শীত অনুভব করতে পারে, কারণ তাদের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা ঠিকমত কাজ নাও করতে পারে।
- শরীরের আকার: বড় আকারের শরীর ছোট আকারের শরীরের তুলনায় ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়। এর কারণ হল বড় শরীরে তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি।
চিনি ব্যবহারের অন্ধকার দিক: জেনে নিন কি কি ক্ষতি করছেন নিজের
লিঙ্গভেদের প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় সাধারণত বেশি শীত অনুভব করে। এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
- পেশির পরিমাণ: নারীদের শরীরে পুরুষদের তুলনায় কম পেশি থাকে, যা কম তাপ উৎপাদন করে।
- হরমোনের প্রভাব: নারীদের হরমোন স্তর তাপমাত্রা সংবেদনশীলতাকে প্রভাবিত করে।
- কোর বডি টেম্পারেচার: নারীদের কোর বডি টেম্পারেচার পুরুষদের তুলনায় সামান্য বেশি। এর ফলে ঠান্ডা বাতাস আরও বেশি ঠান্ডা মনে হতে পারে।
বয়সের প্রভাব
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়শই বেশি শীত অনুভব করে:
- মেটাবলিজম: বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের মেটাবলিক হার কমে যায়, যা কম তাপ উৎপাদন করে।
- শরীরের চর্বি: বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে প্রায়শই কম চর্বি থাকে, যা তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- রক্ত সঞ্চালন: বয়স্কদের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়, যা শরীরের প্রান্তীয় অংশগুলিতে উষ্ণতা বজায় রাখা কঠিন করে তোলে।
মেডিকেল কন্ডিশনের প্রভাব
কিছু মেডিকেল কন্ডিশন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে:
- হাইপোথাইরয়েডিজম: থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়, যার ফলে শরীর কম তাপ উৎপাদন করে।
- অ্যানিমিয়া: রক্তের লোহিত কণিকার স্বল্পতা শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না, যা শীত অনুভূতি বাড়ায়।
- রেনডস ফেনোমেনন: এই অবস্থায় রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়, যা হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলিতে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়।
- ডায়াবেটিস: দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে, যা শীত অনুভূতি বাড়াতে পারে।
জীবনযাত্রার প্রভাব
আপনার জীবনযাত্রার ধরনও শীত অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে পারে:
- খাদ্যাভ্যাস: অপুষ্টিকর খাবার খেলে শরীরের তাপ উৎপাদন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম না করলে শরীরের মেটাবলিক হার কমে যায়, যা শীত অনুভূতি বাড়াতে পারে।
- জলের পরিমাণ: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
শীত অনুভূতি কমানোর উপায়
যদি আপনি অন্যদের তুলনায় বেশি শীত অনুভব করেন, তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে পারেন:
- গরম পোশাক পরুন: শীতকালে স্তরে স্তরে পোশাক পরুন যাতে শরীরের তাপ ধরে রাখা যায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম শরীরের মেটাবলিক হার বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান যা শরীরের তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত জল পান করুন: শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল থাকলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- স্ট্রেস কমান: স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন, কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলতে পারে।
শীত অনুভূতি একটি জটিল বিষয় যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। শরীরের গঠন, লিঙ্গ, বয়স, মেডিকেল কন্ডিশন এবং জীবনযাত্রার ধরন সবই এর সাথে সম্পর্কিত। যদি আপনি অত্যধিক শীত অনুভব করেন, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে সাধারণভাবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক পোশাক পরিধান করে আপনি এই সমস্যা মোকাবেলা করতে পারেন। মনে রাখবেন, প্রত্যেকের শরীর আলাদা এবং তাপমাত্রা অনুভূতিও ভিন্ন হতে পারে। নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগী হোন এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন।