Why January 26 Republic Day: ২৬ জানুয়ারি, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day) একটি ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিক মাইলফলক। ১৯৫০ সালের এই দিনে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়, যা দেশকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত করে। এই দিনটি শুধুমাত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্মারক নয়, বরং ১৯৩০ সালের “পূর্ণ স্বরাজ” ঘোষণার ঐতিহ্যকেও সম্মান জানায়। চলুন, বিস্তারিতভাবে জানা যাক কেন এই তারিখটি এত গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক পটভূমি
১৯৩০-এর পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণা
১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি, লাহোর কংগ্রেস অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে পূর্ণ স্বরাজ (সম্পূর্ণ স্বাধীনতা) ঘোষণা করে 211। এই ঘোষণা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের আন্দোলনকে নতুন গতি দেয় এবং ২৬ জানুয়ারিকে “স্বাধীনতা দিবস” হিসেবে পালন করা শুরু হয় 14। যদিও প্রকৃত স্বাধীনতা আসে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, তবুও এই তারিখটি ভারতীয়দের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সংবিধান প্রণয়ন
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর, ভারত Government of India Act, 1935 অনুসারে শাসিত হচ্ছিল, যা ব্রিটিশ আমলের একটি আইন 614। একটি স্থায়ী সংবিধান তৈরির জন্য ড. বি. আর. আম্বেদকর-এর নেতৃত্বে খসড়া কমিটি গঠিত হয় ১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট 111। প্রায় ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিনের পরিশ্রমের পর, ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয় 13। তবে, এটি কার্যকর হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, পূর্ণ স্বরাজের ২০তম বার্ষিকীতে 514।
কেন ২৬ জানুয়ারি তারিখটি বেছে নেওয়া হয়?
এই তারিখটি বেছে নেওয়ার পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- ঐতিহাসিক সম্মান: ১৯৩০ সালের পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণার স্মৃতিকে অমর করে রাখা ।
- সাংবিধানিক গুরুত্ব: ১৯৫০ সালের এই দিনে ভারত একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ব্রিটিশ রাজার স্থলাভিষিক্ত হন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ।
সময়রেখা টেবিল
বছর | ঘটনা | উৎস |
---|---|---|
১৯৩০ | পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণা | 214 |
১৯৪৭ | ভারতের স্বাধীনতা | 6 |
১৯৪৯ | সংবিধান গৃহীত | 113 |
১৯৫০ | সংবিধান কার্যকর ও প্রজাতন্ত্র দিবস | 911 |
সংবিধান প্রণয়নের যাত্রা
খসড়া কমিটির ভূমিকা
ড. আম্বেদকরের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের খসড়া কমিটি ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে প্রথম ড্রাফ্ট জমা দেয় 114। সংবিধান সভায় ১১৪ দিনের বিতর্ক, ২,০০০-এর বেশি সংশোধনী প্রস্তাব এবং ৩০৮ সদস্যের স্বাক্ষরের পর চূড়ান্ত রূপ পায় এটি ।
সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- দীর্ঘতম লিখিত সংবিধান: ৪৪৮ ধারা, ১২ তফসিল এবং ১০২ সংশোধনী (২০২৪ পর্যন্ত)।
- গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ: ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতিশ্রুতি।
প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের স্মৃতি
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে সংবিধান কার্যকর হয় । দিল্লির ইরউইন স্টেডিয়ামে (বর্তমানে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম) প্রথম কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৩,০০০ সৈন্য ও ১০০ বিমান অংশ নেয় । ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ২১ তোপের স্যালুটের মধ্য দিয়ে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের তথ্য
বিষয় | বিবরণ | উৎস |
---|---|---|
স্থান | ইরউইন স্টেডিয়াম | 14 |
সময় | সকাল ১০:১৮ | 14 |
স্যালুট | ২১ তোপ | 14 |
প্রধান অতিথি | (প্রথম বছর) | 11 |
প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য
গণতন্ত্রের প্রতীক
এই দিনটি ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং বহুত্ববাদী সংস্কৃতি-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। সংবিধানের মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়, যা ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে পরিণত করেছে ।
জাতীয় ঐক্যের প্রকাশ
দিল্লির রাজপথে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, সামরিক শক্তি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রদর্শিত হয় 39। ২০২৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসের কিছু অজানা তথ্য
- সংবিধানের দুটি হাতে লেখা কপি রয়েছে—ইংরেজি ও হিন্দি।
- ১৯৫০-১৯৫৪ পর্যন্ত প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারত রত্ন পুরস্কার দেওয়া হত না।
- ১৯৫৫ সাল থেকে বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানোর রীতি শুরু হয়।
Republic Day Parade 2025 টিকেট বুকিং: সহজ পদ্ধতি ও বিস্তারিত গাইড
প্রজাতন্ত্র দিবস শুধুমাত্র একটি জাতীয় ছুটির দিন নয়—এটি ভারতের গণতান্ত্রিক আদর্শ, সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব এবং ঐতিহাসিক সংগ্রামের জীবন্ত সাক্ষ্য। ২৬ জানুয়ারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, “সার্বভৌমত্ব” শুধু একটি শব্দ নয়, বরং লক্ষ্য মানুষের রক্ত, ঘাম এবং সংকল্পের ফসল 513। এই দিনে আমরা আমাদের সংবিধানকে সম্মান জানাই এবং ভবিষ্যতের জন্য একতাবদ্ধ হওয়ার শপথ নিই।