Why Climbing Stairs is Harder: সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন যে নামার তুলনায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠা অনেক বেশি কষ্টকর মনে হয়? এর পিছনে রয়েছে কিছু চমকপ্রদ বৈজ্ঞানিক কারণ যা আজ আমরা জানতে পারব।
মাধ্যাকর্ষণের সাথে লড়াই
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আমরা প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে লড়াই করি। এই মাধ্যাকর্ষণ বল আমাদের শরীরকে নিচের দিকে টানতে থাকে, আর আমরা সেই বলের বিপরীতে উপরে উঠতে চেষ্টা করি। এই কারণেই সিঁড়ি বেয়ে ওঠা অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করে।
শরীরের ওজন বহন
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আমাদের শরীরের সম্পূর্ণ ওজন একটি পায়ের উপর নির্ভর করে। এর ফলে হাঁটুর উপর স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় প্রায় ২.৫ গুণ বেশি চাপ পড়ে। এই অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে আমাদের শরীরকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়।
Anant Ambani illness: কোটিপতি হয়েও এই জটিল রোগের কবলে অনন্ত
শক্তির ব্যবহার
বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন প্রফেসর ডা: প্রশান্তকুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আমরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে উপরে উঠি। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীর অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করে।”
পেশীর কার্যকারিতা
সিঁড়ি ওঠার সময় আমাদের পায়ের পেশীগুলি, বিশেষ করে quadriceps এবং calf muscles, অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। এই পেশীগুলি শরীরের ওজন বহন করে এবং উপরের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় পেশীগুলি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যা আমাদের কষ্ট অনুভব করায়।
হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
সিঁড়ি ওঠার সময় আমাদের হৃদস্পন্দন দ্রুত বেড়ে যায়। এর কারণ হল শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত হৃদস্পন্দন আমাদের শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তি অনুভব করায়।
এনার্জি ব্যবহার
গবেষণায় দেখা গেছে, সিঁড়ি ওঠার সময় আমরা সমতল জমিতে হাঁটার তুলনায় প্রায় ৯ গুণ বেশি এনার্জি ব্যয় করি। এই অতিরিক্ত এনার্জি ব্যয় আমাদের শরীরকে দ্রুত ক্লান্ত করে ফেলে।
গুরুত্বাকর্ষণ শক্তি
সিঁড়ি ওঠার সময় আমরা প্রতিটি ধাপে আমাদের শরীরের গুরুত্বাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করি। এই শক্তি আমাদের নিচের দিকে টানতে থাকে, আর আমরা সেই টানের বিরুদ্ধে উপরে উঠতে চেষ্টা করি। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীর অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করে।
শারীরিক প্রভাব
দীর্ঘমেয়াদে নিয়মিত সিঁড়ি ওঠা-নামা করলে হাঁটুর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ডা: ভট্টাচার্য সতর্ক করে দিয়েছেন যে, “দীর্ঘদিন ধরে এতটা বেশি চাপ সইতে থাকলে যে একটা সময়ে হাঁটুর বাজবে বারোটা, তা তো বলাই বাহুল্য!”
সুস্থ থাকার উপায়
যদিও সিঁড়ি ওঠা কষ্টকর, তবে এটি একটি উত্তম ব্যায়াম। নিয়মিত সিঁড়ি ওঠা-নামা করলে আমাদের হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে, পেশীর শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ভারসাম্য উন্নত হয়।
মোবাইল ধরা দেখেই বুঝে নিন মানুষটি কেমন
সতর্কতা অবলম্বন
যদিও সিঁড়ি ওঠা একটি ভালো ব্যায়াম, তবে এটি সঠিকভাবে করা প্রয়োজন। ডা: ভট্টাচার্য পরামর্শ দিয়েছেন, “সিঁড়ি ওঠা-নামার সময় সাবধান হন। যদি কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।”
বিকল্প ব্যায়াম
যাঁরা সিঁড়ি ওঠা-নামা করতে অসুবিধা বোধ করেন, তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যায়াম রয়েছে। হাঁটা, সাঁতার কাটা, বা সাইকেল চালানো এর মধ্যে অন্যতম। এই ব্যায়ামগুলি কম চাপ দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
সিঁড়ি ওঠা যে নামার তুলনায় বেশি কষ্টকর, তার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ। মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে লড়াই, শরীরের ওজন বহন, অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় – এই সবকিছু মিলে সিঁড়ি ওঠাকে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ করে তোলে। তবে, সঠিক পদ্ধতিতে ও সতর্কতার সাথে সিঁড়ি ব্যবহার করলে এটি একটি উত্তম ব্যায়ামে পরিণত হতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সিঁড়ি ওঠা-নামা একটি অপরিহার্য অংশ, তাই এর প্রভাব ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।