Switzerland innovation ranking 2024: সুইজারল্যান্ড কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে? এই ছোট্ট আল্পস দেশটি কেন বারবার শীর্ষস্থান দখল করে রাখছে? আসুন জেনে নেই সুইজারল্যান্ডের অসাধারণ সাফল্যের রহস্য।২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ড টানা ১৪তম বারের মতো বিশ্ব বৌদ্ধিক সম্পদ সংস্থার (WIPO) গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। এই অসাধারণ অর্জন সুইজারল্যান্ডের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রমাণ বহন করে। কিন্তু কীভাবে এই ছোট্ট দেশটি বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোকে পিছনে ফেলে এমন সাফল্য অর্জন করতে পারলো?
সুইজারল্যান্ডের উদ্ভাবনী সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি
শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন পরিবেশ
সুইজারল্যান্ডের সাফল্যের পিছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) পরিবেশ। দেশটি জিডিপির ৩.৪% গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, যার দুই-তৃতীয়াংশই আসে বেসরকারি খাত থেকে। এর ফলে সুইজারল্যান্ড বিশ্বব্যাপী R&D ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৭ম স্থানে রয়েছে। উচ্চমানের গবেষকদের উচ্চ ঘনত্ব এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ দেশটিকে বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বায়োটেকনোলজি খাতে অগ্রগামী করে তুলেছে।
ভারত, চীনে Global Anti-Corruption প্ল্যাটফর্মের স্টিয়ারিং প্যানেলে নির্বাচিত
শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষতা
সুইজারল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিভা বিকাশ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশটির তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে। এছাড়া, সুইজারল্যান্ডে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় ৫,৯৯৯ জন গবেষক রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী ১১তম স্থান। এটি দেশটির উচ্চ-স্তরের গবেষণা কার্যক্রমের প্রতি মনোযোগকে প্রতিফলিত করে।
শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা
সুইজারল্যান্ডের উদ্ভাবনী সাফল্যের একটি মূল চাবিকাঠি হলো শিল্প ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প R&D সহযোগিতায় দেশটি বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এই সহযোগিতা উদ্ভাবনের বাণিজ্যিকীকরণকে ত্বরান্বিত করে এবং গবেষণার ফলাফলকে বাস্তব পণ্য ও পরিষেবায় রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।
উদ্ভাবনী আউটপুটে শীর্ষস্থান
সুইজারল্যান্ড উদ্ভাবনী আউটপুটের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- জিডিপির তুলনায় নতুন পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যায় প্রথম স্থান।
- উৎপাদন খাতের ৭০% এরও বেশি হাই-টেক শিল্পে নিয়োজিত, যা এই সূচকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।
- গিটহাব প্ল্যাটফর্মে কমিট সংখ্যায় প্রথম স্থান, যা দেশটির ডিজিটাল সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তিগত অবদানকে প্রতিফলিত করে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ভূমিকা
সুইজারল্যান্ডের উদ্ভাবনী পরিবেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নেসলে, রোশ, নোভার্টিস এর মতো স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি গুগল, ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালের মতো বিদেশী কোম্পানিগুলোও দেশটিতে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এই বৈচিত্র্যময় কর্পোরেট ল্যান্ডস্কেপ উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তির বিনিময়কে উৎসাহিত করে।
সরকারি নীতি ও সমর্থন
সুইজারল্যান্ড সরকার উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। দেশটির প্রতিষ্ঠানিক পরিবেশ, যেমন সরকারি কার্যকারিতা, বিশ্বে সর্বোচ্চ মানের। সুইস ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (SNSF) এবং সুইস ইনোভেশন এজেন্সি (Innosuisse) এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা ও উদ্ভাবনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদিও সুইজারল্যান্ড উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে, তবুও দেশটির সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডিং হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া, উদ্যোক্তা নীতি ও আইসিটি খাতে উন্নতির সুযোগ রয়েছে।তবে, সুইজারল্যান্ডের প্রমাণিত সক্ষমতা এবং নমনীয়তা এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়। দেশটির শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা এবং উচ্চ-প্রযুক্তি উৎপাদনে অগ্রণী অবস্থান ভবিষ্যতেও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে মানব শূন্য দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে আজই চলুন
সুইজারল্যান্ডের উদ্ভাবনী সাফল্য কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা, শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা এবং সরকারি নীতির ফসল। দেশটির অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য দেশ শিক্ষা নিতে পারে এবং নিজেদের উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে পারে। সুইজারল্যান্ডের উদাহরণ দেখিয়ে দেয় যে, আকারে ছোট হলেও একটি দেশ কীভাবে বৈশ্বিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে।