Why AC is turned off during takeoff: আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন যে বিমান যখন উড়ার প্রস্তুতি নেয় এবং মাটি থেকে উঠতে শুরু করে, তখন বিমানের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়? এটি কোনো যান্ত্রিক সমস্যা নয় বরং বিমান পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। টেকঅফের সময় এসি বন্ধ রাখার পিছনে বেশ কিছু কারিগরি এবং নিরাপত্তামূলক কারণ রয়েছে।
বিমানের এসি বন্ধ রাখার প্রধান কারণগুলি
বিমান টেকঅফ করার সময় এসি বন্ধ রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ইঞ্জিনের সর্বাধিক শক্তি নিশ্চিত করা। টেকঅফ হল বিমান পরিচালনার সবচেয়ে সংকটময় অবস্থা, যখন ইঞ্জিনগুলিকে সম্পূর্ণ শক্তিতে কাজ করতে হয়। এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম চালনা করতে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, যা ইঞ্জিনের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিমানে ওঠার দরজা বাম পাশে থাকে কেন? জানুন এর পিছনের রহস্যময় কারণ
শক্তি বণ্টনের প্রয়োজনীয়তা
বিমানের ইঞ্জিনগুলিকে টেকঅফের সময় সর্বাধিক শক্তি দিতে হয় যাতে সে নিরাপদে মাটি ছেড়ে আকাশে উঠতে পারে। এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম চালু রাখা হলে তা এই শক্তির একটি অংশ ব্যবহার করবে, যা টেকঅফের সময় ইঞ্জিনের পারফরম্যান্সকে কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি ছোট বিমান যেমন SR22-এ এয়ার কন্ডিশনিং চালু রাখলে গ্রাউন্ড রোল প্রায় 100 ফুট বেড়ে যায়।
বিমানের ব্লিড এয়ার সিস্টেম
বেশিরভাগ বড় বিমানে, ইঞ্জিন শুরু করতে এবং এয়ার কন্ডিশনিং চালাতে একই ‘ব্লিড এয়ার’ ব্যবহার করা হয়1। যখন বিমান মাটিতে থাকে, তখন একটি অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট (APU) থেকে এই ব্লিড এয়ার সরবরাহ করা হয়। ইঞ্জিন স্টার্ট করার সময় এই ব্লিড এয়ারের সমস্ত পরিমাণ ইঞ্জিনকে দেওয়া প্রয়োজন হয়, তাই এয়ার কন্ডিশনিং বন্ধ রাখা হয়।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিবেচনা
টেকঅফের সময় এয়ার কন্ডিশনিং বন্ধ রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল নিরাপত্তা।
ইঞ্জিন ফেইলিউর প্রতিরোধ
এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম, বিশেষ করে হিট পাম্প সিস্টেম যা অনেক বিমানে ব্যবহৃত হয়, এগুলি কখনো কখনো হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি ঘটলে বিমানের ইঞ্জিনের শক্তি হঠাৎ কমে যেতে পারে, কাউলের নিচে আগুন লাগতে পারে, এমনকি কখনো কখনো পুরো ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেহেতু টেকঅফ বিমান পরিচালনার সবচেয়ে সংকটময় পর্যায়, তাই এই সময় এয়ার কন্ডিশনিং বন্ধ রাখা একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
টেকঅফ পারফরম্যান্স বজায় রাখা
বিমানের টেকঅফ পারফরম্যান্সের হিসাব সাধারণত সম্পূর্ণ শক্তির উপর ভিত্তি করে করা হয়, যেখানে ইঞ্জিন শুধুমাত্র প্রপেলার এবং নির্দিষ্ট ইলেকট্রিকাল সিস্টেমে শক্তি সরবরাহ করে1। যদি এয়ার কন্ডিশনিং চালু রাখা হয়, তবে এটি বিমানের টেকঅফ পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে এবং সুরক্ষার বিষয়ে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিমানের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম কীভাবে কাজ করে
বিমানের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম সাধারণ বাড়ির বা গাড়ির এসির থেকে অনেক আলাদা। এটি বুঝলে এসি বন্ধ রাখার কারণ আরও স্পষ্ট হবে।
ব্লিড এয়ার প্রযুক্তি
বিমানের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম সাধারণত ‘ব্লিড এয়ার’ নামক একটি সিস্টেম ব্যবহার করে। এটি ইঞ্জিন থেকে সরাসরি উচ্চ চাপযুক্ত বাতাস নেয়। এই প্রক্রিয়ায় বাতাস সংকুচিত হয় এবং এর ফলে উষ্ণ হয়ে যায়। এরপর এই উষ্ণ বাতাসকে ঠান্ডা করে কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করানো হয়।
কম্প্রেশন এবং এক্সপ্যানশন
উচ্চ অ্যালটিটিউডে বিমান চলাচল করার সময়, বাইরের বাতাস অত্যন্ত পাতলা এবং ঠান্ডা হয় (প্রায় -40° সেলসিয়াস বা তারও কম)। এই বাতাসকে শ্বাস নেওয়ার উপযোগী করতে এবং কেবিনে ব্যবহার করার জন্য কম্প্রেস করতে হয়। কিন্তু এর ফলে বাতাস উষ্ণ হয়ে যায় (প্রায় 40° সেলসিয়াস পর্যন্ত)। এই উষ্ণতা কমাতে বাতাসকে এক্সপ্যান্ড করা হয় এবং এভাবেই কেবিনে ঠান্ডা বাতাস সরবরাহ করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের বিমানে এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম
সব বিমানে একই ধরনের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় না। বিভিন্ন ধরনের বিমানে ভিন্ন ভিন্ন সিস্টেম রয়েছে।
বড় বাণিজ্যিক বিমান
বড় জেট বিমানগুলিতে সাধারণত ইঞ্জিন বা APU থেকে ব্লিড এয়ার ব্যবহার করে। যখন বিমান মাটিতে থাকে এবং ইঞ্জিন বন্ধ থাকে, তখন APU থেকে এয়ার কন্ডিশনিং চালানো হয়। কিছু বিমানে বাইরের গ্রাউন্ড এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিট (ACU) ব্যবহার করা হয়, যা একটি হোস দিয়ে ঠান্ডা বাতাস কেবিনে পাম্প করে।
ছোট বিমান এবং প্রাইভেট জেট
ছোট বিমান যেমন SR22-এ অটোমোটিভ স্টাইলের ভেপার সাইকেল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের সিস্টেম ইঞ্জিন থেকে সরাসরি শক্তি নেয় এবং এর ফলে টেকঅফ পারফরম্যান্সে কিছুটা প্রভাব পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, SR22-এ এয়ার কন্ডিশনিং কম্প্রেসরটি 6 হর্সপাওয়ার শক্তি ব্যবহার করে এবং এটি চালু রাখলে গ্রাউন্ড রোল 100 ফুট বেড়ে যায়।
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এবং ভ্রান্ত ধারণা
অনেক যাত্রী বিমানে উঠার সময় বা টেকঅফের আগে এয়ার কন্ডিশনিং বন্ধ থাকলে অস্বস্তি বোধ করেন। এটি নিয়ে কিছু সাধারণ অভিজ্ঞতা এবং ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।
অস্বস্তিকর গরম
গরম দিনে বিমানে উঠার সময় যাত্রীরা প্রায়ই অস্বস্তি অনুভব করেন, কারণ বিমানের ধাতব কাঠামো সহজেই গরম হয়ে যায়4। বিমানের ভিতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ অনেক মানুষের শরীরের তাপ, সূর্যের আলো এবং বাইরের উষ্ণ বাতাস একসাথে কাজ করে।
কেন ফ্লাইটে ঠান্ডা হয়
অনেকে জানেন না যে, বিমান যখন উচ্চতায় ওড়ে, তখন কেবিনের ভিতরের ঠান্ডা অনুভূতি আসে মূলত বাইরের অত্যন্ত ঠান্ডা তাপমাত্রার কারণে, ইঞ্জিন চালানোর কারণে নয়। উচ্চতায় বাইরের তাপমাত্রা প্রায় -40° সেলসিয়াস বা তারও কম হয়, যা কেবিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গাড়ির এয়ার কন্ডিশনার ভেন্ট পরিষ্কার: সহজ উপায়ে তাজা বাতাস
বিমান নির্মাতাদের নতুন প্রযুক্তির উদ্যোগ
বিমান নির্মাতারা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
ইলেকট্রিক এসি সিস্টেম
নতুন ধরনের বিমানে ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা চালিত এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সিস্টেমগুলি ইঞ্জিনের সাথে সরাসরি সংযুক্ত নয়, তাই টেকঅফের সময় ইঞ্জিনের পারফরম্যান্সে কম প্রভাব ফেলে। তবে এখনও স্টার্টআপের সময় উচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে এই সিস্টেমগুলি বন্ধ রাখা প্রয়োজন হতে পারে।
অতিরিক্ত কুলিং প্যাক
কিছু এয়ারলাইন, বিশেষ করে গাল্ফ দেশগুলির অপারেটররা, অতিরিক্ত এয়ার কন্ডিশনিং প্যাক অর্ডার করছেন যাতে কুলিং পাওয়ার বাড়ানো যায়4। এটি উষ্ণ আবহাওয়ায় যাত্রীদের আরও আরামদায়ক অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সাহায্য করে।
বিমান টেকঅফের সময় এয়ার কন্ডিশনিং বন্ধ রাখার পিছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি এবং নিরাপত্তামূলক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণগুলি হল ইঞ্জিনের সর্বাধিক শক্তি নিশ্চিত করা, নিরাপদ টেকঅফ সুনিশ্চিত করা এবং এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের কারণে হতে পারে এমন কোনো সমস্যা এড়ানো।
যদিও এটি যাত্রীদের জন্য সাময়িক অস্বস্তির কারণ হতে পারে, তবে এটি বিমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিমান যখন উচ্চতায় পৌঁছায়, তখন এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম পুনরায় চালু করা হয় এবং কেবিনের তাপমাত্রা আরামদায়ক স্তরে ফিরে আসে।আধুনিক বিমান প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো এমন সিস্টেম আসবে যা টেকঅফের সময়ও যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারবে, কিন্তু বর্তমানে নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।