Reasons for two-party system in United States: যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট – এই দুটি প্রধান দলের আধিপত্য দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান। এই দুই দলীয় ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কেন এবং কীভাবে এই দুই দলীয় ব্যবস্থা এতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে দুই দলীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে। তখন ফেডারেলিস্ট ও অ্যান্টি-ফেডারেলিস্টদের মধ্যে বিতর্কের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার সূচনা হয়। পরবর্তীতে এই দুই গোষ্ঠী থেকেই বর্তমানের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের জন্ম হয়।
দুই দলীয় ব্যবস্থার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে।
- প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা “winner-take-all” পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এতে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন। এই পদ্ধতিতে তৃতীয় দলের প্রার্থীদের জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
- দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ব্যবস্থাও দুই দলীয় প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করে। কোনো ক্ষুদ্র দল একা রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী জিতাতে পারে না। ফলে তৃতীয় দলগুলো প্রায়শই প্রতিবাদী আন্দোলন হিসেবেই থেকে যায়।
- তৃতীয়ত, ব্যালট অ্যাক্সেস সংক্রান্ত আইনকানুন তৃতীয় দলগুলোর জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে। এসব আইন ছোট দলগুলোর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কঠিন করে তোলে।
- চতুর্থত, ভোটারদের মধ্যে ধারণা জন্মে যে, তৃতীয় দলকে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা। ফলে তারা দুটি প্রধান দলের মধ্যেই ভোট দিতে পছন্দ করেন।
- পঞ্চমত, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাও দুই দলীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বড় ধরনের অসন্তোষ না থাকায় তৃতীয় দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়নি।
CPIM: রাজ্যের জনতা কেন মুখ ফিরিয়ে নিল বামেদের থেকে?
তবে দুই দলীয় ব্যবস্থার সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এই ব্যবস্থায় বিকল্প মতামতের প্রতিফলন ঘটে না। ভোটারদের পছন্দের সুযোগও সীমিত থাকে। ফলে গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয।২০২৩ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬৩% মার্কিন নাগরিক মনে করেন যে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং একটি তৃতীয় দলের প্রয়োজন রয়েছে।
এই পরিসংখ্যান দেখায় যে, দুই দলীয় ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।কিন্তু এত সমালোচনা ও অসন্তোষ সত্ত্বেও দুই দলীয় ব্যবস্থা টিকে আছে কেন? এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
দীর্ঘদিন ধরে এই দুই দল দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এতে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ও জনসমর্থন শক্তিশালী হয়েছে।
২. আইনি বাধা:
নির্বাচন সংক্রান্ত আইনকানুন প্রধানত এই দুই দলের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে। ফলে নতুন দলের জন্য প্রতিযোগিতা করা কঠিন।
৩. অর্থনৈতিক সুবিধা:
বড় দুই দলের কাছে প্রচুর অর্থ ও সম্পদ রয়েছে। এতে তারা বিপুল প্রচারণা চালাতে পারে, যা নতুন দলের পক্ষে সম্ভব নয়।
৪. মিডিয়া কভারেজ:
গণমাধ্যমগুলো প্রধানত এই দুই দলকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ফলে তৃতীয় দলের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে।
৫. ভোটারদের মানসিকতা:
অনেক ভোটার মনে করেন, তৃতীয় দলকে ভোট দিলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তারা দুই প্রধান দলের মধ্যেই বেছে নেন।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তৃতীয় দলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কর্নেল ওয়েস্ট গ্রীন পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া “No Labels” নামে একটি সংগঠন মধ্যপন্থী একজন প্রার্থীকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। তবে এর আগেও ২০১২ সালে “Americans Elect” নামে একটি অনুরূপ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল।
ভারত এখন এশিয়ার তৃতীয় শক্তিধর দেশ: রাশিয়া-জাপানকে পিছনে ফেলে উঠে
সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলীয় ব্যবস্থা এখনও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে জনগণের মধ্যে এর প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে এই ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসে কিনা, তা লক্ষ্য করার বিষয়।তৃতীয় দলের উত্থান ঘটলে তা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বিভিন্ন মতামতের প্রতিনিধিত্ব বাড়তে পারে। তবে এর জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে ছোট দলগুলোও তাদের ভোটের অনুপাতে আসন পেতে পারে।অন্যদিকে, দুই দলীয় ব্যবস্থার সমর্থকরা মনে করেন, এই ব্যবস্থা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে। কারণ একটি দল সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পারে।
সর্বশেষে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলীয় ব্যবস্থা এখনও শক্তিশালী থাকলেও এর প্রতি চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে এই ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আসে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে সারা বিশ্ব।