ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সাধারণ মানুষের আস্থা তৃণমূলে অবিচল রয়েছে। কেন এমনটি হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যক্রম, নেতাদের জনপ্রিয়তা এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ওপর বিশদভাবে নজর দিতে হবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) শাসনামলের সাফল্য
সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প
তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কন্যাশ্রী প্রকল্প, যা কন্যাদের শিক্ষাগত ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। এছাড়াও রূপশ্রী প্রকল্প, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প, এবং সবুজ সাথী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনামলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। সরকারি বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই, মিড-ডে মিল, এবং বিদ্যালয় সংস্কার কার্যক্রমের ফলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা অর্জন করেছে তৃণমূল।
দুর্নীতির অভিযোগ: সত্য ও মিথ্যা
সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি
তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনামলে সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি(Saradha) একটি বড় দুর্নীতির অভিযোগ হিসেবে উঠে আসে। অনেক তৃণমূল নেতার নাম এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল। তবে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নারদা স্টিং অপারেশন
২০১৬ সালে নারদা স্টিং অপারেশন কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের ঘুষ নিতে দেখা যায়। এই ঘটনা প্রচুর বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন তোলে। তৃণমূলের বিরোধী দলগুলো এই কেলেঙ্কারিকে তাদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
তৃণমূলে সাধারণ মানুষের আস্থার কারণ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর(Mamata Banerjee) জনপ্রিয়তা
মমতা ব্যানার্জী একজন সাধারণ মানুষের নেত্রী হিসেবে পরিচিত। তার সাধারণ জীবনযাপন এবং মানুষের সমস্যার প্রতি সংবেদনশীলতা তাকে জনপ্রিয় করেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এবং তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান তাকে পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে।
উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন
তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনামলে রাজ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। কন্যাশ্রী প্রকল্প, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প, এবং ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো সাধারণ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।
বিরোধী দলের দুর্বলতা
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ও বামফ্রন্টের মধ্যে মতবিরোধ এবং সংঘর্ষের কারণে তারা একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে পারেনি। তৃণমূলের দুর্নীতির অভিযোগগুলো থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাদেরই বেছে নিচ্ছে কারণ বিরোধীরা তাদের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেকিং: বাস্তবতা যাচাই
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য
ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, কন্যাশ্রী প্রকল্পের ফলে রাজ্যে কন্যা শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কম বয়সে বিয়ে হওয়ার প্রবণতা কমেছে। ২০২০ সালে এই প্রকল্পের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৭.৫ কোটি মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রায় ৭০% মানুষ আর্থিক সুরক্ষা পেয়েছে।
সারদা চিট ফান্ড এবং নারদা কেলেঙ্কারি
সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্ত চলমান রয়েছে এবং কিছু নেতার বিচার প্রক্রিয়া চলছে। নারদা স্টিং অপারেশন কেলেঙ্কারিতেও তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের আস্থা অবিচল রয়েছে কারণ তারা উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো থেকে সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর জনপ্রিয়তা, উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন, এবং বিরোধী দলের দুর্বলতা তৃণমূলের পক্ষে কাজ করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্য এবং দুর্নীতির বাস্তবতা উভয়ই বিবেচনায় রেখে বলা যায় যে, তৃণমূলে সাধারণ মানুষের আস্থা এখনো অটুট রয়েছে।