Ishita Ganguly
১১ জুলাই ২০২৪, ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

CPIM: রাজ্যের জনতা কেন মুখ ফিরিয়ে নিল বামেদের থেকে? বিস্ময়কর কারণগুলি জানুন

বিগত কয়েক দশক ধরে, বামপন্থী রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গের মূল রাজনৈতিক ধারা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে রাজ্যের জনতা বামপন্থী দলগুলির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কেন এমন হল? এই ব্লগে আমরা সেই কারণগুলি বিশদে আলোচনা করব যা বামেদের জনপ্রিয়তা হ্রাসের পেছনে রয়েছে।

বামপন্থী রাজনীতির উত্থান ও পতন

বামপন্থীদের সাফল্য

১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসে। বামফ্রন্টের প্রধান দল সিপিএম দীর্ঘ সময় রাজ্যে শাসন করেছে। প্রথমদিকে তারা ভূমি সংস্কার, শিক্ষা, এবং কৃষকের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল। এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তারা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বামেদের জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণ

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বামেদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করে। একাধিক কারণে এই পতন ঘটে, যেমন:

  • দলীয় সংঘাত ও দুর্নীতি: বামফ্রন্টের শাসনকালে দলীয় সংঘাত ও দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
  • শিল্পায়ন নীতি: সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের ঘটনাগুলি বামেদের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধাক্কা দেয়। বিশেষ করে নন্দীগ্রামের কৃষকদের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন বামেদের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।
  • বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক অবস্থা: বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটায় বামফ্রন্ট সরকারের ওপর মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।

তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব

বামেদের পতনের মধ্যে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান ঘটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস বামেদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়। মমতার আক্রমণাত্মক প্রচারণা এবং সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর কৌশল তৃণমূল কংগ্রেসকে জনপ্রিয় করে তোলে।

নির্বাচনী কৌশল ও সফলতা

মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস একের পর এক নির্বাচনে সাফল্য লাভ করে। ২০১১ সালে তারা বামফ্রন্টকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিজেপির উত্থান

বামেদের থেকে বিজেপিতে স্থানান্তর

বামেদের পতনের পর, রাজ্যের একটি বড় অংশের জনতা বিজেপির প্রতি আকৃষ্ট হয়। বিশেষ করে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য প্রমাণ করে যে, রাজ্যের জনতা বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে বিজেপিতে স্থানান্তরিত হয়েছে।

জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় রাজনীতি

বিজেপির জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় রাজনীতি রাজ্যের একটি বড় অংশের মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বামেদের ব্যর্থতার পরে বিজেপির কাছে তারা আশার আলো দেখতে পায়।

বামেদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা

নতুন নেতৃত্ব ও কৌশল

বামেদের পুনরুত্থানের জন্য নতুন নেতৃত্ব ও কৌশল প্রয়োজন। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব এবং আধুনিক রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার

সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে বামেদের নিজস্ব আদর্শে দৃঢ় থেকে নতুনভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দুর্নীতি ও দলীয় সংঘাতমুক্ত পরিষ্কার ও স্বচ্ছ রাজনীতি করতে হবে।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাস্তবতা

গণতন্ত্র ও জনগণের রায়

রাজনীতিতে পরিবর্তন এবং জনগণের রায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের সাথে সাথে মানুষ নতুন নেতৃত্ব ও নতুন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয়।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামপন্থী দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে। জনগণের আস্থা অর্জন এবং স্থায়ী সমাধান প্রদান করা সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

FAQs

কেন বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল রাজ্যের জনতা?

বামেদের দলীয় সংঘাত, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক সমস্যা তাদের জনপ্রিয়তা কমিয়েছে।

কিভাবে তৃণমূল কংগ্রেস বামেদের পরাজিত করল?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সাধারণ মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে এবং নির্বাচনী কৌশলে সাফল্য অর্জন করে।

বিজেপি কিভাবে পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী হয়েছে?

বিজেপির জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় রাজনীতি এবং বামেদের ব্যর্থতার কারণে বিজেপি রাজ্যে জনপ্রিয় হয়েছে।

বামেদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা কি?

নতুন নেতৃত্ব ও কৌশল গ্রহণ এবং সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারলে বামেদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যত কেমন?

তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ, তবে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে তারা দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কেমন হবে?

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনিশ্চিত, তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close