নারীদের মানসিক চাপ বেশি কেন? বৈজ্ঞানিক কারণগুলো জানুন

আধুনিক যুগে নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ মানসিক চাপ অনুভব করছেন - এটি কোনো ধারণা নয়, বরং বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত সত্য । আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী,…

Riddhi Datta

 

আধুনিক যুগে নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ মানসিক চাপ অনুভব করছেন – এটি কোনো ধারণা নয়, বরং বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত সত্য । আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, নারীরা তাদের মানসিক চাপের মাত্রা ১০-এর মধ্যে গড়ে ৫.৩ হিসাবে রিপোর্ট করেছেন, যেখানে পুরুষদের গড় ছিল ৪.৮ । ভারতীয় কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান আরও উদ্বেগজনক – ৭২.২% নারী উচ্চ মানসিক চাপের কথা জানিয়েছেন, যা পুরুষদের (৫৩.৬%) থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি । এই নিবন্ধে আমরা হরমোনাল, স্নায়বিক, মনোবৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক কারণগুলো বিশ্লেষণ করব যা নারীদের এই অতিরিক্ত মানসিক চাপের জন্য দায়ী।

হরমোনাল প্রভাব এবং জৈবিক কারণ

নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো প্রজনন হরমোনগুলোর ওঠানামা মানসিক অবস্থার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে । মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে, গর্ভাবস্থায়, প্রসবের পর এবং মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রায় তীব্র পরিবর্তন হয়, যা সংবেদনশীল নারীদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের (NIH) গবেষণা অনুযায়ী, মেনোপজাল ট্রানজিশনের সময় ইস্ট্রোজেনের দ্রুত হ্রাস বিষণ্নতার হার বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত । র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল্ড ট্রায়ালে দেখা গেছে যে ইস্ট্রাডিয়েল গ্রহণকারী ৮০% নারী তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে মুড উন্নতির রিপোর্ট করেছেন, যা প্লাসিবো গ্রুপের মাত্র ২২% এর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ।

হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে নারীরা পুরুষদের তুলনায় মানসিক রোগে বেশি আক্রান্ত হন । উদাহরণস্বরূপ, প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার (PMDD), পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন এবং পেরিমেনোপজাল ডিপ্রেশন – এই তিনটি মুড ডিসঅর্ডার সরাসরি প্রজনন হরমোনের সাথে সম্পর্কিত । বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে নির্দিষ্ট প্রজনন অবস্থায় (যেমন মাসিকের প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ফেজ, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং মেনোপজ ট্রানজিশন) স্টেরয়েড হরমোনের পরিবর্তন সংবেদনশীল নারীদের মধ্যে আবেগজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে।

উদ্বেগ এবং বিষণ্নতায় লিঙ্গ বৈষম্য

মানসিক স্বাস্থ্য সূচক নারী পুরুষ উৎস
উদ্বেগের হার ২১.৯% ১১.৩% NIH গবেষণা
বিষণ্নতার হার ৫.৪% ১.৭% NIH গবেষণা
উচ্চ মানসিক চাপ (ভারত) ৭২.২% ৫৩.৬% YourDost সার্ভে
চাপের মাত্রা (১০-এর মধ্যে) ৫.৩ ৪.৮ APA ২০২৩

নেপালের সর্বশেষ জাতীয় সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ১২,০০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন যে নারীদের উদ্বেগ অনুভব করার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ এবং বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা তিনগুণেরও বেশি । সামাজিক-জনতাত্ত্বিক কারণগুলোর জন্য সমন্বয় করার পরেও, নারীদের উদ্বেগ অনুভব করার সম্ভাবনা ২.১৮ গুণ বেশি (৯৫% কনফিডেন্স ইন্টারভাল: ১.৯৬-২.৪৩) এবং বিষণ্নতার সম্ভাবনা ৩.২১ গুণ বেশি (৯৫% কনফিডেন্স ইন্টারভাল: ২.৫৩-৪.০৭) । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ২০২১ সালের জাতীয় সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৬% নারী বিষণ্নতায় ভুগছেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ৪% ।

​উদ্বেগজনিত ব্যাধিতেও লিঙ্গ বৈষম্য স্পষ্ট – ২৩.৪% নারী উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন, যা পুরুষদের (১৪.৩%) থেকে প্রায় ৯% বেশি । এই পরিসংখ্যানগুলো বয়স, ভৌগোলিক অবস্থান, শিক্ষার স্তর এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হলেও, সব শ্রেণীতেই নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

মানসিক বোঝা এবং জ্ঞানীয় গৃহস্থালি শ্রম

“মেন্টাল লোড” বা মানসিক বোঝা হলো পরিবার ও গৃহস্থালি পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা, প্রয়োজন অনুমান এবং দায়িত্ব বণ্টনের মানসিক কাজ । ৩২২ জন ছোট শিশুর মায়েদের নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীরা সামগ্রিক গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি জ্ঞানীয় শ্রমের অসামঞ্জস্যপূর্ণ অংশ বহন করেন । গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে জ্ঞানীয় গৃহস্থালি শ্রম নারীদের বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, বার্নআউট, সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের কার্যকারিতার সাথে যুক্ত ।

ইউরোপীয় গবেষণা অনুযায়ী, ১০ জন নারীর মধ্যে ৭ জন ব্যক্তিগত এবং পেশাদার মানসিক ওভারলোডে ভুগছেন । এই নারীদের ৮৭% বিশ্বাস করেন যে মানসিক বোঝা তাদের শারীরিক এবং/অথবা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে । যদিও তারা নিজেরা সব কাজ সম্পাদন করেন না, তবুও গৃহস্থালি কাজ, স্কুল ফলো-আপ, আত্মীয়দের সহায়তা ইত্যাদির সঠিক সম্পাদনের জন্য তারা দায়বদ্ধ বোধ করেন। দুই-তৃতীয়াংশ নারী গৃহস্থালির “ম্যানেজার” এর ভূমিকা পালন করেন, যেখানে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ তাদের সঙ্গীর সাথে সমানভাবে এই দায়িত্ব ভাগ করেন ।

কর্মক্ষেত্রে চাপ এবং ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স

কর্মজীবী নারীদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ব্যক্তিগত এবং পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা । ভারতে YourDost-এর ৫,০০০ পেশাদারদের নিয়ে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে খারাপ ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স কর্মজীবী নারীদের মানসিক চাপের সবচেয়ে বড় কারণ । ১৮% নারী ব্যক্তিগত এবং পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সংগ্রাম করছেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি মাত্র ১২% । ডেলয়েটের “Women @ Work 2024” গবেষণা অনুযায়ী, অর্ধেক কর্মজীবী নারী এক বছর আগের তুলনায় উচ্চতর মানসিক চাপ অনুভব করছেন ।

আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা অনুযায়ী, নারীরা অর্থ, পারিবারিক দায়িত্ব, বাধ্যবাধকতা এবং সম্পর্ক নিয়ে বেশি চাপ অনুভব করেন । প্রায় ৬৮% নারী স্বীকার করেছেন যে তাদের অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন, যা পুরুষদের (৬৩%) থেকে বেশি । বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে প্রজনন অধিকার, শিশুদের শিক্ষা, অবসর এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো এই চাপকে আরও তীব্র করেছে । এছাড়াও, পুরুষদের তুলনায় নারীরা এখনও গড়ে ৮৫% বেতন পান, যা ঐতিহাসিক বেতন বৈষম্যকে প্রতিফলিত করে ।

আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং স্নায়বিক পার্থক্য

নিউরোসায়েন্স গবেষণা প্রমাণ করেছে যে নারী এবং পুরুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কের কার্যকলাপে পার্থক্য রয়েছে । fMRI স্টাডি অনুযায়ী, নারীরা নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণের সময় ভিন্ন স্নায়বিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন । আবেগজনিত প্রতিক্রিয়ায় নারী এবং পুরুষ তুলনীয় হলেও, জ্ঞানীয় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পার্থক্য দেখা যায় ।

নারীরা মুখের অভিব্যক্তি এবং শারীরিক আবেগ শনাক্ত করতে পুরুষদের তুলনায় দ্রুত এবং বেশি সঠিক । গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীরা রাগ এবং নিরপেক্ষ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ শনাক্ত করতে পুরুষদের চেয়ে বেশি নিখুঁত, যেখানে পুরুষরা আনন্দময় বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পড়তে বেশি সক্ষম । নারীরা পুরুষদের তুলনায় মুখের চোখের অঞ্চলে বেশি ফোকাস করেন, যা মুখের অভিব্যক্তি শনাক্তকরণে নারীদের সুবিধার সাথে সম্পর্কিত এবং এমপ্যাথেটিক দক্ষতার সাথে ইতিবাচকভাবে যুক্ত ।

মাল্টিটাস্কিং মিথ এবং বাস্তবতা

জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে, নারীরা মাল্টিটাস্কিংয়ে পুরুষদের চেয়ে ভালো নন – বরং তারা শুধুমাত্র বেশি কাজ করছেন । PLOS One-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা দেখিয়েছে যে মাল্টিটাস্কিং নারীদের মস্তিষ্কেও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করে । “সুপারওম্যান মিথ” – এই ধারণা যে নারীরা পরিণতি ছাড়াই একাধিক উচ্চ-স্তরের কাজ পরিচালনা করতে পারেন – আসলে টেকসই নয় । মাল্টিটাস্কিং আমাদের মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করে এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয় ।

আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৪০% মানুষ তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে মাল্টিটাস্ক করেন । স্বল্পমেয়াদে এটি ভালো মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি প্রকৃতপক্ষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে । সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে যে শিশুর জন্ম মায়েদের সময়ের চাপ বৃদ্ধি করে, কিন্তু প্রভাব মায়েদের জন্য বাবাদের তুলনায় দ্বিগুণ । দ্বিতীয় সন্তান মায়েদের সময়ের চাপ আবার দ্বিগুণ করে এবং ফলস্বরূপ, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় ।

সমাধান এবং মোকাবেলার উপায়

নারীদের মানসিক চাপ মোকাবেলার জন্য ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উভয় স্তরে পদক্ষেপ প্রয়োজন। LIMRA-র জানুয়ারি ২০২৫ কনজিউমার সেন্টিমেন্ট স্টাডি অনুযায়ী, ১০ জনের মধ্যে ৪ জন নারী তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে উচ্চ স্তরের মানসিক চাপ অনুভব করছেন । কর্মক্ষেত্রে সুবিধা এবং সহায়তা প্রোগ্রাম এই চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, কাউন্সেলিং, এবং মানসিক সুস্থতা প্রোগ্রামের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

ডেলয়েটের “Women @ Work 2025” রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬০%-এর কম নারী তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য/সুস্থতাকে ভালো বা অত্যন্ত ভালো হিসাবে মূল্যায়ন করেন । তবে, প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪%) নারী স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন । পরিবার এবং সমাজের সহযোগিতা, গৃহস্থালি কাজের সমান বণ্টন, এবং কর্মক্ষেত্রে নমনীয়তা নারীদের মানসিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। মানসিক বোঝা কমাতে পরিবারের সকল সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দায়িত্ব ভাগাভাগি অপরিহার্য।

নারীদের মানসিক চাপ এবং আবেগজনিত সমস্যার পেছনে রয়েছে জটিল জৈবিক, হরমোনাল, মনোবৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক কারণের সমন্বয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে নারীরা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ উদ্বেগ এবং তিনগুণ বিষণ্নতায় ভোগেন, যা শুধুমাত্র স্টেরিওটাইপ নয় বরং পরিসংখ্যানগত সত্য। হরমোনাল ওঠানামা, অসমভাবে বণ্টিত গৃহস্থালি জ্ঞানীয় শ্রম, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপ – এই সবকিছুই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, পারিবারিক সহযোগিতা, কর্মক্ষেত্রে নমনীয়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সহজলভ্যতা। নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা আমাদের সবার দায়িত্ব, যাতে তারা সুস্থ এবং সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারেন।

About Author
Riddhi Datta

ঋদ্ধি দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি একজন উদীয়মান বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, যিনি জটিল বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলিকে সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য করে তোলেন। তাঁর লেখায় রসায়ন, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সমসাময়িক বিষয়গুলি প্রাধান্য পায়। ঋদ্ধি নিয়মিতভাবে এই ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রবন্ধ, গবেষণা সারসংক্ষেপ এবং বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন