Almond weight gain benefits: আমন্ড বা বাদাম খাওয়া নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে – এতে কি ওজন বেড়ে যাবে? আসলে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে আমন্ড খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আমন্ড খাওয়ার উপকারিতা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত।
আমন্ডের পুষ্টিগুণ
আমন্ড অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ। একটি সাধারণ সার্ভিং বা ১ আউন্স (প্রায় ২৩টি) আমন্ডে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়:
পুষ্টি উপাদান |
পরিমাণ |
ক্যালরি |
১৬৪ |
প্রোটিন |
৬ গ্রাম |
ফ্যাট |
১৪ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট |
৬ গ্রাম |
ফাইবার |
৩.৫ গ্রাম |
ভিটামিন ই |
দৈনিক প্রয়োজনের ৪৮% |
ম্যাগনেসিয়াম |
দৈনিক প্রয়োজনের ১৮% |
আমন্ড ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
অনেকেই মনে করেন যে আমন্ডের উচ্চ ক্যালরি ও ফ্যাট কন্টেন্টের কারণে এটি খেলে ওজন বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে ঠিক উল্টোটাই ঘটে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে আমন্ড খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
- তৃপ্তি বোধ: আমন্ডে থাকা প্রোটিন ও ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
- মেটাবলিজম বৃদ্ধি: আমন্ডে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরের মেটাবলিক রেট বাড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
- ফ্যাট অ্যাবসর্পশন কমায়: আমন্ডের ফাইবার শরীরে ফ্যাট শোষণ কমিয়ে দেয়, ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ রোধ করে।
Maggi খাওয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতি: স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর
গবেষণার ফলাফল
বিভিন্ন গবেষণায় আমন্ডের ওজন নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে:
- একটি ২৪ সপ্তাহের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত আমন্ড খেয়েছেন তাদের ওজন ৬২% বেশি কমেছে, বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ৫০% কমেছে এবং শরীরের চর্বি ৫৬% কমেছে।
- অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালরি নিয়ন্ত্রিত ডায়েটে আমন্ড যোগ করলে কোলেস্টেরল কমে এবং “খারাপ” LDL কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমে।
- ২০১১ সালের একটি গবেষণায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৬০ গ্রাম আমন্ড খাওয়ানো হয়। ফলাফলে দেখা যায় তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা ও লিপিড প্রোফাইল উন্নত হয়েছে।
আমন্ড খাওয়ার সঠিক পরিমাণ
যদিও আমন্ড স্বাস্থ্যকর, তবে এর অতিরিক্ত সেবন ওজন বাড়াতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন ১ আউন্স বা প্রায় ২৩টি আমন্ড খাওয়ার পরামর্শ দেন।এই পরিমাণ আমন্ডে প্রায় ১৬৫ ক্যালরি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট (৮০% মনোআনস্যাচুরেটেড), ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে।
আমন্ড খাওয়ার অন্যান্য উপকারিতা
ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমন্ড খাওয়ার আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে:
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আমন্ডে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: আমন্ডে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
- কোলেস্টেরল কমায়: নিয়মিত আমন্ড খেলে “খারাপ” LDL কোলেস্টেরল কমে এবং “ভালো” HDL কোলেস্টেরল বাড়ে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: আমন্ডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে: আমন্ডে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
আমন্ড খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
আমন্ড থেকে সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে হলে সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ:
- কাঁচা বা ভেজানো আমন্ড খান: চিনি বা লবণ মিশ্রিত আমন্ডের বদলে সাদা কাঁচা বা রাতভর জলে ভেজানো আমন্ড খাওয়া ভালো।
- সকালে খালি পেটে খান: রাতে জলে ভিজিয়ে রাখা আমন্ড সকালে খালি পেটে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খান: স্যালাড, ওটমিল বা দইয়ের সাথে কুচি করা আমন্ড মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আমন্ড বাটার ব্যবহার করুন: প্রাকৃতিক আমন্ড বাটার (যাতে অতিরিক্ত চিনি বা তেল নেই) ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা
যদিও আমন্ড অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, তবে কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন:
- যাদের আমন্ড বা নাট জাতীয় খাবারে অ্যালার্জি আছে, তারা আমন্ড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- কিডনি সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আমন্ড খান, কারণ এতে উচ্চ মাত্রায় অক্সালেট থাকে।
- অতিরিক্ত আমন্ড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ হতে পারে।
Fruits for Digestive: পেট পরিষ্কার রাখতে দারুণ কার্যকরী এই ৫ ফল!
আমন্ড একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত আমন্ড খেলে ওজন বাড়ার বদলে বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরলসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত সেবন থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে প্রতিদিন একমুঠো আমন্ড খেলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে।