আর্জেন্টিনা সম্প্রতি ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে এবং ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু এই চমকপ্রদ জয়ের পরেও একটি প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে – ৩৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি কি আগামী বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবেন? আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে মেসি নিজেই যখন ইচ্ছা এই সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তিনি চান না যে পুরো বছর জুড়ে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক
মেসি চলতি মাসে আর্জেন্টিনার উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচগুলিতে অংশ নেননি। ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলার সময় তিনি আডাক্টর পেশিতে “কম-মাত্রার” আঘাত পেয়েছিলেন, যার কারণে তাকে জাতীয় দলের থেকে বিরত থাকতে হয়েছিল। তবে মেসির অনুপস্থিতিতেও আর্জেন্টিনা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে প্রথমে উরুগুয়েকে ১-০ গোলে হারায় এবং পরে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয় ৪-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দেয়
স্কালোনি বলেছেন, “আমরা দেখব কী ঘটে, এখনও প্রচুর সময় আছে। আমাদের এক ম্যাচ এক ম্যাচ করে এগোতে হবে, নাহলে বাকি সারা বছর আমরা একই বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকব। আমাদের তাকে একা থাকতে দিতে হবে, আমরা দেখব। তিনি যখন ইচ্ছা তখন সিদ্ধান্ত নেবেন, এ নিয়ে তাকে পাগল করে তুলবেন না।”
যদি মেসি ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে সেটা হবে তার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। ম্যাচের সময় তার বয়স হবে ৩৯ বছর। ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করার পর মেসি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে সেটাই হতে পারে তার শেষ বিশ্বকাপ। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন
গত বছর অক্টোবরে মেসি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “মুহূর্তে, আমরা দেখব। আমি সময়কে ত্বরান্বিত করতে বা সামনে তাকাতে পছন্দ করি না। আমি প্রতিদিন উপভোগ করার চেষ্টা করি। আশা করি এই স্তরে খেলা চালিয়ে যেতে পারব যাতে ভালো অনুভব করি এবং সুখী থাকি। যখন আমি যা ভালোবাসি তা করতে পারি, আমি সুখী হই। আমি ২০২৬ টুর্নামেন্টে পৌঁছানোর চেয়ে সেটাকে বেশি মূল্য দিই।”
আর্জেন্টিনার সতীর্থরা অবশ্য মেসির ফিরে আসার আশা ছাড়েননি। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে গোল করা স্ট্রাইকার জুলিয়ান আলভারেজ বলেছেন, “মেসি থাকলে আমরা হয়তো আরও দুই বা তিনটি গোল করতে পারতাম।” মধ্যমাঠের খেলোয়াড় রোদ্রিগো দে পাউল-ও তার সমর্থন জানিয়েছেন: “আমাদের দলের সেরা পারফর্মান্স আসে যখন ১০ নম্বর মাঠে থাকেন, কারণ তিনি সর্বকালের সেরা।”
বর্তমানে আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে এবং আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য ইতিমধ্যেই যোগ্যতা অর্জন করেছে। আর্জেন্টিনা জাপান, নিউজিল্যান্ড ও ইরানের সাথে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের প্রথম যোগ্যতাপ্রাপ্ত দলগুলির একটি
মেসি ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপে নিজের ছাপ রেখেছেন। আটবারের বল্যাঁ ডি’অর বিজয়ী মেসি ২০২২ সালে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি জিতিয়েছেন। তিনি ক্লাব ফুটবলে ৭৪০ গোল ও ৩৫৮ অ্যাসিস্ট সহ ১০০০টিরও বেশি গোল কন্ট্রিবিউশন করেছেন, যা তাকে ফুটবল ইতিহাসের একজন কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি টিএনটি স্পোর্টস আর্জেন্টিনার সাংবাদিক ম্যাক্সিমিলিয়ানো গ্রিল্লো জানিয়েছেন যে বার্সেলোনা ২০২৬ বিশ্বকাপের পরে মেসিকে ক্লাবে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। ইন্টারেস্টিংভাবে, এই সময়ে মেসির ইন্টার মায়ামির সাথে বর্তমান চুক্তিও শেষ হবে। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ফুটবল খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
মেসির সম্ভাব্য অবসরের বিষয়টি আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে বাধ্য করেছে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তাদের সাম্প্রতিক জয় প্রমাণ করে যে তারা মেসি ছাড়াও ভালো পারফর্ম করতে সক্ষম। তবে ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সাথে মেসিকে দেখার জন্য ফ্যানরা উদগ্রীব থাকবেন
চলতি বছর ইন্টার মায়ামির হয়ে মেসি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। তিনি সিজনের শুরুতে ৩টি ম্যাচে ২ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট করে এমএলএস ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত ৪০টি গোল কন্ট্রিবিউশন করার রেকর্ড গড়েছেন। তবে পরবর্তীতে আঘাতের কারণে তাকে তিনটি ম্যাচ মিস করতে হয়েছিল।
মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, আর্জেন্টিনা এখন থেকেই সে পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোচ স্কালোনির মতে, বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন এবং ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জয় আর্জেন্টিনার ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। তবে আর্জেন্টিনা এবং ফুটবল বিশ্বের জন্য সর্বোত্তম হবে যদি ‘সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়’ মেসি আরও একবার বিশ্বকাপের মাঠে দেখা যায়।