Wimbledon Champion Carlos Alcaraz: ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই, রবিবার। লন্ডনের সেন্টার কোর্টে ঘটে গেল টেনিস জগতের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্প্যানিশ তারকা কার্লোস আলকারাজ দ্বিতীয়বারের মতো উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। তাঁর এই জয় শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যই নয়, এটি একটি যুগের পরিসমাপ্তি এবং নতুন এক যুগের সূচনার ইঙ্গিত বহন করছে।
২১ বছর বয়সী আলকারাজ ৩৭ বছর বয়সী সার্বিয়ান কিংবদন্তি নোভাক জকোভিচকে পরাজিত করে এই শিরোপা অর্জন করেছেন। ফলাফল ছিল ৬-২, ৬-২, ৭-৬ (৭/৪)। এই জয়ের মাধ্যমে আলকারাজ টানা দ্বিতীয়বার উইম্বলডন জয়ী হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন।
গত বছরের ফাইনালে জকোভিচকে হারিয়ে আলকারাজ প্রথমবার উইম্বলডন জয়ী হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি পাঁচ সেটের এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার তিনি মাত্র তিন সেটেই জকোভিচকে পরাস্ত করে দেখালেন যে তিনি শুধু ভাগ্যবান নন, বরং একজন প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন।
প্রথম দুটি সেটে আলকারাজ পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তার করেন। তাঁর শক্তিশালী ফোরহ্যান্ড শট এবং দ্রুত মুভমেন্টের সামনে জকোভিচ অসহায় হয়ে পড়েন। তৃতীয় সেটে জকোভিচ কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু টাই-ব্রেকে আলকারাজের দৃঢ়তা ও দক্ষতার কাছে তা টিকতে পারেনি।
এই জয়ের মাধ্যমে আলকারাজ নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করলেন যে তিনি বর্তমান সময়ের সেরা টেনিস খেলোয়াড়। গত মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পর এখন উইম্বলডন জয় তাঁর প্রতিভার আরেক নিদর্শন। তিনি ওপেন এরার ইতিহাসে ষষ্ঠ পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরে ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডন জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করলেন।
অন্যদিকে, জকোভিচের জন্য এটি ছিল একটি হতাশাজনক পরাজয়। তিনি এই ম্যাচে জয়ী হলে রেকর্ড ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জয় করতে পারতেন, যা পুরুষ ও মহিলা উভয় বিভাগে সর্বোচ্চ হত। এছাড়া তিনি রজার ফেডেরারের রেকর্ড ৮টি উইম্বলডন শিরোপা জয়ের সঙ্গে সমান করতে পারতেন। কিন্তু আলকারাজের কাছে পরাজয়ের ফলে সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।
ম্যাচের পর আলকারাজ বলেন, “আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন এই মুহূর্তের স্বপ্ন দেখতাম। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। নোভাকের বিরুদ্ধে জেতা সবসময়ই কঠিন, কিন্তু আমি নিজের সেরাটা দিয়েছি।”
জকোভিচ পরাজয় মেনে নিয়ে বলেন, “কার্লোস সত্যিই অসাধারণ খেলেছে। তিনি প্রথম দুটি সেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। আমি তৃতীয় সেটে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা যথেষ্ট ছিল না।”
এই জয়ের মাধ্যমে আলকারাজ প্রমাণ করলেন যে তিনি শুধু ভবিষ্যতের তারকা নন, বরং বর্তমানের সেরা। তাঁর এই পারফরম্যান্স টেনিস জগতে একটি নতুন যুগের সূচনা করল। অন্যদিকে জকোভিচের এই পরাজয় প্রমাণ করে যে সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেককেই পরিবর্তন মেনে নিতে হয়।
এই মৌসুমে নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে
এই মৌসুমে উইম্বলডনে বেশ কয়েকটি নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে:
১. কার্লোস আলকারাজ একই বছরে ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডন জয়ী হওয়া ওপেন এরার ষষ্ঠ পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন।
২. আলকারাজ ২১ বছর ৭০ দিন বয়সে একই বছরে রোলাঁ গারোস ও উইম্বলডন জয়ী হওয়া ওপেন এরার সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড করেছেন।
৩. আলকারাজ টানা দ্বিতীয়বার উইম্বলডন জয়ী হওয়া প্রথম স্প্যানিশ খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন।
৪. আলকারাজ ২১ বছর বয়সের মধ্যে ৪টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী হওয়া চতুর্থ পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড করেছেন।
৫. জাসমিন পাওলিনি ১৯৭৪ সালের পর প্রথম মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরে ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডনের ফাইনালে পৌঁছেছেন।
এই রেকর্ডগুলো প্রমাণ করে যে এবারের উইম্বলডন টুর্নামেন্টটি ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য এবং ঐতিহাসিক।
উইম্বলডন ২০২৪ শেষ হলো, কিন্তু এর প্রভাব আগামী দিনগুলোতেও অনুভূত হবে। আলকারাজের এই জয় তাঁকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে, আর জকোভিচের জন্য এটি হবে নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ। টেনিস প্রেমীরা এখন অপেক্ষায় থাকবেন আগামী গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টের জন্য, যেখানে এই দুই মহাতারকার মধ্যে আবারও দ্বৈরথ দেখা যেতে পারে।