Common winter health issues: শীতকাল এলেই নানা রকম রোগব্যাধি মাথাচাড়া দেয়। তাপমাত্রা কমে যাওয়া, শুষ্ক আবহাওয়া এবং ঘরের ভিতরে বেশি সময় কাটানোর কারণে শীতকালে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই সময় সর্দি-কাশি, ফ্লু, নিউমোনিয়াসহ নানা রকম শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। এছাড়াও ত্বকের সমস্যা, জয়েন্ট ব্যথা, হৃদরোগের ঝুঁকি ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই শীতকালে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।শীতকালীন ১০টি প্রধান রোগের মধ্যে রয়েছে:
সর্দি হল শীতকালের সবচেয়ে সাধারণ রোগ। এটি রাইনোভাইরাস নামক ভাইরাসের কারণে হয়। প্রধান লক্ষণগুলি হল নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, গলা ব্যথা, কাশি ইত্যাদি। সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পানি পান করা এবং ভিটামিন সি খাওয়া উপকারী। হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ফ্লু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। এর লক্ষণগুলি সর্দির চেয়ে বেশি তীব্র হয় – জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি। ফ্লু টিকা নেওয়া, হাত ধোয়া এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা প্রতিরোধে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেওয়া যেতে পারে।
তৃণমূলে দুর্নীতি: তবুও সাধারণ মানুষের আস্থা কেন অবিচল?
নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের একটি গুরুতর সংক্রমণ। এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হতে পারে। প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি। বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ। নিউমোকোকাল টিকা নেওয়া, ধূমপান ত্যাগ করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
ব্রংকাইটিস হল শ্বাসনালীর প্রদাহ। এটি সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়। প্রধান লক্ষণ হল দীর্ঘস্থায়ী কাশি যা কফযুক্ত হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বুকে চাপ অনুভূতি, হালকা জ্বর ইত্যাদি। ধূমপান এড়ানো, ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা এবং ইনহেলার ব্যবহার করা সাহায্য করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে থেকেই সেরে যায়।
সাইনাসাইটিস হল সাইনাস গুহার প্রদাহ। এটি সাধারণত সর্দি বা অ্যালার্জির জটিলতা হিসেবে দেখা দেয়। প্রধান লক্ষণগুলি হল নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মুখের সামনের দিকে ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি। স্টিম ইনহেলেশন, সেলাইন নেজাল স্প্রে ব্যবহার করা এবং অ্যালার্জি এড়িয়ে চলা সাহায্য করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
অ্যাজমা রোগীদের শীতকালে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাস অ্যাজমার লক্ষণগুলি বাড়িয়ে দিতে পারে। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভূতি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ওষুধ সেবন, ইনহেলার ব্যবহার এবং ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা উচিত।
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এতে চুলকানি, ফাটা ত্বক ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। একজিমা রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা, গরম পানিতে স্নান না করা এবং ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা সাহায্য করতে পারে। তীব্র অবস্থায় ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শীতে জয়েন্টের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। হাঁটু, কব্জি, আঙুল ইত্যাদি জয়েন্টে ব্যথা ও শক্ততা অনুভূত হতে পারে। গরম কম্প্রেস ব্যবহার করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী। ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
শীতকালে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় রক্তনালী সংকুচিত হয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক ঘাম ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ধূমপান ত্যাগ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শীতকালে দিনের বেলা কম হওয়ায় অনেকের মধ্যে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। এটিকে মৌসুমি বিষণ্ণতা বা SAD বলা হয়। ক্লান্তি, মেজাজ খারাপ থাকা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন সূর্যের আলোয় কিছুটা সময় কাটানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া সাহায্য করতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এসির অতিব্যবহার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
• নিয়মিত হাত ধোয়া এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
• পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা
• নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ঘুমের পরিমাণ ঠিক রাখা
• ধূমপান ত্যাগ করা
• প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া (যেমন ফ্লু শট)
• উষ্ণ পোশাক পরা এবং শরীর গরম রাখা
• ঘরের ভেতরে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখা
শীতকালে এই সতর্কতাগুলি মেনে চললে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন