Debolina Roy
১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

শীতকালীন ১০টি প্রধান রোগ: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

Common winter health issues: শীতকাল এলেই নানা রকম রোগব্যাধি মাথাচাড়া দেয়। তাপমাত্রা কমে যাওয়া, শুষ্ক আবহাওয়া এবং ঘরের ভিতরে বেশি সময় কাটানোর কারণে শীতকালে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই সময় সর্দি-কাশি, ফ্লু, নিউমোনিয়াসহ নানা রকম শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। এছাড়াও ত্বকের সমস্যা, জয়েন্ট ব্যথা, হৃদরোগের ঝুঁকি ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই শীতকালে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।শীতকালীন ১০টি প্রধান রোগের মধ্যে রয়েছে:

১. সাধারণ সর্দি (Common Cold):

সর্দি হল শীতকালের সবচেয়ে সাধারণ রোগ। এটি রাইনোভাইরাস নামক ভাইরাসের কারণে হয়। প্রধান লক্ষণগুলি হল নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, গলা ব্যথা, কাশি ইত্যাদি। সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পানি পান করা এবং ভিটামিন সি খাওয়া উপকারী। হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

২. ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু:

ফ্লু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। এর লক্ষণগুলি সর্দির চেয়ে বেশি তীব্র হয় – জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি। ফ্লু টিকা নেওয়া, হাত ধোয়া এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা প্রতিরোধে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেওয়া যেতে পারে।
তৃণমূলে দুর্নীতি: তবুও সাধারণ মানুষের আস্থা কেন অবিচল?

৩. নিউমোনিয়া:

নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের একটি গুরুতর সংক্রমণ। এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হতে পারে। প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি। বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ। নিউমোকোকাল টিকা নেওয়া, ধূমপান ত্যাগ করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

৪. ব্রংকাইটিস:

ব্রংকাইটিস হল শ্বাসনালীর প্রদাহ। এটি সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়। প্রধান লক্ষণ হল দীর্ঘস্থায়ী কাশি যা কফযুক্ত হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বুকে চাপ অনুভূতি, হালকা জ্বর ইত্যাদি। ধূমপান এড়ানো, ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা এবং ইনহেলার ব্যবহার করা সাহায্য করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে থেকেই সেরে যায়।

৫. সাইনাসাইটিস:

সাইনাসাইটিস হল সাইনাস গুহার প্রদাহ। এটি সাধারণত সর্দি বা অ্যালার্জির জটিলতা হিসেবে দেখা দেয়। প্রধান লক্ষণগুলি হল নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মুখের সামনের দিকে ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি। স্টিম ইনহেলেশন, সেলাইন নেজাল স্প্রে ব্যবহার করা এবং অ্যালার্জি এড়িয়ে চলা সাহায্য করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।

৬. অ্যাজমা:

অ্যাজমা রোগীদের শীতকালে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাস অ্যাজমার লক্ষণগুলি বাড়িয়ে দিতে পারে। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভূতি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ওষুধ সেবন, ইনহেলার ব্যবহার এবং ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা উচিত।

৭. শুষ্ক ত্বক ও একজিমা:

শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এতে চুলকানি, ফাটা ত্বক ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। একজিমা রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা, গরম পানিতে স্নান না করা এবং ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা সাহায্য করতে পারে। তীব্র অবস্থায় ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৮. জয়েন্ট ব্যথা ও আর্থ্রাইটিস:

শীতে জয়েন্টের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। হাঁটু, কব্জি, আঙুল ইত্যাদি জয়েন্টে ব্যথা ও শক্ততা অনুভূত হতে পারে। গরম কম্প্রেস ব্যবহার করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী। ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

৯. হৃদরোগের ঝুঁকি:

শীতকালে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় রক্তনালী সংকুচিত হয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক ঘাম ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ধূমপান ত্যাগ করা গুরুত্বপূর্ণ।

১০. মৌসুমি বিষণ্ণতা (Seasonal Affective Disorder):

শীতকালে দিনের বেলা কম হওয়ায় অনেকের মধ্যে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। এটিকে মৌসুমি বিষণ্ণতা বা SAD বলা হয়। ক্লান্তি, মেজাজ খারাপ থাকা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন সূর্যের আলোয় কিছুটা সময় কাটানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া সাহায্য করতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এসির অতিব্যবহার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

শীতকালীন এই রোগগুলি প্রতিরোধ করতে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

• নিয়মিত হাত ধোয়া এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
• পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা
• নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ঘুমের পরিমাণ ঠিক রাখা
• ধূমপান ত্যাগ করা
• প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া (যেমন ফ্লু শট)
• উষ্ণ পোশাক পরা এবং শরীর গরম রাখা
• ঘরের ভেতরে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখা

শীতকালে এই সতর্কতাগুলি মেনে চললে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close