২০২৫ সালের বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধুসুলভ দেশ: যেখানে অতিথিরা অনুভব করে নিজ ঘরের উষ্ণতা

যখন আমরা ভ্রমণের পরিকল্পনা করি বা নতুন কোনো দেশে বসবাসের কথা ভাবি, তখন সেই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সেখানকার মানুষের আচরণ এবং বন্ধুসুলভ মনোভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একটি…

Manoshi Das

 

যখন আমরা ভ্রমণের পরিকল্পনা করি বা নতুন কোনো দেশে বসবাসের কথা ভাবি, তখন সেই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সেখানকার মানুষের আচরণ এবং বন্ধুসুলভ মনোভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একটি দেশের স্থানীয় জনগণের উষ্ণ অভ্যর্থনা, সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব যেকোনো পর্যটক বা প্রবাসীর অভিজ্ঞতাকে বহুগুণে আনন্দময় করে তুলতে পারে। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, ২০২৫ সালের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধুসুলভ দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে মেক্সিকো তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে । এই তালিকায় থাকা দেশগুলো কেবল তাদের সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যই নয়, বরং তাদের অসাধারণ আতিথেয়তার জন্যও বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষা, বিশেষ করে InterNations-এর মতো সংস্থার ‘এক্সপ্যাট ইনসাইডার’ জরিপের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এই জরিপগুলোতে প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা, যেমন—স্থানীয়দের সাথে বন্ধুত্ব করার সহজতা, সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানের মতো বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হয় । এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা ২০২৫ সালের শীর্ষ ১০টি বন্ধুসুলভ দেশ এবং তাদের এই খ্যাতি অর্জনের পেছনের কারণগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করব।

একটি দেশকে ‘বন্ধুসুলভ’ হিসেবে কী নির্ধারণ করে?

কোনো দেশকে “বন্ধুসুলভ” হিসেবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন সূচকের উপর ভিত্তি করে সম্পন্ন হয়। এটি কেবল মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং এটি বিভিন্ন জরিপ এবং গবেষণার মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। InterNations-এর ‘এক্সপ্যাট ইনসাইডার’ সমীক্ষার মতো গবেষণাগুলো এক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এতে হাজার হাজার প্রবাসী তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ।

এই সমীক্ষাগুলোতে মূলত তিনটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়:

  • স্থানীয়দের বন্ধুত্ব (Local Friendliness): এই সূচকটি পরিমাপ করে যে একটি দেশের সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে বিদেশিদের প্রতি তাদের আচরণ কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ ।

  • সংস্কৃতি এবং অভ্যর্থনা (Culture & Welcome): একটি দেশের সংস্কৃতি কতটা সহজবোধ্য এবং নতুনদের জন্য কতটা স্বাগতপূর্ণ, তা এই সূচকের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। প্রবাসীরা সেই দেশে নিজেদের কতটা আপন মনে করেন, তাও এখানে পরিমাপ করা হয় ।

  • বন্ধু তৈরি করার সহজতা (Finding Friends): নতুন একটি দেশে সামাজিক জীবন গড়ে তোলা এবং স্থানীয় মানুষের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা কতটা সহজ, তার উপর ভিত্তি করে এই সূচকটি তৈরি হয় ।

এই বিষয়গুলো ছাড়াও, একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশও পরোক্ষভাবে তার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখে ।

২০২৫ সালের শীর্ষ ১০ বন্ধুসুলভ দেশ

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সবচেয়ে বন্ধুসুলভ দেশগুলোর তালিকায় এমন কিছু দেশ স্থান পেয়েছে, যারা তাদের আন্তরিকতা এবং অসাধারণ আতিথেয়তার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত । নিচে এই ১০টি দেশের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

১. মেক্সিকো

মেক্সিকো দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের অন্যতম বন্ধুসুলভ দেশ হিসেবে তার সুনাম বজায় রেখেছে। InterNations-এর ‘ইজ অফ সেটলিং ইন’ সূচকে এই দেশটি প্রায় প্রতি বছরই শীর্ষস্থান দখল করে । এখানকার মানুষ অত্যন্ত আন্তরিক এবং বিদেশিদের প্রতি তাদের উষ্ণ মনোভাব যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৮৮% প্রবাসী জানিয়েছেন যে তারা মেক্সিকোতে নিজেদের স্বাগত বোধ করেন, যা বিশ্বব্যাপী গড়ের (৬২%) চেয়ে অনেক বেশি ।

মেক্সিকোর মানুষ সামাজিক এবং পারিবারিক বন্ধনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তাদের সংস্কৃতিতে উৎসব এবং উদযাপন একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে, যেখানে তারা বিদেশিদেরও আনন্দের সাথে আমন্ত্রণ জানায়। প্রায় ৭০% প্রবাসী একমত যে মেক্সিকোতে স্থানীয় বন্ধু তৈরি করা খুবই সহজ । জীবনযাত্রার স্বল্প ব্যয় এবং সুন্দর আবহাওয়ার কারণেও দেশটি প্রবাসীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

২. ব্রাজিল

ব্রাজিল তার বর্ণময় সংস্কৃতি, সাম্বা নাচ এবং কার্নিভালের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তবে এর থেকেও বড় পরিচয় হলো এখানকার মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত স্বভাব। ব্রাজিলিয়ানরা অত্যন্ত বহির্মুখী এবং অতিথিপরায়ণ। তারা আনন্দের সাথে অন্যদের সাথে মিশতে ভালোবাসে এবং পর্যটকদের আপন করে নেয় । InterNations-এর সমীক্ষাতেও ব্রাজিল বন্ধুসুলভ দেশ হিসেবে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে ।

ব্রাজিলের মানুষ জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে ভালোবাসে। তাদের এই ইতিবাচক মনোভাব বিদেশিদের উপরও প্রভাব ফেলে, যা তাদের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করে তোলে। যদিও এখানে সামাজিক জীবনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে স্থানীয়দের আন্তরিকতা সেই ঘাটতি পূরণ করে দেয়।

৩. ফিলিপাইন

ফিলিপাইনকে প্রায়শই বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষের দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয় । এখানকার মানুষ তাদের অসাধারণ আতিথেয়তা এবং হাসিমুখের জন্য পরিচিত। ফিলিপিনো সংস্কৃতিতে পরিবার এবং সম্প্রদায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি, এবং তারা অতিথিদের পরিবারের সদস্যের মতোই আপন করে নেয়। InterNations-এর সমীক্ষায় ফিলিপাইন ‘লোকাল ফ্রেন্ডলিনেস’ বা স্থানীয় বন্ধুত্ব সূচকে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ।

ইংরেজি ভাষার ব্যাপক প্রচলন থাকার কারণে এখানে পর্যটক বা প্রবাসীদের জন্য যোগাযোগ করা এবং স্থানীয়দের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা অনেক সহজ। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যেমন—সমুদ্রসৈকত এবং দ্বীপপুঞ্জ, মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের সাথে মিলিত হয়ে ফিলিপাইনকে একটি অসাধারণ গন্তব্যে পরিণত করেছে।

৪. ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়া তার ‘গোতোং রোয়ং’ বা পারস্পরিক সহযোগিতার সংস্কৃতির জন্য পরিচিত, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয় । এখানকার মানুষ অত্যন্ত বিনয়ী এবং সহযোগিতাপূর্ণ। বিশেষ করে বালি, জাকার্তা এবং যোগজাকার্তার মতো শহরগুলোতে বিদেশিদের প্রতি স্থানীয়দের উষ্ণ মনোভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয় । InterNations-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯০%-এরও বেশি প্রবাসী ইন্দোনেশিয়ায় স্থানীয়দের দ্বারা স্বাগত বোধ করেন ।

ইন্দোনেশিয়ার মানুষ বিদেশিদের সংস্কৃতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং তারা আনন্দের সাথে নিজেদের ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রা অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়। তুলনামূলকভাবে কম জীবনযাত্রার ব্যয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের কারণে দেশটি প্রবাসীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে ।

৫. ভিয়েতনাম

ভিয়েতনাম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটক এবং প্রবাসীদের কাছে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় দেশ হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর পেছনে রয়েছে এর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ । এখানকার বড় শহর, যেমন—হ্যানয় এবং হো চি মিন সিটি, তাদের কর্মব্যস্ত জীবনের পাশাপাশি স্থানীয়দের আন্তরিকতার জন্য পরিচিত ।

ভিয়েতনামিরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির হলেও, তারা অত্যন্ত দয়ালু এবং অতিথিপরায়ণ। পর্যটকরা প্রায়শই স্থানীয়দের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত সাহায্য এবং আন্তরিকতা পেয়ে থাকেন। দেশটির ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার মানও এটিকে প্রবাসীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

৬. ওমান

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ওমান তার ব্যতিক্রমী বন্ধুত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য পরিচিত। এখানকার মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় এবং বিদেশিদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। InterNations-এর সমীক্ষায় ওমান ‘কালচার অ্যান্ড ওয়েলকাম’ উপশ্রেণীতে শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে । ওমানিরা তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত এবং তারা আনন্দের সাথে পর্যটকদের কাছে তা তুলে ধরে।

অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর তুলনায় ওমানের সমাজ ব্যবস্থা অনেকটাই খোলামেলা, যা প্রবাসীদের জন্য মানিয়ে নেওয়া সহজ করে তোলে। এখানকার শান্ত পরিবেশ এবং মানুষের সহযোগিতামূলক মনোভাব দেশটিকে একটি অনন্য বন্ধুসুলভ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

৭. কোস্টারিকা

“পুরা ভিদা” বা “বিশুদ্ধ জীবন” হলো কোস্টারিকার মূলমন্ত্র, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়। এখানকার মানুষ অত্যন্ত সুখী, শান্ত এবং প্রকৃতিপ্রেমী। তারা বিদেশিদের উষ্ণভাবে স্বাগত জানায় এবং তাদের জীবনযাত্রার অংশ করে নিতে ভালোবাসে। কোস্টারিকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশবান্ধব নীতিও দেশটিকে বসবাসের জন্য একটি আদর্শ জায়গা করে তুলেছে ।

স্থানীয়রা, যারা “টিকোস” নামে পরিচিত, তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং স্বচ্ছন্দ আচরণের জন্য বিখ্যাত। এই দেশটি শুধুমাত্র তার রেইনফরেস্ট বা সমুদ্রসৈকতের জন্যই নয়, বরং মানুষের আন্তরিকতার জন্যও পর্যটকদের কাছে একটি প্রিয় গন্তব্য।

৮. থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড “হাসির দেশ” বা “Land of Smiles” নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এবং এর কারণ হলো এখানকার মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিনয়ী স্বভাব। থাই সংস্কৃতিতে সম্মান এবং আতিথেয়তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। পর্যটকরা প্রায়শই এখানকার স্থানীয়দের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং সাহায্য পেয়ে থাকেন । InterNations-এর সমীক্ষায় থাইল্যান্ড ‘লোকাল ফ্রেন্ডলিনেস’ সূচকে শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে ।

থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্প অত্যন্ত উন্নত, যার ফলে এখানকার মানুষ বিদেশিদের সাথে মিশতে অভ্যস্ত। তাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং দেশের সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ থাইল্যান্ডকে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

৯. কেনিয়া

আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে কেনিয়া তার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। InterNations-এর সমীক্ষায় কেনিয়া ‘ফাইন্ডিং ফ্রেন্ডস’ এবং ‘লোকাল ফ্রেন্ডলিনেস’ উভয় সূচকেই শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে । এখানকার মানুষ অত্যন্ত সামাজিক এবং বিদেশিদের প্রতি তাদের আচরণ খুবই আন্তরিক।

কেনিয়ার বিভিন্ন উপজাতির নিজস্ব সংস্কৃতি থাকলেও, সামগ্রিকভাবে তারা অতিথিপরায়ণ হিসেবে পরিচিত। দেশটির অসাধারণ বন্যপ্রাণী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষের উষ্ণতা পর্যটকদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

১০. গ্রীস

গ্রীস তার প্রাচীন ইতিহাস এবং সুন্দর দ্বীপপুঞ্জের জন্য বিখ্যাত। তবে এর পাশাপাশি এখানকার মানুষের আতিথেয়তাও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। গ্রীকরা, বিশেষ করে ছোট শহর এবং দ্বীপগুলোতে, অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ এবং খোলামেলা মনের অধিকারী । তারা পর্যটকদের সাথে কথা বলতে এবং নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে ভালোবাসে।

‘ফিলোক্সেনিয়া’ বা ‘অচেনা মানুষের প্রতি ভালোবাসা’ গ্রীক সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই তারা অতিথিদের স্বাগত জানায়, যা পর্যটকদের নিজেদের ঘরের মতো অনুভূতি দেয়।

বন্ধুসুলভ দেশের তালিকা (সারাংশ)

নিচের সারণীতে ২০২৫ সালের শীর্ষ ১০টি বন্ধুসুলভ দেশের তালিকা দেওয়া হলো:

র‍্যাঙ্ক দেশ
মেক্সিকো
ব্রাজিল
ফিলিপাইন
ইন্দোনেশিয়া
ভিয়েতনাম
ওমান
কোস্টারিকা
থাইল্যান্ড
কেনিয়া
১০ গ্রীস

কেন কিছু দেশ অন্যদের চেয়ে বেশি বন্ধুসুলভ?

কোনো দেশের মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের পেছনে একাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক কারণ জড়িত থাকে।

  • সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ: কিছু সংস্কৃতিতে আতিথেয়তা এবং সামাজিক বন্ধনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপাইনের ‘পাকিকিসামা’ (সম্প্রীতি) এবং ইন্দোনেশিয়ার ‘গোতোং রোয়ং’ (পারস্পরিক সহযোগিতা) তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মূল ভিত্তি । একইভাবে, গ্রীসের ‘ফিলোক্সেনিয়া’ ধারণাটি অতিথিদের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধকে নির্দেশ করে।

  • অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: যে দেশগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রয়েছে, সেখানকার মানুষ সাধারণত বেশি সুখী এবং খোলামেলা মনের হয় । অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক চাপ মানুষের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

  • পর্যটনের প্রভাব: যে দেশগুলোর অর্থনীতি পর্যটনের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, সেখানকার মানুষ পর্যটকদের সাথে মিশতে এবং তাদের সাহায্য করতে বেশি অভ্যস্ত থাকে । থাইল্যান্ড এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

বিপরীতে, কিছু দেশ বন্ধুসুলভ দেশের তালিকায় নিচের দিকে অবস্থান করে। উদাহরণস্বরূপ, কুয়েত, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে প্রবাসীরা প্রায়শই সামাজিক জীবন গড়ে তুলতে এবং স্থানীয়দের সাথে বন্ধুত্ব করতে অসুবিধার সম্মুখীন হন । এর পেছনে ভাষার বাধা, সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং একটি অন্তর্মুখী সমাজ ব্যবস্থা দায়ী থাকতে পারে ।

​সবশেষে, একটি দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ পর্যটক এবং প্রবাসী উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০২৫ সালের এই তালিকাটি দেখায় যে উষ্ণ আতিথেয়তা এবং আন্তরিকতাই একটি দেশকে বিশ্ব মঞ্চে সত্যিই অসাধারণ করে তোলে।

About Author
Manoshi Das

মানসী দাস একজন মার্কেটিং এর ছাত্রী এবং আমাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তিনি তাঁর অধ্যয়ন ও কর্মজীবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজার ও ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন। একজন উদীয়মান লেখিকা হিসেবে, মানসী বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা, স্থানীয় বাজারের প্রবণতা এবং ব্র্যান্ডিং কৌশল নিয়ে লিখে থাকেন। তাঁর লেখনীতে বাংলাদেশের যুব সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়।