India investment opportunities: ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ভারতের অর্থনীতিকে “বিশ্বের উজ্জ্বল আলো” আখ্যা দিয়ে গ্লোবাল বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে: “যদি আপনি বিনিয়োগ করতে চান, ভারতই এখন আদর্শ লগ্নিস্থল (ideal investment destination)”। একই সময়ে, ডয়চে ব্যাঙ্কের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত মিলেছে যে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা অর্থনৈতিক শ্লথতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে ভারত। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৫.৪% থেকে বেড়ে ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৬.২% হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুটি সংস্থার পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট—অস্থায়ী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদে ভারতের বৃদ্ধির গল্প অটুট।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের দৃষ্টিতে ভারত: কেন ‘আদর্শ লগ্নিস্থল’?
“ভারতের বর্তমান প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই,” বলেছেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর অগাস্টে টানো কউয়ামে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অসমে আয়োজিত Advantage Assam 2.0 সম্মেলনে তিনি ব্যাখ্যা করেন:
- FII আস্থা ও বাজার ব্যবস্থাপনা: ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি ১৪ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা (FII) ভারতীয় শেয়ার বাজারে প্রায় ₹২ লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন, যার প্রভাবে সেনসেক্স ১০% নিচে নেমেছে। তবে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, এটি একটি অস্থায়ী প্রবণতা।
- গ্লোবাল সংকটে ভারতের অবস্থান: থাইল্যান্ড বাদে সমস্ত উদীয়মান বাজারে (ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া) FII পুঁজি প্রস্থান করলেও, ভারতের মৌলিক অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী।
- আইএমএফ-এর সমর্থন: আইএমএফ-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গীতা গোপীনাথ বলেছেন, “ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬.৫% হবে। গ্রামীণ চাহিদা ও পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।“
বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি ভারত: IMF-এর নতুন প্রতিবেদনে চমক!
ডয়চে ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন: শ্লথতা শেষ, উত্থানের ইঙ্গিত
২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ডয়চে ব্যাঙ্কের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে:
- জিডিপি প্রবৃদ্ধির পুনরুদ্ধার: ডিসেম্বর ২০২৪ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.২% এ পৌঁছেছে, যা সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের (৫.৪%) তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি।
- অর্থনীতির সম্ভাব্য গতি: FY২৬ (২০২৫-২৬) সালে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭% হতে পারে, তবে বর্তমানে তা ৬.২-৬.৮% সীমার মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস।
- আরবিআই-এর ভূমিকা: ডয়চে ব্যাঙ্কের মতে, এপ্রিল ২০২৫-এ রেপো রেট ০.২৫% কমানো হতে পারে, যা অর্থনৈতিক সক্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করবে।
- অন্যান্য সংস্থার পূর্বাভাস: কোথায় আছে ভারত?
বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও ডয়চে ব্যাঙ্ক ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে:
সংস্থা | ২০২৪-২৫ পূর্বাভাস | ২০২৫-২৬ পূর্বাভাস |
আইএমএফ | ৬.৫% | ৬.৫% |
ডেলয়েট | ৬.৫-৬.৮% | ৬.৭-৭.৩% |
ইকোনমিক সার্ভে | ৬.৪% (প্রাথমিক) | ৬.৩-৬.৮% |
মুডি’স | ৬.৪% | ৬.৪% |
এই টেবিল থেকে স্পষ্ট, ২০২৫-২৬ সালে গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৫%-৭% এর মধ্যে থাকতে পারে, যা ভারতকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির স্থানে রাখবে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্ব
১. বৈশ্বিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ বাধা:
- FII পলায়ন: উচ্চ US বন্ড ইয়েল্ড (সুদ হার)-এর কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা আমেরিকান সম্পদে ঝুঁকছেন।
- কর্পোরেট আয়ের ধীরগতি: ডিসেম্বর ২০২৪ প্রান্তিকে নিফটি ৫০ কোম্পানির বিক্রয় বৃদ্ধির হার ৬.৬%, যা আগের বছরের ৯.২% থেকে নিচে।
- মুদ্রাস্ফীতি: খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি এখনও RBI-এর টার্গেট ৪% এর উপর (ডিসেম্বর ২০২৪-এ ৫.২২%)।
২. সম্ভাবনার দিক:
- অবকাঠামো বিনিয়োগ: সরকার FY২৫-এ ₹১০ লাখ কোটি বাজেট বরাদ্দ রেখেছে, যা রেল, সোলার এনার্জি এবং হাইওয়ে প্রকল্পে কাজে লাগবে।
- উৎপাদন খাতের উন্নতি: PLI (Production-Linked Incentive) স্কিমের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ভারত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের অংশ হয়ে উঠছে।
- ডিজিটাল অর্থনীতি: UPI লেনদেন FY২৪-এ ₹২০০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে গতিশীল রাখছে।
ভবিষ্যতের রূপরেখা: ২০৩০ সালের লক্ষ্য
ডয়চে ব্যাঙ্কের গবেষণা বিভাগের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি বর্তমানের $৩.৫ ট্রিলিয়ন থেকে বেড়ে $৭ ট্রিলিয়নে পৌঁছাবে। এই বৃদ্ধির পথে প্রধান চালিকাশক্তি হবে:
- যুবশক্তির ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড: ভারতের গড় বয়স ২৯ বছর, যা চীনের (৩৮) ও যুক্তরাষ্ট্রের (৩৯) তুলনায় কম।
- এনার্জি ট্রানজিশন: ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ GW নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য।
- এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন: ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল এবং ইলেকট্রনিক্স রপ্তানিতে এশিয়ার শীর্ষ স্থান দখল।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং ডয়চে ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন দুটিই ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতের অর্থনৈতিক শ্লথতা অস্থায়ী। বৈশ্বিক মন্দা ও জিওপলিটিকাল চাপের মধ্যেও দেশটি দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার এগিয়ে নিচ্ছে। রিয়েল এস্টেট, গ্রিন এনার্জি এবং ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিনিয়োগের সুযোগ এখন সর্বাধিক। যেমনটি বিশ্ব ব্যাঙ্কের কউয়ামে বলেছেন, “ভারতই এখন আদর্শ লগ্নিস্থল (ideal investment destination)—এখানকার গতিশীলতা আপনাকে নিশ্চিত রিটার্ন দেবে।”