আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বেড়েছে, আর সেই সঙ্গে বেড়েছে পকেটমারি, স্ক্যাম ও পর্যটক-টার্গেটেড অপরাধের হার। বিভিন্ন ট্রাভেল রিস্ক অ্যানালাইসিস, ইনশুরেন্স ডেটা ও রিভিউ অ্যানালাইসড রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যাংকক, রোম, প্যারিস, বার্সেলোনা, ইস্তাম্বুলের মতো জনপ্রিয় শহরগুলো এখন বিশ্বজুড়ে পকেটমারি ও ছোটখাটো চুরির শীর্ষ হটস্পট হিসেবে উঠে এসেছে। এই শহরগুলোতে ভিড় এলাকায় প্রতি হাজার অনলাইন রিভিউর মধ্যে একাধিকবার “pickpocket”, “scam” বা “theft” উল্লেখ পাওয়া যায়, যা পর্যটকদের জন্য বাস্তব ঝুঁকির ইঙ্গিত।
নিচে বাস্তবসম্মত, সাম্প্রতিক ডেটা ও বিশ্বস্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্বের ১০টি শহরের একটি তালিকা দেওয়া হলো, যেখানে বর্তমানে পকেটমারি ও পর্যটক-স্ক্যামের উল্লেখ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তালিকাটি কোনো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য নয়, বরং ভ্রমণবিষয়ক সচেতনতা, সেফটি প্ল্যানিং এবং প্র্যাকটিক্যাল সিকিউরিটি টিপস দেওয়ার জন্য তৈরি।
ডেটা ও সোর্স: এই র্যাঙ্কিং কীভাবে তৈরি
ব্যবহৃত রিপোর্ট ও জরিপ
নির্দিষ্ট কোনো একক সরকারি “পকেটমারি সূচক” নেই; তাই একাধিক বিশ্বস্ত উৎসের যৌথ বিশ্লেষণ থেকে চিত্রটি দাঁড় করানো হয়েছে। মূল যে ধরনের সোর্স ব্যবহার করা হয়েছে –
-
ট্রাভেল রিস্ক ও ইনশুরেন্স গাইডলাইন রিপোর্ট (যেমন Quotezone-এর ইউরোপীয় পকেটমারি পরিসংখ্যান)।
-
পর্যটক রিভিউতে “pickpocket”, “scam”, “theft” শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি বিশ্লেষণ করা স্টাডি, যেখানে ব্যাংকককে ২০২৫ সালে বিশ্বের শীর্ষ পকেটমারি ও স্ক্যাম হটস্পট হিসেবে র্যাঙ্ক করা হয়েছে।
-
ইউরোপের বড় শহরগুলোর পকেটমারি হটস্পট নিয়ে উচ্চ-সার্কুলেশন মিডিয়ার রিপোর্ট (যেমন ট্রাভেল কলাম, ফিচার আর্টিকেল)।
এই সব রিপোর্ট একত্রে ইঙ্গিত দেয়, কোন কোন শহরে ভিড়, পর্যটকঘন এলাকা, গণপরিবহন ও জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটে পকেটমারি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বিশ্বের ১০টি ‘পকেটমার হটস্পট’ শহর (হালনাগাদ চিত্র)
সারসংক্ষেপ টেবিল
নিচের টেবিলে মূলত সাম্প্রতিক রিপোর্টে সবচেয়ে বেশি পকেটমারি/স্ক্যাম উল্লেখ পাওয়া শহরগুলো দেখানো হলো (বর্ণানুক্রমে নয়, সামগ্রিক ঝুঁকি ও উল্লেখের ঘনত্ব বিবেচনায়):
| ক্রম | শহর | দেশ | উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি সূচক/তথ্য |
|---|---|---|---|
| 1 | ব্যাংকক | থাইল্যান্ড | ২০২৫ সালে ভ্রমণকারীর রিভিউ বিশ্লেষণে বিশ্বের ১ নম্বর পকেটমারি ও স্ক্যাম হটস্পট; প্রতি ১,০০০ রিভিউতে প্রায় ৯.৮২টি স্ক্যাম/পকেটমারি উল্লেখ। |
| 2 | রোম | ইতালি | ইউরোপে পকেটমারি উল্লেখের দিক দিয়ে শীর্ষে; প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ ভিজিটরের জন্য প্রায় ৪৭৮টি পকেটমারি রেকর্ডের উল্লেখ আছে, বিশেষ করে ট্রেভি ফাউন্টেন জোনে। |
| 3 | প্যারিস | ফ্রান্স | গ্লোবাল ট্যুরিস্ট হটস্পট হিসেবে বহু বছর ধরে পেটি থিফ ও পকেটমারির জন্য কুখ্যাত; আইফেল টাওয়ার ও মেট্রোতে ঘন ঘন অভিযোগ। |
| 4 | বার্সেলোনা | স্পেন | লা রামব্লা, মেট্রো ও সমুদ্রতটে পর্যটক টার্গেটেড পকেটমারি উল্লেখ খুবই বেশি। |
| 5 | ইস্তাম্বুল | তুরkiye | তাকসিম স্কোয়ার ও গালাতা এলাকায় পর্যটক ঘনত্বের কারণে বহু বছর ধরে পকেটমারি ও স্লাইট–অব–হ্যান্ড স্ক্যামের রিপোর্ট। |
| 6 | আমস্টারডাম | নেদারল্যান্ডস | নাইটলাইফ, রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট ও ভিড়পূর্ণ এলাকা কেন্দ্রিক পকেটমারি ঝুঁকি নিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট। |
| 7 | এথেন্স | গ্রিস | পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও ঐতিহাসিক সাইটের আশেপাশে পকেটমারির উল্লেখ উচ্চ, পর্যটকদের জন্য “ওয়াচ-লিস্টেড” শহর।tempo |
| 8 | ফ্লোরেন্স | ইতালি | স্কয়ার এবং ভিড়পূর্ণ ঐতিহাসিক স্পটে পকেটমারির ঘন ঘন উল্লেখ; ইতালির সামগ্রিক উচ্চ পকেটমারি রেটের অংশ।tempo+1 |
| 9 | বুয়েনোস আইরেস | আর্জেন্টিনা | জনবহুল দক্ষিণ আমেরিকান মেগাসিটি, যেখানে পর্যটক এলাকায় ভিড় ও ডাইভারশন ট্যাকটিকস ব্যবহার করে পকেটমারি প্রচুর।tempo+1 |
| 10 | শাংহাই | চীন | সাম্প্রতিক স্টাডিতে পকেটমারি ও স্ক্যাম রিস্ক স্কোর ৫০-এর ওপরে; শপিং ডিস্ট্রিক্ট ও মেট্রোতে পর্যটক-টার্গেটেড অপরাধ বাড়ছে।travelandtourworld+1 |
এই তালিকা বছরভেদে অল্প পরিবর্তিত হতে পারে, তবে উল্লেখিত শহরগুলো প্রায় সব বড় স্টাডিতেই উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
১. ব্যাংকক, থাইল্যান্ড: বর্তমান “নম্বর ওয়ান” হটস্পট
২০২৫ সালের একটি আন্তর্জাতিক ডেটা অ্যানালাইসিসে দেখা যাচ্ছে, পর্যটক রিভিউতে পকেটমারি ও স্ক্যাম উল্লেখের ঘনত্বের ভিত্তিতে ব্যাংকককে বিশ্বের শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেবে র্যাঙ্ক করা হয়েছে। প্রতি ১,০০০ ভ্রমণ রিভিউর মধ্যে প্রায় ৯.৮২টিতে স্ক্যাম বা পকেটমারি উল্লেখ থাকা এই শহরের জন্য একটি উদ্বেগজনক সিগন্যাল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
-
বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: নাইট মার্কেট, স্ট্রিট ফুড জোন, মন্দির সংলগ্ন উচ্চ ভিড় এলাকা ও টুকটুক/ট্যাক্সি জোন।
-
সাধারণ কৌশল: ভুয়া টুর প্যাকেজ, ওভারপ্রাইসিং, জাল টিকিট, পাশাপাশি ভিড়ের মধ্যে ব্যাগ কাটিং বা মোবাইল/ওয়ালেট টেনে নেওয়া।
২. রোম, ইতালি: ট্রেভি ফাউন্টেনের লুকানো ঝুঁকি
ইউরোপে পকেটমারির হটস্পট নিয়ে একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, ইতালিতে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ পর্যটকের বিপরীতে পকেটমারির উল্লেখ প্রায় ৪৭৮টি, যা ইউরোপে সর্বোচ্চ। এতে রোমের ট্রেভি ফাউন্টেন এলাকা বিশেষভাবে “হাই-রিস্ক” হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮,০০০ পর্যন্ত ভিজিটর ভিড় করেন।
-
ঝুঁকিপূর্ণ স্পট: ট্রেভি ফাউন্টেন, কলোসিয়াম সংলগ্ন ভিড়, মেট্রো ও বাস।
-
প্রচলিত কৌশল: ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি, ভুয়া পিটিশন, “বন্ধুত্বের ব্রেসলেট” অফার করে মনোযোগ সরিয়ে পকেট কাটা।
৩. প্যারিস, ফ্রান্স: রোম্যান্সের শহর, পেটি থিফেরও
দীর্ঘদিন ধরে প্যারিসকে গ্লোবাল পেটি ক্রাইম হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, বিশেষ করে আইফেল টাওয়ার, মন্টমার্ত, মেট্রো স্টেশন ও যাদুঘর এলাকায় পকেটমারির হার উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক ইউরোপ-ভিত্তিক ট্রাভেল রিপোর্টগুলোতে ফ্রান্সকে পকেটমারির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয়েছে, যেখানে প্যারিসের জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটগুলো মূল ফোকাস।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: আইফেল টাওয়ার, লুভর সংলগ্ন ভিড়, RER ও মেট্রো লাইন।
-
প্রচলিত কৌশল: “ডোনেশন পিটিশন” স্ক্যাম, টিকিট লাইনে ধাক্কাধাক্কি, মেট্রোতে ব্যাগের চেইন খুলে নেওয়া।
রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকে প্রতিদিন ৩২ লাখ মানুষের মৃত্যু! জেনে নিন বাঁচার উপায
৪. বার্সেলোনা, স্পেন: লা রামব্লা ও সমুদ্রতটের ফাঁদ
বার্সেলোনা বহু বছর ধরে “পকেটমারির রাজধানী” হিসেবে বিভিন্ন ভ্রমণ ব্লগ ও রিপোর্টে উঠে এসেছে, বিশেষ করে লা রামব্লা, গথিক কোয়ার্টার ও সমুদ্রতট এলাকায়। সাম্প্রতিক ইউরোপিয়ান ডেটায় স্পেনও পকেটমারি উল্লেখের দিক থেকে শীর্ষ ক’টি দেশের মধ্যে রয়েছে।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: লা রামব্লা, বার্সেলোনেটা বিচ, নাইটলাইফ জোন ও মেট্রো।
-
প্রচলিত কৌশল: কাঁধে হাত রাখা, “উৎসবের ভিড়”, বা নাচ–গানের অজুহাতে কাছে এসে পকেট থেকে মূল্যবান জিনিস তুলে নেওয়া।
৫. ইস্তাম্বুল, তুরkiye: ইতিহাসের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা পকেটমার
ইস্তাম্বুল নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দুই দশকের বেশি সময় ধরে পকেটমারি ও কনফিডেন্স ট্রিক নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাকসিম স্কোয়ার, গালাতা টাওয়ার, ট্রামলাইন ও পুরনো শহরের ভিড় এলাকাগুলো এখনো পর্যটকদের জন্য সতর্কতার জায়গা।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: তাকসিম, ইস্তিকলাল স্ট্রিট, গালাতা ব্রিজ, ভিড়পূর্ণ ট্রাম ও বাস।
-
প্রচলিত কৌশল: “ইংরেজি শেখার অজুহাত”, ভুয়া নাইটক্লাব আমন্ত্রণ, ওয়ালেট দেখানোর মতো ট্রিকের সঙ্গে পকেট কাটা।
৬. আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস: নিরাপদ শহর, তবু পকেটমার
আমস্টারডাম সাধারণভাবে নিরাপদ শহর হিসেবে পরিচিত হলেও, নাইটলাইফ জোন ও রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টে পর্যটক-টার্গেটেড পকেটমারি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন ট্রাভেল গাইড ও ইউরোপিয়ান সেফটি রিপোর্টে এটিকে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়, বিশেষ করে ভিড়পূর্ণ রাতের সময়ে।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: সেন্ট্রাল স্টেশন, রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট, ভিড়পূর্ণ বার ও ক্যানাল ট্যুর জেটি।
-
প্রচলিত কৌশল: গ্রুপে ঘিরে ফেলা, সাইকেল/স্কুটার দিয়ে কাছ দিয়ে গিয়ে ব্যাগ/ফোন কেড়ে নেওয়া।
জগন্নাথ দেবের রথের দড়ির আসল নাম কী? জানুন এই পবিত্র রশির অবাক করা কাহিনী
৭. এথেন্স, গ্রিস: মেট্রো ও ঐতিহাসিক সাইটের ঝুঁকি
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে মেট্রো, বাস ও ঐতিহাসিক সাইটের আশেপাশে পকেটমারির উল্লেখ বহু আন্তর্জাতিক ট্রাভেল স্টাডিতে রয়েছে। বিশেষ করে পর্যটকরা একাধিক ব্যাগ, ক্যামেরা ও ফোন নিয়ে যখন গেট বা টিকিট চেকিং পয়েন্ট পার হন, তখন অপরাধীরা সুযোগ নেয়।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: অ্যাক্রোপলিস সংলগ্ন এলাকা, সিন্টাগমা স্কোয়ার, মেট্রো।
-
প্রচলিত কৌশল: শারীরিক দূরত্ব কমিয়ে ভিড় তৈরি, হঠাৎ ঝগড়া বা ধাক্কাধাক্কি সাজিয়ে মনোযোগ সরানো
৮. ফ্লোরেন্স, ইতালি: আর্ট ক্যাপিটাল, পকেটমারির টার্গেটও
ফ্লোরেন্সকে সাধারণভাবে সুন্দর ও সাংস্কৃতিক শহর হিসেবে দেখা হলেও, ভিড়পূর্ণ স্কয়ার ও ঐতিহাসিক ভবনের সামনে পকেটমারির ঘটনা নিয়মিত রিপোর্ট হয়। ইতালির সামগ্রিক উচ্চ পকেটমারি রেটের অংশ হিসেবে ফ্লোরেন্সও পর্যটক সেফটি গাইডে “উচ্চ সতর্কতা” লেভেলে পড়ে।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: প্রধান স্কয়ার, ফেমাস ক্যাথিড্রাল, মিউজিয়ামের সামনে লম্বা লাইন।
-
প্রচলিত কৌশল: পর্যটকের মতো পোশাক পরে মিশে থাকা, ছবি তুলতে সাহায্য করার অজুহাত, ব্যাগ ধরে দেওয়ার নামে চুরি।
৯. বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা: লাতিন আমেরিকার ভিড়ের শহর
বুয়েনোস আইরেস দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম জনবহুল ও পর্যটকসমৃদ্ধ শহর, যেখানে ভিড়পূর্ণ রাস্তা ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে পকেটমারি প্রচুর। বিভিন্ন ভ্রমণ ফিচারে এটিকে “ডাইভারশন ট্যাকটিকস”–নির্ভর পকেটমারির জন্য কুখ্যাত বলা হয়, যেখানে দল বেঁধে অপরাধীরা কাজ করে।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: সিটি সেন্টার, বাস ও সাবওয়ে, ফুটবল ম্যাচের ভিড়।
-
প্রচলিত কৌশল: ভিড় তৈরি করে হঠাৎ পানি বা কিছু ফেলিয়ে দেওয়া, তারপর “হেল্প” করার অজুহাতে পকেট হাতানো।
১০. শাংহাই, চীন: আধুনিক শহর, পুরনো কৌশল
একটি সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক স্টাডি অনুযায়ী, শাংহাই পকেটমারি ও স্ক্যাম রিস্ক ইনডেক্সে ৫০-এর বেশি স্কোর পেয়েছে, যা এটিকে গ্লোবাল টপ-টেন ঝুঁকিপূর্ণ শহরের মধ্যে রেখেছে। শপিং ডিস্ট্রিক্ট, পর্যটকঘন রাস্তা ও মেট্রো স্টেশনগুলোতে পর্যটকদের টার্গেট করে ফোন ও ওয়ালেট চুরি বাড়ছে।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: নানজিং রোড, বিখ্যাত শপিং স্ট্রিট ও ভিড়পূর্ণ মেট্রো লাইন।
-
প্রচলিত কৌশল: গা ঘেঁষে লোক চলাফেরা, ব্যাগ ওপেন রেখে দেওয়ার সুযোগ নিয়ে দ্রুত হাত সিঁধিয়ে দেওয়া।
পকেটমারি ডেটা বোঝার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা
নির্ভুল অপরাধ-হার বনাম “মেনশন বেসড” স্টাডি
অনলাইনে যে রিপোর্টগুলো প্রকাশিত হয়, তার অনেকগুলোই সরাসরি পুলিশ ডেটার ওপর নয়, বরং পর্যটকের রিভিউ ও অনলাইন কমেন্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যেমন, Quotezone-এর ইউরোপ ভিত্তিক বিশ্লেষণে প্রতি মিলিয়ন ভিজিটরের বিপরীতে কতবার “pickpocket” শব্দটি উল্লেখ হয়েছে, সেটি গুনে ঝুঁকি সূচক বানানো হয়েছে।
এর মানে, কোনো কোনো শহরে প্রকৃত অপরাধের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও, বেশি সচেতন ভ্রমণকারীরা রিপোর্ট করায় স্ট্যাটিসটিকসে সেটি বেশি করে ধরা পড়তে পারে। তাই এই তালিকাকে “অফিশিয়াল ক্রাইম র্যাঙ্কিং” নয়, বরং “ট্রাভেলার এক্সপেরিয়েন্স–ভিত্তিক সতর্কতার তালিকা” হিসেবে দেখা উচিত।
কেন পর্যটক এলাকায় পকেটমারি বেশি
-
পর্যটকরা সাধারণত বেশি ক্যাশ, কার্ড ও গ্যাজেট নিয়ে চলাফেরা করেন।
-
অপরিচিত শহরে ভ্রমণের উত্তেজনায় অনেকে ব্যাগ/পকেটের দিকে পুরো সময় নজর রাখেন না।
-
ভিড়, লাইনে দাঁড়ানো, মেট্রো/বাসে ঠেলাঠেলি – সব মিলিয়ে অপরাধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে।
ভ্রমণকারীদের জন্য প্র্যাকটিক্যাল সিকিউরিটি টিপস
ব্যাগ ও মানিব্যাগ সিকিউরিটি
-
সামনে ঝুলানো ক্রসবডি ব্যাগ ব্যবহার করুন; পিছনে ঝোলানো ব্যাকপ্যাক ভিড় এলাকায় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
-
মানিব্যাগের পুরো টাকা এক জায়গায় রাখবেন না; বেল্ট পাউচ, ইননার পকেট ও হোটেল সেফে ভাগ করে রাখুন।
-
পাসপোর্টের আসল কপি হোটেল সেফে রেখে, ফটোকপি বা ডিজিটাল স্ক্যান সঙ্গে রাখা অনেক দেশে রিকমেন্ড করা হয়।
ভিড় এলাকায় আচরণ
-
ট্রেভি ফাউন্টেন, আইফেল টাওয়ার, লা রামব্লা, তাকসিম স্কোয়ার–এর মতো হাই-রিস্ক স্পটে ভ্রমণের সময় অজানা কাউকে ব্যাগ ধরতে দেবেন না।
-
হঠাৎ কেউ কাঁধে হাত রাখলে, কিছু পড়ে গেল বলে চিৎকার করলে বা পিটিশন সই করতে চাইলে প্রথমে আপনার মূল্যবান জিনিসগুলো সিকিউর আছে কি না যাচাই করুন।
-
গণপরিবহন ব্যবহার করার সময় বিশেষ করে দরজার কাছে দাঁড়ানোর আগে ফোন/ওয়ালেট সিকিউর রাখুন, কারণ অনেক পকেটমার দরজা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে চুরি করে নামার চেষ্টা করে।
ডিজিটাল সেফটি ও ডকুমেন্ট প্রটেকশন
-
কনট্যাক্টলেস কার্ডের ক্ষেত্রে RFID ব্লকিং ওয়ালেট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয় অনেক সেফটি গাইড, কারণ “ট্যাপ”–বেসড ছোটখাটো ফ্রড বেড়েছে।
-
ক্লাউডে পাসপোর্ট, ভিসা, ইনশুরেন্স পলিসি ও টিকিটের কপি সেভ করে রাখুন; জরুরি অবস্থায় দ্রুত ব্যবহার করা যায়।
ভ্রমণ ইনশুরেন্স ও আইনি প্রটেকশন
বিশ্বস্ত ট্রাভেল ইনশুরেন্স কোম্পানি ও তুলনামূলক প্ল্যাটফর্মগুলো পকেটমারি–সম্পর্কিত ক্লেইমের সংখ্যা বাড়ায় অনেক শহরকে “হাই–রিস্ক ডেস্টিনেশন” হিসেবে বিবেচনা করছে। অনেক ক্ষেত্রে ছোটখাটো চুরি হলেও, পুলিশ রিপোর্ট ফাইল করে ইনশুরেন্স ক্লেইম করলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।
তবে ইনশুরেন্স পলিসিতে প্রায়ই শর্ত থাকে যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিকটস্থ থানায় রিপোর্ট করতে হবে এবং প্রমাণ হিসেবে রিপোর্ট কপি জমা দিতে হবে। তাই যেকোনো চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে, প্রথমে নিজেকে নিরাপদে এনে, তারপর নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন ও দূতাবাস/কনস্যুলেটের সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: সচেতন হলেই অনেক ঝুঁকি কমানো যায়
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পকেটমারি হওয়া শহরগুলো একদিকে যেমন পর্যটনের দিক থেকে স্বপ্নের ডেস্টিনেশন, অন্যদিকে সেফটি–ব্যবস্থার দিক থেকে অতিরিক্ত সতর্কতা দাবি করে। ব্যাংকক, রোম, প্যারিস, বার্সেলোনা, ইস্তাম্বুল, আমস্টারডাম, এথেন্স, ফ্লোরেন্স, বুয়েনোস আইরেস ও শাংহাই – এদের প্রত্যেকটির নামই একাধিক আন্তর্জাতিক স্টাডি ও মিডিয়া রিপোর্টে পকেটমারি হটস্পট হিসেবে এসেছে, যা ভ্রমণ পরিকল্পনার সময় উপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
তবুও, এর মানে এই নয় যে এসব শহরে ভ্রমণ করা উচিত নয়; বরং সঠিক তথ্য জানা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্র্যাকটিক্যাল সিকিউরিটি টিপস মেনে চললেই অধিকাংশ সমস্যা এড়ানো সম্ভব। পকেটমাররা সাধারণত অসচেতন, বিক্ষিপ্ত পর্যটককে টার্গেট করে—সতর্ক ও প্রস্তুত ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
এ কারণে ট্রাভেল ইনশুরেন্স, নিরাপদ ব্যাগ ব্যবহার, ক্যাশ ও কার্ড ভাগ করে রাখা এবং ভিড়ের মধ্যে নিজের চারপাশে নজর রাখা – এগুলো এখন গ্লোবাল ভ্রমণের অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে। সর্বশেষ, ভ্রমণের আগে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে আপডেটেড সেফটি ইনফরমেশন দেখে নেওয়া এবং প্রয়োজনমতো স্থানীয় আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী বা দূতাবাসের পরামর্শ মেনে চললেই আপনার বিশ্বভ্রমণ অনেক বেশি নিরাপদ ও উপভোগ্য হতে পারে।











