Modi top world leader poll: বিশ্বরাজনীতির মানচিত্রে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছি আমরা। একসময়ের ‘অপরাজেয়’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আজ তলানিতে ঠেকেছে। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবারও প্রমাণ করেছেন যে তিনি বিশ্বনেতাদের তালিকায় অবিসংবাদিত নেতা। মার্কিন সংস্থা মর্নিং কনসাল্টের সাম্প্রতিক জরিপে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রায় প্রতিদিনই বিতর্কিত বিবৃতি দেওয়া ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে হু-হু করে, আর রাশিয়ার পুতিন কিংবা চীনের শি জিনপিং-এর মতো প্রভাবশালী নেতারাও এবার সেরা ১০-এর তালিকায় জায়গা পাননি।
মোদীর একক আধিপত্য: বিশ্বনেতাদের তালিকায় ৭৫% অনুমোদনের রেকর্ড
মর্নিং কনসাল্ট গ্লোবাল লিডার অ্যাপ্রুভাল ট্র্যাকারের সাম্প্রতিক জরিপে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পেয়েছেন চমকপ্রদ ৭৫ শতাংশ অনুমোদনের হার। এটি কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী তাঁর নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন।
জুলাই মাসের ৪ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, প্রতি চার জন মানুষের মধ্যে তিনজনই মোদীর নেতৃত্বে সন্তুষ্ট। মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ তাঁর নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট, আর ৭ শতাংশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন।
এই সাফল্য মোদীর জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার এই তালিকার শীর্ষে ছিলেন। টানা তৃতীয়বারের মতো এই সম্মান অর্জন করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে তাঁর জনপ্রিয়তা কোনো সাময়িক ঘটনা নয়।
ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিন: বিশ্বব্যবস্থা উল্টে দিচ্ছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি
ট্রাম্পের পতন: অষ্টম স্থানে নেমে আসা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নেতা
একসময় যিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান দিয়ে বিশ্বকে কাঁপিয়েছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন বিশ্বনেতাদের তালিকায় অষ্টম স্থানে। মাত্র ৪৪ শতাংশ অনুমোদনের হার নিয়ে তিনি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম সাত মাসেই এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখে পড়েছেন।
বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ক্রমাগত কমছে। রয়টার্স/ইপসোসের সাম্প্রতিক জরিপে তাঁর সমর্থনের হার নেমে এসেছে ৪২ শতাংশে। এমনকি কোনো কোনো জরিপে এই হার ৪০ শতাংশের নিচেও নেমেছে।
ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমার কারণসমূহ
ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, তাঁর বিতর্কিত শুল্ক নীতি। আমেরিকান জনগণের ৫৯ শতাংশই এই নীতির বিরোধিতা করছেন। দ্বিতীয়ত, ফেডারেল সংস্থাগুলোর বাজেট কাটছাঁটের বিষয়ে ৫৫ শতাংশ মানুষের অসন্তুষ্টি রয়েছে।
তৃতীয়ত, পরিবেশ নীতিতে তাঁর অবস্থান। দ্বিতীয়বারের মতো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় নেতারা ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেছেন।
চতুর্থত, মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর একপেশে নীতি। ইজরায়েলের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন এবং ফিলিস্তিনি সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত আরব বিশ্বে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে।
পুতিন-শি জিনপিং: শীর্ষ ১০-এর বাইরে রয়ে গেলেন পরাশক্তির নেতারা
যা সবচেয়ে চমকপ্রদ, তা হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবার শীর্ষ ১০-এর তালিকায়ই জায়গা পাননি। একসময় যারা বিশ্বরাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাদের এই অবস্থান নিঃসন্দেহে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
পুতিনের ক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব স্পষ্ট। অন্যদিকে, শি জিনপিংয়ের জনপ্রিয়তা কমার পেছনে চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব রয়েছে।
বিশ্বনেতাদের তালিকায় শীর্ষ ১০: কারা কোথায়
মর্নিং কনসাল্টের জরিপ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদীর পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লি-জে-মিয়ং (৫৯%)। তৃতীয় স্থানে আর্জেন্টিনার জেভিয়ার মিলেই (৫৭%), চতুর্থ স্থানে কানাডার মার্ক কার্নি (৫৬%)।
পঞ্চম স্থানে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টোনি অ্যালবানিস (৫৪%), ষষ্ঠ স্থানে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম (৫৩%), সপ্তম স্থানে সুইৎজারল্যান্ডের কারিন কেলার সাটার (৪৮%)।
আর অষ্টম স্থানে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (৪৪%)। এই তালিকা দেখলেই বোঝা যায়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে পারা নেতারাই এগিয়ে রয়েছেন।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ১১টি বড় প্রতিশ্রুতি: আমেরিকা কি সত্যিই আবার “মহান” হবে?
মোদীর সাফল্যের কারণ: বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের নতুন মাত্রা
নরেন্দ্র মোদীর এই ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাঁর বহুমুখী নেতৃত্ব। একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে তিনি মনোযোগী, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি ভারতের অবস্থান শক্তিশালী করেছেন।
করোনা মহামারী চলাকালে তাঁর নেতৃত্ব, G20 সম্মেলনে ভারতের সভাপতিত্ব, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ভারতের অগ্রণী ভূমিকা – এসব কিছুই তাঁর আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
বিশেষ করে তাঁর ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ (বিশ্ব একটি পরিবার) এর দর্শন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। যুদ্ধ-বিগ্রহের এই সময়ে শান্তি ও সহাবস্থানের বার্তা দিয়ে তিনি বিশ্বনেতৃত্বের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।
গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের নতুন প্রেক্ষাপট
এই জরিপের ফলাফল গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের এক নতুন সংজ্ঞার ইঙ্গিত দেয়। যেসব নেতা জনগণের সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগ রক্ষা করেন, তাদের দেশের উন্নয়নে আন্তরিক এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজ দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, তারাই এগিয়ে থাকছেন।
পক্ষান্তরে, যারা বিতর্কিত নীতি, একপেশে সিদ্ধান্ত এবং আগ্রাসী কূটনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তাদের জনপ্রিয়তা কমছে। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
বর্তমান বিশ্বরাজনীতিতে বিশ্বনেতাদের তালিকায় মোদীর শীর্ষস্থান কেবল ভারতের জন্যই গর্বের বিষয় নয়, বরং এটি বৈশ্বিক নেতৃত্বের এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এমন এক সময়ে যখন বিশ্ব নানা সংকটে জর্জরিত, তখন এক স্থিতিশীল, দূরদর্শী এবং সকলের কল্যাণে বিশ্বাসী নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
ট্রাম্পের ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তা এবং পুতিন-শি জিনপিংয়ের শীর্ষ ১০-এর বাইরে থাকা ইঙ্গিত দেয় যে, একবিংশ শতাব্দীর নেতৃত্ব হবে সহযোগিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তিতে।
আগামী দিনগুলোতে বিশ্বনেতাদের তালিকায় কোন পরিবর্তন আসে, সেটি দেখার বিষয়। তবে এটি নিশ্চিত যে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত বিশ্বমঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিশ্বব্যাপী তাঁর জনপ্রিয়তা কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি ইতিবাচক রাজনীতি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থার প্রতিফলন।