মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গেল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত শুধু আমেরিকার রাজনীতিতেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
বাইডেনের সিদ্ধান্তের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অধিকাংশ নেতাই বাইডেনের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অনেক বছর ধরে চিনি। তিনি একজন মহান ব্যক্তি, এবং তার সব কাজই তার দেশপ্রেমের দ্বারা পরিচালিত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কানাডার একজন অংশীদার – এবং একজন প্রকৃত বন্ধু। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং প্রথম মহিলাকে ধন্যবাদ।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “জো বাইডেন অনেক কিছু অর্জন করেছেন: তার দেশের জন্য, ইউরোপের জন্য, বিশ্বের জন্য। তার কারণে, ট্রান্সআটলান্টিক সহযোগিতা ঘনিষ্ঠ, ন্যাটো শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য একটি ভালো ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার। আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার তার সিদ্ধান্ত স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কীর স্টারমার একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই এবং তার প্রেসিডেন্সির বাকি সময়ে আমরা একসাথে কাজ করব বলে আশা করি। আমি জানি যে, তার উল্লেখযোগ্য ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি যেমন করেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমেরিকান জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে বিশ্বাস করে।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, “ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলকে আপনার অটল সমর্থনের জন্য। বিশেষ করে যুদ্ধের সময়, আপনার দৃঢ় সমর্থন অমূল্য ছিল। আমরা আপনার নেতৃত্ব ও বন্ধুত্বের জন্য কৃতজ্ঞ।”
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট @JoeBiden-এর সাহসী ও মর্যাদাপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য আমার সমস্ত প্রশংসা ও স্বীকৃতি। তার দৃঢ়তা ও নেতৃত্বের কারণে, যুক্তরাষ্ট্র মহামারির পরে অর্থনৈতিক সংকট এবং ক্যাপিটলের গুরুতর আক্রমণ কাটিয়ে উঠেছে এবং পুতিনের রাশিয়ান আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনকে সমর্থন করায় দৃষ্টান্তমূলক ছিল। একজন মহান প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে একটি মহান অঙ্গভঙ্গি যিনি সর্বদা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন।”
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “আয়ারল্যান্ডের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে। আমি … আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই মিস্টার প্রেসিডেন্ট আপনার বিশ্ব নেতৃত্ব ও বন্ধুত্বের জন্য যখন আপনি ঘোষণা করছেন যে আপনি ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। জো বাইডেন, তিনি যে সব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেখানে সর্বদা আয়ারল্যান্ড দ্বীপে শান্তির জন্য একটি অটল কণ্ঠস্বর ও আবেগময় কর্মী ছিলেন এবং আমাদের দেশ এর জন্য তার কাছে ঋণী।”
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর রয়টার্সকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পুনর্নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। তিনি সিদ্ধান্তটি এই বলে ন্যায্য করেছেন যে তিনি নিজের আগে দেশকে রাখতে চান। সেই যুক্তি সম্মান দাবি করে। জো বাইডেন কয়েক দশক ধরে আমেরিকার অন্যতম প্রধান রাজনীতিবিদ ছিলেন, এবং একজন প্রেসিডেন্ট যিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছেন। আমি বিশেষভাবে ন্যাটোতে তার নেতৃত্বের প্রশংসা করি এবং জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ।”
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক লিখেছেন, “মিস্টার প্রেসিডেন্ট @JoeBiden, অনেকবার আপনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা পোল্যান্ড, আমেরিকা এবং বিশ্বকে নিরাপদ করেছে, এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করেছে। আমি জানি যে আপনি আপনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সময় একই নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। হয়তো আপনার জীবনের সবচেয়ে কঠিন একটি।”
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা লিখেছেন, “এটি নিঃসন্দেহে একজন রাষ্ট্রনায়কের সিদ্ধান্ত যিনি দশকের পর দশক ধরে তার দেশের সেবা করেছেন। এটি একটি দায়িত্বশীল এবং ব্যক্তিগতভাবে কঠিন পদক্ষেপ, কিন্তু এটি আরও মূল্যবান। আমি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আমার আঙ্গুল ক্রস করে রাখছি যাতে দুটি শক্তিশালী ও সমান প্রার্থীর গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা থেকে একজন ভালো প্রেসিডেন্ট উদ্ভূত হয়।”
বাইডেনের সিদ্ধান্তের প্রভাব
বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত শুধু আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের সাথে সম্পর্ক, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বাইডেনের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বাইডেন আমাদের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, পুতিনের অগ্রগতি রুখতে সাহায্য করেছেন, এবং এই ভয়াবহ সংঘর্ষের সময় সর্বদা আমাদের সমর্থন করেছেন।”
বাইডেন সাহেবের ২০২৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত মার্কিন রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ডেমোক্র্যাটিক দল এবং সমগ্র দেশের উপর যে প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক:
নেতৃত্বের পরিবর্তন: বাইডেনের পরিবর্তে কমলা হ্যারিস দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন। এটি দলের নেতৃত্বে একটি বড় পরিবর্তন আনবে।
দলীয় ঐক্য চ্যালেঞ্জের মুখে: হ্যারিসকে দলের সকল অংশের সমর্থন পেতে হবে। কিছু মডারেট ডেমোক্র্যাট তাকে নিয়ে সন্দিহান থাকতে পারেন।
নতুন কৌশল প্রয়োজন: হ্যারিসকে নিজের ইমেজ তৈরি করতে হবে। বাইডেনের নীতি থেকে কোথায় তিনি আলাদা তা স্পষ্ট করতে হবে।
তরুণ ভোটারদের আকর্ষণ: হ্যারিস তরুণ ও বৈচিত্র্যময় ভোটারদের আকর্ষণ করতে পারেন, যা দলের জন্য সুবিধাজনক।
দেশের উপর প্রভাব
রাজনৈতিক অস্থিরতা: বাইডেনের হঠাৎ সরে দাঁড়ানো কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। রিপাবলিকানরা এটিকে দুর্বলতা হিসেবে দেখাতে চাইবেন।
নীতিগত পরিবর্তন: হ্যারিস কিছু ক্ষেত্রে বাইডেনের থেকে আলাদা নীতি নিতে পারেন, যা দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব: বিশ্বনেতারা নতুন প্রার্থীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইবেন। এতে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: নতুন নেতৃত্বের প্রতি বাজারের প্রতিক্রিয়া অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
রিপাবলিকান দলের প্রতিক্রিয়া
– অনেকেই বাইডেনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
– হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, “যদি বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে দৌড়াতে অযোগ্য হন, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনেরও অযোগ্য।”
– সিনেটর স্টিভ ডেইনস বাইডেনের পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছেন।
– প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনকে “সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট” আখ্যা দিয়েছেন।
Shots Fired At Trump Rally: মৃত্যুর মুখোমুখি ট্রাম্প, রক্তাক্ত মাটিতে আমেরিকা
বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণাকে নতুন মোড় দিয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক দলকে নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইবেন। সামগ্রিকভাবে, এই পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনকে আরও অনিশ্চিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলেছে।
বাইডেনের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মার্কিন রাজনৈতিক মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। এই পরিবর্তনগুলি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে প্রভাব ফেলতে পারে:
নতুন প্রার্থী নির্বাচন: বাইডেন কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন, কিন্তু দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে (DNC) নেওয়া হবে। অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন পিট বুটিজেজ, গ্যাভিন নিউসম, জেবি প্রিৎজকার এবং গ্রেচেন হুইটমার।
নতুন কৌশল প্রয়োজন: নতুন প্রার্থীকে নিজের ইমেজ তৈরি করতে হবে এবং বাইডেনের নীতি থেকে কোথায় তিনি আলাদা তা স্পষ্ট করতে হবে।
রিপাবলিকান নেতারা বাইডেনের সিদ্ধান্তকে তীব্র সমালোচনা করেছেন:
ইউক্রেন সংকট: নতুন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী সম্ভবত বাইডেনের মতোই ইউক্রেনকে সমর্থন করবেন। তবে সাহায্যের গতি ও পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন থাকবে।
গৌতম গম্ভীর: ভারতের হেড কোচ হিসেবে বেতন ও সুযোগ সুবিধা
বাজারের প্রতিক্রিয়া: বাইডেনের সরে যাওয়া শেয়ার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে প্রভাব পড়তে পারে।
ব্যালট অ্যাক্সেস: অনেক রাজ্যে ব্যালটে নাম অন্তর্ভুক্ত করার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। নতুন প্রার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বাইডেনের সরে যাওয়া ২০২৪ সালের নির্বাচনকে আরও অনিশ্চিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলেছে। ডেমোক্র্যাটিক দলকে দ্রুত নতুন প্রার্থী নির্বাচন ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা এই পরিস্থিতিকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা মার্কিন রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।