বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বসবাসযোগ্য নদীদ্বীপ উমানন্দ – একটি অদ্ভুত প্রাকৃতিক বিস্ময়!

World's Smallest Inhabited River Island: ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকে অবস্থিত উমানন্দ দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বসবাসযোগ্য নদীদ্বীপ হিসেবে পরিচিত। অসমের গুয়াহাটি শহরের মাঝখানে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির আয়তন মাত্র ০.১১ বর্গ…

Manoshi Das

 

World’s Smallest Inhabited River Island: ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকে অবস্থিত উমানন্দ দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বসবাসযোগ্য নদীদ্বীপ হিসেবে পরিচিত। অসমের গুয়াহাটি শহরের মাঝখানে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির আয়তন মাত্র ০.১১ বর্গ কিলোমিটার। এর ছোট আকার সত্ত্বেও এটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি গন্তব্য।

উমানন্দ দ্বীপের নামকরণের পিছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনী। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ভগবান শিব তাঁর প্রিয় পত্নী পার্বতীর (উমা) আনন্দের জন্য এই দ্বীপটি সৃষ্টি করেছিলেন। তাই এর নাম হয়েছে উমানন্দ – যেখানে ‘উমা’ অর্থ দেবী পার্বতী এবং ‘আনন্দ’ অর্থ আনন্দ বা সুখ। কিংবদন্তি অনুযায়ী, শিব নিজেও এখানে ভয়ানন্দ রূপে বাস করতেন।এই দ্বীপের আরেকটি নাম ভস্মাচল। পুরাণে বলা হয়েছে, একবার শিব এখানে গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। সেই সময় কামদেব (প্রেমের দেবতা) এসে তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করেন। ক্রুদ্ধ শিব তখন তাঁর তৃতীয় নেত্র দিয়ে কামদেবকে ভস্ম করে দেন। তাই এই স্থানের নাম হয় ভস্মাচল – যার অর্থ ‘ছাইয়ের পাহাড়’।

ব্রিটিশ আমলে একজন অফিসার এই দ্বীপটিকে ময়ূরের পালকের মতো দেখতে পান। তাই তিনি এর নাম দেন ‘পিকক আইল্যান্ড’ বা ময়ূর দ্বীপ। এভাবে এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি তিনটি নামে পরিচিত – উমানন্দ, ভস্মাচল এবং পিকক আইল্যান্ড।উমানন্দ দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ হল এখানকার শিব মন্দির। ১৬৯৪ সালে অহোম রাজা গদাধর সিংহের নির্দেশে বর পুকান গড়গাইয়া হান্ডিক এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরের দেয়ালে রয়েছে নানা হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ও ভাস্কর্য। এগুলি স্থানীয় অসমীয়া শিল্পীদের অসাধারণ কারুকার্যের নিদর্শন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়।উমানন্দ মন্দিরে শিবরাত্রি উৎসব খুব ধুমধামের সাথে পালিত হয়। প্রতি বছর এই সময় হাজার হাজার ভক্ত এখানে সমবেত হন। সোমবার এবং অমাবস্যার দিনগুলিতেও মন্দিরে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনগুলিতে এখানে পূজা করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।
উমানন্দ দ্বীপে একসময় বিরল প্রজাতির গোল্ডেন ল্যাঙ্গুর বানরের বাস ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমে গেছে। তবে এখনও দ্বীপে কিছু বন্যপ্রাণী দেখা যায়। এছাড়া দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।উমানন্দ দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল নৌকা বা ফেরি। গুয়াহাটির উমানন্দ ঘাট থেকে ১০-১৫ মিনিটের নৌকা যাত্রায় দ্বীপে পৌঁছানো যায়। সকাল ৫:৩০ থেকে বিকেল ৫:০০ টা পর্যন্ত দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ থাকে।উমানন্দ দ্বীপের একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা হলেন মন্দিরের পুরোহিত ও তাঁর সহকারী। তাঁরা ছাড়া অন্য কেউ এখানে স্থায়ীভাবে বাস করেন না। প্রতিদিন বিকেলে শেষ ফেরিতে সবাই দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।
উমানন্দ দ্বীপের জৈব বৈচিত্র্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও প্রাণী পাওয়া যায়। বিশেষ করে তেঁতুল গাছগুলি দ্বীপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে।উমানন্দ দ্বীপ ভ্রমণ একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ব্রহ্মপুত্রের বুকে ভেসে থাকা এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ধর্মীয় তাৎপর্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বসবাসযোগ্য নদীদ্বীপ হিসেবে উমানন্দ নিঃসন্দেহে একটি অনন্য দর্শনীয় স্থান।
উমানন্দ দ্বীপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য হল উমানন্দ মন্দির। এই মন্দিরটি ১৬৯৪ সালে অহোম রাজা গদাধর সিংহের নির্দেশে নির্মিত হয়েছিল।

মন্দিরটির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:

  • এটি পারম্পরিক অসমীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।
  • মন্দিরের দেয়ালে হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি ও ভাস্কর্য রয়েছে, যেমন সূর্য, শিব, গণেশ ও দেবী।
  • মন্দিরের আশেপাশে বিষ্ণু ও তাঁর দশ অবতারের মূর্তি রয়েছে।
  • ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়।
  • পুনর্নির্মাণের সময় মন্দিরের অভ্যন্তরে বৈষ্ণব লিপি যোগ করা হয়।
  • মন্দিরের গর্ভগৃহে একটি ছোট শিবলিঙ্গ ও পার্বতী মূর্তি রয়েছে।
  • মন্দিরে প্রবেশের আগে প্রায় ১০০টি সিঁড়ি উঠতে হয়।

এছাড়াও দ্বীপে গণেশ, হরগৌরী, বৈদ্যনাথ, চলন্তিকা ও চন্দ্রশেখরের মন্দির রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, উমানন্দ মন্দির ও অন্যান্য মন্দিরগুলি এই ক্ষুদ্র দ্বীপের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব প্রতিফলিত করে।উমানন্দ দ্বীপের প্রধান স্থাপত্য হল উমানন্দ মন্দির, যা পারম্পরিক অসমীয়া স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। এই মন্দিরের কিছু বিশেষ নকশাগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

১. মন্দিরের দেয়ালে হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি ও ভাস্কর্য খোদাই করা আছে, যেমন সূর্য, শিব, গণেশ ও দেবীর মূর্তি।
২. মন্দিরের আশেপাশে বিষ্ণু ও তাঁর দশ অবতারের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
৩. মন্দিরের অভ্যন্তরে বৈষ্ণব লিপি যোগ করা হয়েছে, যা শৈব ও বৈষ্ণব ধর্মের সমন্বয় প্রদর্শন করে।
৪. মন্দিরের গর্ভগৃহে একটি ছোট শিবলিঙ্গ ও পার্বতী মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
৫. মন্দিরে প্রবেশের আগে প্রায় ১০০টি সিঁড়ি উঠতে হয়, যা মন্দিরের স্থাপত্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৬. মন্দিরটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত, যা এর স্থাপত্যকে আরও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করে তুলেছে।

এই সব বৈশিষ্ট্য উমানন্দ মন্দিরকে একটি অনন্য ও আকর্ষণীয় স্থাপত্যে পরিণত করেছে।

About Author
Manoshi Das

মানসী দাস একজন মার্কেটিং এর ছাত্রী এবং আমাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তিনি তাঁর অধ্যয়ন ও কর্মজীবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজার ও ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন। একজন উদীয়মান লেখিকা হিসেবে, মানসী বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা, স্থানীয় বাজারের প্রবণতা এবং ব্র্যান্ডিং কৌশল নিয়ে লিখে থাকেন। তাঁর লেখনীতে বাংলাদেশের যুব সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়।