হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের অধিকারী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। এই র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ৮২তম স্থানে রয়েছে। লন্ডনভিত্তিক গ্লোবাল সিটিজেনশিপ এবং রেসিডেন্স অ্যাডভাইজরি ফার্ম হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স এই বার্ষিক র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে থাকে।
সিঙ্গাপুরের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৯৫টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন, যা একটি নতুন রেকর্ড। অন্যদিকে, ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা মাত্র ৫৮টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স ১৯৩টি জাতিসংঘের সদস্য দেশ এবং ৬টি অঞ্চলের (তাইওয়ান, ম্যাকাও, হংকং, কসোভো, প্যালেস্টাইন এবং ভ্যাটিকান) পাসপোর্টের শক্তি মূল্যায়ন করে। এই র্যাঙ্কিং ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA) এর তথ্য ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।
১. সিঙ্গাপুর (১৯৫টি গন্তব্য)
২. ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, স্পেন (১৯২টি গন্তব্য)
৩. অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন (১৯১টি গন্তব্য)
৪. বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য (১৯০টি গন্তব্য)
৫. অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল (১৮৯টি গন্তব্য)
ভারতের পাসপোর্ট র্যাঙ্কিং ৮২তম স্থানে থাকলেও, গত কয়েক বছরে এর অবস্থান উন্নত হয়েছে। ২০১৪ সালে ভারত ৮৫তম স্থানে ছিল। বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা ৫৮টি দেশে ভিসা-ফ্রি অ্যাক্সেস পাচ্ছেন।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স এর চেয়ারম্যান ডঃ ক্রিস্টিয়ান এইচ. কাইলিন মন্তব্য করেছেন, “গত দুই দশকে সাধারণ প্রবণতা ছিল আরও বেশি ভ্রমণ স্বাধীনতার দিকে। ২০০৬ সালে ভিসা-ফ্রি গন্তব্যের গড় সংখ্যা ছিল ৫৮, যা ২০২৪ সালে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১১১ হয়েছে।”
তবে, র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ও নিম্নস্থ দেশগুলির মধ্যে বৈশ্বিক গতিশীলতার ব্যবধান এখন আগের চেয়ে বেশি। শীর্ষস্থানীয় সিঙ্গাপুর এবং সর্বনিম্ন স্থানে থাকা আফগানিস্তানের মধ্যে ১৬৯টি গন্তব্যের পার্থক্য রয়েছে।
১. অর্থনৈতিক প্রভাব: শক্তিশালী পাসপোর্ট থাকা দেশগুলি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারে।
২. পর্যটন শিল্পে প্রভাব: ভিসা-ফ্রি ভ্রমণের সুযোগ বেশি থাকলে পর্যটন শিল্প উপকৃত হতে পারে।
৩. কূটনৈতিক সম্পর্ক: শক্তিশালী পাসপোর্ট থাকা দেশগুলি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে।
৪. শিক্ষা ও গবেষণা: আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও গবেষণা সুযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৫. প্রতিভা আকর্ষণ: শক্তিশালী পাসপোর্ট থাকা দেশগুলি বিশ্বব্যাপী প্রতিভা আকর্ষণে সক্ষম হতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পাসপোর্টের শক্তি বৃদ্ধি পেলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পায়। যে সব দেশের নাগরিকরা ভিসা-ফ্রি ভ্রমণের সুযোগ পায়, সেসব দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
Voter Card: মাত্র ১০ মিনিটে ভোটার কার্ড পেতে চান? জেনে নিন অনলাইনে আবেদনের গোপন কৌশল!
১. কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করা:
অন্যান্য দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুযোগ বাড়ানো যেতে পারে। এর ফলে ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা আরও বেশি দেশে সহজে প্রবেশ করতে পারবেন।
২. অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি:
বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা। এতে করে পারস্পরিক স্বার্থে ভিসা নীতি শিথিল করার সুযোগ তৈরি হবে।
৩. পর্যটন খাতে উন্নয়ন:
ভারতের পর্যটন শিল্পকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। এর ফলে অন্য দেশগুলিও ভারতীয় পর্যটকদের জন্য ভিসা নীতি সহজ করতে আগ্রহী হবে।
৪. শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে সহযোগিতা:
আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে সহযোগিতা বাড়িয়ে ছাত্র ও গবেষকদের আদান-প্রদান সহজ করা।
৫. নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার:
দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করে অন্য দেশগুলির আস্থা অর্জন করা। এতে করে তারা ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি আরও বেশি আস্থাশীল হবে।
৬. পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সহজীকরণ:
ভারতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আরও সহজ ও স্বচ্ছ করা। এতে করে পাসপোর্টের মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
৭. ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার:
পাসপোর্ট ও ভিসা প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা ও দক্ষতা বাড়ানো।
৮. আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ:
জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থায় ভারতের ভূমিকা আরও বাড়ানো।
ভারত G-7 এর সদস্য নয়, তা সত্ত্বেও কেন বারবার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে?
৯. সাংস্কৃতিক কূটনীতি:
ভারতীয় সংস্কৃতি, যোগ, আয়ুর্বেদ ইত্যাদির প্রচার বাড়িয়ে অন্য দেশগুলির সাথে সাংস্কৃতিক বন্ধন জোরদার করা।
১০. প্রবাসী ভারতীয়দের সহযোগিতা:
বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের মাধ্যমে সেই দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নত করা।
এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে ভারত তার পাসপোর্টের শক্তি বাড়াতে পারে, যা ফলস্বরূপ র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি আনবে। বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা ৫৮টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। এই সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে ভারত তার পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং উন্নত করতে পারে।
এছাড়াও, নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ নামক একটি গ্লোবাল ডেটা ইন্টেলিজেন্স ফার্মের গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের শেনজেন ও হাংজু, ভারতের বেঙ্গালুরু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিন ও স্কটসডেল, ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ – এই শহরগুলিতে ধনী ব্যক্তিদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব শহরে ভিসা-ফ্রি প্রবেশাধিকার থাকা আগামী দশকগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বিশ্বব্যাপী ভ্রমণের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে একই সাথে, দেশগুলির মধ্যে নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতি নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। ফলে, পাসপোর্টের শক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, ২০২৪ সালের হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স বিশ্বব্যাপী ভ্রমণের স্বাধীনতা ও দেশগুলির মধ্যকার সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু ভ্রমণের সুবিধা নয়, বরং দেশগুলির আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সম্পর্কের একটি প্রতিফলনও বটে।
মন্তব্য করুন