World’s oldest hotel history location: জাপানের ইয়ামানাশি প্রিফেকচারে অবস্থিত নিশিয়ামা ওনসেন কেইউনকান (Nishiyama Onsen Keiunkan) হলো বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো হোটেল, যা ১৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবিরাম চলছে। এই ঐতিহাসিক হোটেলটি ৭০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দ্বারা বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো হোটেল হিসেবে স্বীকৃত।
এই অসাধারণ প্রতিষ্ঠানটি একই পরিবারের ৫২ প্রজন্ম ধরে পরিচালিত হয়েছে, যা এর দীর্ঘস্থায়িত্বের প্রমাণ দেয়।নিশিয়ামা ওনসেন কেইউনকান জাপানের আকাইশি পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি রিওকান বা হট স্প্রিং হোটেল। হোটেলটির প্রতিষ্ঠাতা ফুজিওয়ারা মাহিতো, যিনি ছিলেন জাপানের ৩৮তম সম্রাট তেনজির এক সহকারীর পুত্র। তিনি এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ আবিষ্কার করেন এবং সেখানে এই হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করেন।হোটেলটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ। স্থানীয় হাকুহো স্প্রিংস থেকে সরাসরি গরম পানি সংগ্রহ করা হয়, যা হোটেলের সমস্ত স্নানাগারে ব্যবহৃত হয়। এই উষ্ণ প্রস্রবণগুলি প্রতি মিনিটে ১,৬০০ লিটার পানি প্রবাহিত করে, যা জাপানের সবচেয়ে বেশি প্রবাহের মধ্যে একটি।নিশিয়ামা ওনসেন কেইউনকান তার দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বকে স্বাগত জানিয়েছে।
Most Expensive Mango in the World: হিমসাগর নয়, আমের রাজত্বের শাহেন্ শা অন্য কেউ
এর মধ্যে রয়েছেন টোকুগাওয়া ইয়েয়াসু, যিনি জাপানের একজন প্রভাবশালী শোগুন ছিলেন এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এমনকি জাপানের বর্তমান সম্রাট নারুহিতোও এই হোটেলে অবস্থান করেছেন।হোটেলটিতে মোট ৩৭টি কক্ষ রয়েছে, যার প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি শৈলীতে সাজানো। কক্ষগুলিতে তাতামি চাটাই, ফুটন বিছানা এবং শিল্পকর্ম হিসেবে ঝুলন্ত স্ক্রোল রয়েছে। প্রতিটি কক্ষ থেকে পার্শ্ববর্তী পর্বতমালার মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। কিছু কক্ষে ব্যক্তিগত উন্মুক্ত স্নানাগারও রয়েছে।হোটেলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর কাইসেকি রেস্তোরাঁ। এখানে মৌসুমি উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয় ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবার। রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ সাতো শিনজি ২০১৪ সালে জাপান সরকারের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে উৎকৃষ্ট খাবার তৈরির জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন।নিশিয়ামা ওনসেন কেইউনকান তার দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
১৯০৯ এবং ১৯১৬ সালে বড় আগুনের ঘটনা ঘটে। ১৯২৫ সালে একটি বড় পাথর হোটেলের একটি ভবন ধ্বংস করে। ১৯৮২ সালে একটি বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও হোটেলটি টিকে থেকেছে এবং নিরন্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছে।হোটেলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কেনজিরো কাওয়ানো মনে করেন, হোটেলটির নির্জন অবস্থান এর দীর্ঘস্থায়িত্বের একটি কারণ। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো রিওকান মাস্টার হওয়া এবং অন্য কোনো ব্যবসায় বিচলিত না হওয়া। যখন আপনি সাফল্য দেখতে শুরু করেন, তখন অন্য উদ্যোগে মাথা গলানো শুরু করেন, যা ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়ায়।”২০১৭ সাল পর্যন্ত হোটেলটি একই পরিবারের ৫২ প্রজন্ম ধরে পরিচালিত হয়েছিল।
কিন্তু সেই বছর পরিবারের কোনো সদস্য ব্যবসা চালাতে রাজি না হওয়ায় কেনজিরো কাওয়ানোকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। কাওয়ানো ১৯৮৪ সালে ২৫ বছর বয়সে হোটেলে যোগ দেন এবং মেরামতকারী থেকে শুরু করে ম্যানেজার পর্যন্ত বিভিন্ন পদে কাজ করেন।নিশিয়ামা ওনসেন কেইউনকান তার ঐতিহ্য বজায় রাখার পাশাপাশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও যোগ করেছে। ২০১৯ সাল থেকে হোটেলের সব কক্ষ ও সুবিধায় বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
সৌদি আরবের মহাপরিকল্পনা: ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য ১১টি নতুন স্টেডিয়াম ও
তবে জুতা খুলে প্রবেশের মতো ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি এখনও বজায় রাখা হয়েছে।হোটেলের কর্মীরা নিবু-শিকি (দুই টুকরো) কিমোনো পরিধান করেন, যা জাপানি ঐতিহ্যের প্রতীক। অতিথিদের জন্য ঐতিহ্যবাহী জাপানি খাবারের পাশাপাশি চাঁদ দেখার জন্য একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্মও রয়েছে।নিশিয়ামা ওনসেন কেইউনকান শুধু একটি হোটেল নয়, এটি জাপানের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি জীবন্ত প্রতীক। এর দীর্ঘস্থায়িত্ব প্রমাণ করে যে, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয় করে কীভাবে একটি ব্যবসা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সফল হতে পারে। নিশিয়ামা ওনসেন কেইউনকান শুধু জাপান নয়, সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে একটি অনন্য গন্তব্য হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।