কন্নড় সুপারস্টার যশ ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খলনায়ক হতে চলেছেন। নিতেশ তিওয়ারির আসন্ন বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘রামায়ণ’-এ রাবণের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পেতে পারেন বলে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ছবিতে যশের পারিশ্রমিক ১৫০-২০০ কোটি টাকার মধ্যে হতে পারে। এর ফলে তিনি শাহরুখ খান এবং সলমান খানের মতো বলিউডের সুপারস্টারদেরও ছাড়িয়ে যাবেন, যারা সাধারণত প্রতি ছবিতে ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পারিশ্রমিক পান।
‘রামায়ণ’ ছবিটি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রযোজনাগুলির একটি হতে চলেছে, যার বাজেট প্রায় ৮৩৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এই বিশাল বাজেটের ছবিতে রণবীর কাপুর রামের ভূমিকায় এবং সাই পল্লবী সীতার চরিত্রে অভিনয় করছেন। যশের এই সম্ভাব্য পারিশ্রমিক ভারতীয় সিনেমায় খলনায়কদের মর্যাদা ও গুরুত্বের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। অতীতে খলনায়করা প্রধান চরিত্রের তুলনায় কম পারিশ্রমিক পেতেন, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন খলনায়করা প্রধান চরিত্রের সমান বা কখনও কখনও বেশি পারিশ্রমিক দাবি করছেন।
ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে খলনায়কদের ভূমিকা ও পারিশ্রমিকের ক্রমবিকাশ লক্ষণীয়। ১৯৭০-এর দশকে অমরীশ পুরী ছিলেন বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেতাদের একজন। তিনি প্রতি ছবিতে ১ কোটি টাকা পারিশ্রমিক পেতেন, যখন শাহরুখ খান, সলমান খান, আমির খান, শ্রীদেবী বা মাধুরী দীক্ষিতের মতো তারকারা ১০ লাখ টাকার বেশি পেতেন না।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কমল হাসান ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’-তে খলনায়কের ভূমিকার জন্য ২৫ কোটি টাকা এবং বিজয় সেতুপতি ‘জওয়ান’-এ ২১ কোটি টাকা পেয়েছেন। অন্যান্য উচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খলনায়কদের মধ্যে রয়েছেন সাইফ আলী খান, ইমরান হাশমি, সঞ্জয় দত্ত এবং ফাহাদ ফাসিল।
যশের এই সম্ভাব্য রেকর্ড পারিশ্রমিক ভারতীয় সিনেমায় খলনায়কদের বর্ধিত গুরুত্ব এবং দর্শকদের কাছে তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। এটি প্রদর্শন করে যে খলনায়করা এখন শুধুমাত্র নায়কের পটভূমি হিসেবে নয়, বরং সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় চরিত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। ‘রামায়ণ’ ছাড়াও যশ ‘কেজিএফ ৩‘ এবং ‘টক্সিক‘ নামে দুটি ছবিতে অভিনয় করছেন, যেগুলি ২০২৫ সালে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রকল্পগুলি যশের জনপ্রিয়তা ও চাহিদার প্রমাণ, যা তাকে ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেতাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
যশের এই সাফল্য ভারতীয় সিনেমার ক্রমবর্ধমান আন্তঃআঞ্চলিক প্রকৃতিকেও তুলে ধরে। একজন কন্নড় অভিনেতা হিন্দি ছবিতে এত বড় পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, যা দেখায় যে ভাষাগত সীমানাগুলি ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে এবং প্রতিভা ও জনপ্রিয়তাই মূল বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠছে। এই ধরনের উচ্চ পারিশ্রমিকের প্রভাব ব্যাপক হতে পারে। এটি অন্যান্য অভিনেতাদের জন্যও পারিশ্রমিক বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা ফলস্বরূপ ছবির বাজেট বাড়াতে পারে। এর ফলে ছবির টিকিটের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দর্শকদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি ছবি নির্মাণের মান উন্নয়নেও সহায়ক হতে পারে।
উচ্চ বাজেটের ছবিগুলি সাধারণত উন্নত প্রযুক্তি, বিশ্বমানের পরিচালক ও কলাকুশলীদের ব্যবহার করে, যা ভারতীয় সিনেমার সামগ্রিক মানোন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।পাঠকরা যশের আসন্ন প্রকল্পগুলি, বিশেষ করে ‘রামায়ণ’-এর অগ্রগতি সম্পর্কে নজর রাখতে পারেন। এছাড়া ভারতীয় সিনেমায় খলনায়কদের ভূমিকা ও পারিশ্রমিকের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আরও জানতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সংক্রান্ত বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট ও পত্রিকাগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে।