বাংলা ইউটিউব জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন কিরণ দত্ত ওরফে ‘দ্য বং গাই’ সম্প্রতি ফোর্বস ইন্ডিয়ার ২০২৪ সালের শীর্ষ ১০০ ডিজিটাল স্টার তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এই তালিকায় তিনি দশম স্থান অধিকার করেছেন, যা তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিরণের এই সাফল্যে তাঁর প্রেমিকা অন্তরা গর্বিত বোধ করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রকাশ করেছেন।
কিরণ দত্ত ২০১৫ সাল থেকে ইউটিউবে কন্টেন্ট তৈরি করছেন। তিনি বাংলা ভাষায় প্রথম এবং সবচেয়ে সফল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিত। তাঁর মূল চ্যানেল ‘দ্য বং গাই’ ছাড়াও তিনি আরও একটি চ্যানেল পরিচালনা করেন। কিরণের কন্টেন্টগুলি মূলত কমেডি, মিউজিক, গেমিং এবং ভ্লগ ক্যাটাগরিতে পড়ে।
কিরণের জীবনে এই সাফল্য আসার পিছনে রয়েছে অনেক সংগ্রাম ও কঠোর পরিশ্রম। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, স্কুলে পড়ার সময় তাঁর একজন শিক্ষক বলেছিলেন যে তিনি জীবনে কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু কিরণ হাল ছাড়েননি। তিনি নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি.টেক ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি পুরোপুরি ইউটিউব কন্টেন্ট তৈরিতে মনোনিবেশ করেন।
অস্কারের মঞ্চে ‘লাপাতা লেডিজ’: কিরণ রাওয়ের স্বপ্নপূরণের পথে ভারত
কিরণ তাঁর যাত্রা শুরু করেছিলেন নিজের নামে একটি চ্যানেল দিয়ে, যেখানে তিনি গান গেয়ে মুখ না দেখিয়ে ভিডিও আপলোড করতেন। কিন্তু সেই চ্যানেলটি তেমন সফল হয়নি। এরপর তিনি বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট চেষ্টা করেন এবং অবশেষে ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম ভিডিও কমেন্টারি ভাইরাল হয়।
কিরণ মনে করেন, সফল হওয়ার জন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন জিনিস চেষ্টা করা প্রয়োজন। তিনি উদাহরণ দিয়েছেন CarryMinati-র, যিনি প্রথমে গেমিং ইউটিউবার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু রোস্টিং-এর মাধ্যমেই সফলতা পেয়েছেন। কিরণ নিজেও কলেজে পড়ার সময় বিভিন্ন বাংলা প্রোডাকশন হাউসে কাজ করেছেন এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার হওয়ার লক্ষ্য ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউটিউবার হিসেবেই সফল হয়েছেন।
ফোর্বসের তালিকায় কিরণের স্থান পাওয়া তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার ফল। এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে GroupM-এর ইনফ্লুয়েন্সার ও কন্টেন্ট মার্কেটিং সলিউশন, দ্য গোট এজেন্সি দ্বারা। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন রিচ, এনগেজমেন্ট, ইমপ্রেশন এবং ফলোয়ার সংখ্যা। কিরণের Goat স্কোর ৮.৮৮ এবং জেনুইটি ৮৮.৫৬%।
ইউটিউবে প্রতি মিলিয়ন ভিউতে আয়: কিভাবে হিসাব করবেন এবং কতটুকু আয় সম্ভব?
কিরণের মতে, ভিউ বা সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি জানি এটা ব্র্যান্ডদের আমার কাছে আসার একটা কারণ, কিন্তু আমি বলতে চাই যে প্রথম ১ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার পাওয়ার সময় যে পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম, তার পরে আর সেই পরিমাণ খুশি হইনি।”
কিরণ নতুন ইউটিউবারদের পরামর্শ দিয়েছেন যে তারা যেন শুধু একটি চ্যানেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করে। তিনি আরও বলেছেন, “আমার পরামর্শ হবে তরুণ প্রজন্মের জন্য যে তারা যেন সফল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি সেগমেন্ট চেষ্টা করে এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেয়।”
কিরণের সাফল্যের পিছনে রয়েছে তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও প্যাশন। তিনি বলেন, “আমি কখনও মনে করিনি যে আমি সংগ্রাম করছি কারণ আমি যা করছিলাম তা উপভোগ করছিলাম এবং আমি সত্যিই এটা নিয়ে উত্সাহী ছিলাম। আজ, আমি সহজেই আমার চ্যানেলের জন্য একজন এডিটর নিয়োগ করতে পারি, কিন্তু আমি আমার কাজকে এতটাই ভালোবাসি যে আমি এখনও নিজেই সবকিছু করতে পছন্দ করি।”
কিরণের এই সাফল্য প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম ও নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে যে কোনও বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। তাঁর গল্প অনেক তরুণকে অনুপ্রাণিত করবে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রতিভা প্রকাশ করতে চায়। কিরণের মতো সফল হওয়ার জন্য শুধু প্রতিভা নয়, ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসাও প্রয়োজন।